চট্টগ্রাম বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘ফণী’ মোকাবেলায় প্রস্তুত নয় পতেঙ্গা

আল-আমিন সিকদার

৩ মে, ২০১৯ | ৩:০৯ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ক্রমশ ধেয়ে আসছে উত্তর-পূর্ব উপকূলের দিকে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে নগরীতে ৭২টি সাইক্লোন সেন্টার, হাসপাতাল ও ফায়ারসার্ভিসের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে স্বেচ্ছাসবকরা বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তবে পতেঙ্গা এলাকার সাইক্লোন সেন্টারগুলোর চিত্র বলছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় প্রস্তুত নয় এ উপকূলীয় এলাকা। কেননা উত্তর-পতেঙ্গা এলাকার একমাত্র সাইক্লোন সেন্টারটি রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। এছাড়া এই এলাকায় নেই কোনো হাসপাতালও। ফলে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই এলাকার বাসিন্দারা। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে আঘাতহানা প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো নগরীর উপকূলীয় এলাকার পতেঙ্গাবাসীরা। সাইক্লোন সেন্টার ও দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি না থাকায় সেই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল এ উপকূলের হাজারো মানুষ। তবে এ উপকূলীয় এলাকাজুড়ে এখন সাইক্লোন সেন্টার থাকলেও তা দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত নয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
নগরীর উত্তর-পতেঙ্গস্থ মুসলিমাবাদ এলাকার মিরাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এই এলাকার একমাত্র সাইক্লোন সেন্টার। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরব্যাপী প্রস্তুতি চললেও সরেজমিন পরিদর্শনে এ সাইক্লোন সেন্টারটিকে দেখা যায় জরাজীর্ণ এবং তালা দেয়া অবস্থায়। এছাড়া সাইক্লোন সেন্টারটিতে উঠার জন্য লোহার সিঁড়িটিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় ভবনটির জানালাতে ব্যবহার হওয়া কাচের গ্লাসগুলোও রয়েছে ভাঙা অবস্থায়। এমনকি এই সেন্টারটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ তালাবদ্ধ থাকায় পূর্বের ঘূর্ণিঝড়গুলোতেও ভবনটিতে প্রবেশ করতে পারেননি তারা। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয় বাদে এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষের জন্য একমাত্র সাইক্লোন সেন্টার এটি। যা অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্যোগে এই এলাকার জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
মুসলিমাবাদ মিরাপাড়ার বাসিন্দা মো. মাসুম নামে এক যুবক পূর্বকোণকে বলেন,‘এর আগে যখন ঘূর্ণিঝড় মহাসেন এসেছিলো তখনও এ ভবনটি ছিলো তালা মারা। আমরা জীবন বাঁচাতে তালা ভেঙে এ সাইক্লোন সেন্টারটিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিপদ সংকেত চলছে তারপরেও বন্ধ রাখা হয়েছে সেন্টারটি। বন্ধ থাকলে কিভাবে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসবো বলুন’।
মো. হোসেন নামে স্থানীয় আরো এক ব্যক্তি পূর্বকোণকে বলেন,‘সাগরের পাশেই একতলা একটি বাড়ি আমার। তাই ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলেই ভয়ে বুক কেপে ওঠে আমার। কেননা পানি ওঠলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। আমাদের এই এলাকার একমাত্র বড় সাইক্লোন সেন্টার হলো এই মিরাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। কিন্তু এটা খোলা থাকেনা। আর আগে যে ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যাল এসেছিলো তখন আমরা তালা ভেঙে এ সেন্টারে ডুকেছিলাম। এবারো দেখছি একই অবস্থা। বিপদ সংকেত জারি হয়েছে কিন্তু সেন্টার খোলা হয়নি। মনে হচ্ছে এবারো তালা ভেঙে প্রবেশ করতে হবে বলে জানান তিনি’।
এদিকে পতেঙ্গা উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিতে মাইকিং করতে দেখা যায় সিটি কর্পোরেশনকে। তবে সাইক্লোন সেন্টার হিসেবে চিহ্নিত এই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। এছাড়া এ উপকূলে প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস হলেও নেই কোনো হাসপাতালের ব্যবস্থা। ফলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হবে পতেঙ্গাবাসী।
এদিকে পতেঙ্গা উপ-কূলীয় এলাকার সাইক্লোন সেন্টারগুলোর প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন স্থানীয় কাউন্সিলর হাজি মো. জয়নাল আবেদীন ও পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়–য়া। কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন পূর্বকোণকে বলেন,‘উত্তর-পতেঙ্গা এলাকার প্রতিটি অলি গলিতে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র আমি পরিদর্শন করে তা প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এছাড়া প্রতিটি সাইক্লোন সেন্টারে আমাদের ৫ জন করে স্বেচ্ছাসেবক দল থাকবে। এসময় পতেঙ্গার একমাত্র সাইক্লোন সেন্টারটির অনিয়মের কথা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন,‘বন্ধ থাকার ঘটনা আগে একবার হয়েছিলো। তবে এবার যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসময় হাসপাতালবিহীন এ উপকূলীয় এলাকাটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্যও করেন তিনি’।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়–য়া বলেন,‘আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে এখন থেকে খোলা রাখার জন্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সকলের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে যাতে তাদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হয়’।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবেলায় পতেঙ্গা এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করবে বলে জানান আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের স্টেশন অফিসার মো. কফিল উদ্দিন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন,‘ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় উদ্ধার টিম ও ফাস্ট এইড টিম প্রস্তুত রেখেছে ফায়ার সার্ভিস। পতেঙ্গায় ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আজ (শুক্রবার) বিকেল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট