চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

ডোমের পদই নেই চমেকে

ইমাম হোসাইন রাজু 

১ মার্চ, ২০২২ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই দশক পার হতে চললেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ফরেনসিক বিভাগে এখনও সৃষ্টি হয়নি মরদেহ কাটার ডোম পদটি। অথচ প্রতিদিনই চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় দশেরও অধিক মরদেহ এসে জমে থাকে একমাত্র এ মর্গে। পদ না থাকায় বিকল্প উপায়ে কদম আলী নামে অস্থায়ী এক কর্মীকে দিয়ে কাজ চালিয়ে এলেও, তারও বিকল্পও নেই কেউই। যার কারণে কোন সময় কদম আলী কাজে যোগ না দিলে অচলাবস্থায় পড়তে হয় মর্গটিকে।
যার বিকল্প হয়নি গত রবিবার। বেতন ভাতা না বাড়ানোয় অভিমান করে দুই দিন লাশ কাটার ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়ায় প্রায় অচলাবস্থায় পড়তে হয় মর্গটিকে। দুই দিনের লাশের স্তূপ পড়ে থেকে গন্ধ বের হলেও সময় মতো ময়না তদন্তের কাজ না হওয়ায় মৃতদের স্বজনরা বিক্ষোভও করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ফরেনসিক বিভাগের খোদ বিভাগীয় প্রধান উপস্থিত থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় দশের অধিক লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু তাও ছিল ধীর গতির। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, কদম আলী দক্ষ হওয়ায় তার লাশগুলোর পোস্টমর্টেম করতে দেরি হয় না। কিন্তু তার অনুপস্থিতির কারণে অন্য লোকদের দিয়ে কাজ করতে গিয়ে তার অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এরমধ্যে কদম আলীই এই মর্গে একজন মাত্র ডোম, তার কোন বিকল্প কেউ নেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বেতন বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে দাবি কদম আলীর।
চমেক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ থাকায় এবং পদ সৃষ্টি না হওয়ায় জনবল নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবুও প্রয়োজন থাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রায় ২৩ জনকে বিভিন্ন বিভাগের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। যাদের ‘সম্মানী’ হিসেবে কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে মাসিক বেতন দিয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কদম আলীসহ কারোরই বেতন বাড়ানো হয়নি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের মরদেহ ময়না তদন্তের কাজ করার জন্যই ব্যবহার হয় একমাত্র এ মর্গটি। যেখানে কলেজের ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহের প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন। যেখানে গড়ে প্রতিদিন দশটিরও বেশি মরদেহের কাজ করা হয়ে থাকে। অথচ একমাত্র এই ফরেনসিক বিভাগের ডোম, প্রতিবেদন প্রস্তুতসহ যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মতো প্রয়োজনীয় জনবলই নেই। যার কারণে অন্য বিভাগের জনবল দিয়ে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এ বিভাগটি। এরমধ্যে সম্প্রতি অফিস কর্মচারী সমিরনকে এবং প্যাথলজি বিভাগ থেকে মিলন নামে আরেক কর্মচারীকে সেখানে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু তাদের কেউই লাশ কাটা সম্পর্কে দক্ষ নয়।
কাজে ফিরেছেন জানিয়ে কদম আলী গতকাল বিকেলে পূর্বকোণকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আমি কাজে আসিনি। তবে সোমবার থেকে আবার কাজে ফিরেছি। এ দিন বিকেল পর্যন্ত পাঁচজনের লাশ কাটা হয়।’
তিন হাজার টাকার বেতনের চাকরি আর কত বছর করব? এমন প্রশ্ন দিয়ে কদম আলী আরও বলেন, ‘প্রায় ২২ বছর ধরে মর্গের লাশ কেটে যাচ্ছি। কিন্তু স্থায়ীও করা হয় না, বেতনও বাড়ানো হয় না। এভাবে কী একজন মানুষের সংসার চলতে পারে? বহুবার এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনও করেছি, কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার পূর্বকোণকে বলেন, ‘কদম আলী অস্থায়ী কর্মচারী। কিন্তু সে কাউকে কিছু না বলেই রবিবার কাজে আসেনি। যদি বলে যেত, তাহলে ওই দিন হইচই হতো না। তবুও আমাদের দুইজন কর্মচারী সেখানে নিযুক্ত করা আছে। তারা ওই দিন থেকেই কাজ করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেই দিনেই মরদেহের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি এসেছিল। যার কারণে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। তবে কোন কার্যক্রম বন্ধ থাকেনি।’
কদম আলীর আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘ফরেনসি বিভাগ থাকলেও দুর্ভাগ্য বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ডোম পদই সৃষ্টি হয়নি। এ নিয়ে অতীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোন সিদ্ধান্তই নেই। তবুও আমরা অস্থায়ীভাবে সামান্য কিছু সম্মানী দিচ্ছি। তাছাড়া কলেজ হচ্ছে ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা’র আওতায়, আর ডোম পদ হচ্ছে ‘স্বাস্থ্য সেবা’ বিভাগের আওতায়। এ কারণেই হয়তো জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার ধারণা। যদিও এখন আরও দুইজনকে সেখানে নিযুক্ত করা হয়েছে, আসা করছি তারা কাজটি শিখে গেলে, সামনে এমন সমস্যায় পড়তে হবে না।’

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট