চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনেছিল: মির্জা আব্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১০:০৬ অপরাহ্ণ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশ আজ অদ্ভূত এক দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে ৪০ টাকা ডিমের হালি, তেলের দাম ১৮০ টাকা, ১২৬০ টাকা গ্যাসের চুলা, ৭০ টাকা চাল, ১২০ টাকা ডাল। সবকিছুর দাম বেড়েছে, শুধু বাড়েনি মানুষের দাম। একদিকে মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে দিশেহারা আর সরকারের নেতা পাতি নেতারা ব্যস্ত লুটপাটে। মফস্বলের ছাত্রলীগ নেতার অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর পলোগ্রাউন্ড স্কুল সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই তাদের নেতাকর্মীরা লুটপাট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিল। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আজকের আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো তফাৎ নেই।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আর আজকের প্রধানমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ভোটচুরি করে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো মায়া দয়া নেই। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, আপনারা আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। ইনশাল্লাহ বিএনপি সেদিন সরকার গঠন করবে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সময় একটি সুন্দর বাংলাদেশ ছিল, গুম-খুন ছিল না, দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হত না। এই প্রধানমন্ত্রীর সময় গুম-খুন হচ্ছে। দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। দেশের মানুষ কথা বলতে পারে না। কথা বললে গুম হয়ে যায়, খুন হয়ে যায়। বিএনপির নেতাকর্মী সবাইকে মামলা দেয়া হয়েছে। এই প্রধানমন্ত্রী থাকলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আর গণতন্ত্র ফিরে না এলে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে না।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকার জন্য সাজা দেয়া হয়েছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই, দুই কোটি টাকা বেগম জিয়ার অ্যাকাউন্টে ছিল যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে রাজনীতি করব না। দুই কোটি টাকা আট কোটি টাকা হয়ে গেছে। একটা টাকাও তসরুফ হয়নি। বিএনপির নেত্রীর অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা, বিএনপির অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন রাজত্ব করতে পারবে না। এ কারণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গুম-খুন।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকারের অনুগত লোক দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটা আরেকটি হুদা কমিশন। নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক। তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। এদের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। শেখ হাসিনার সরকার বা তাদের করা কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।

প্রধান বক্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, এই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ভোট ডাকাত সরকার তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করার জন্য আবারো তথাকথিত নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এই নির্বাচন কমিশন ও অতীতের মতো আওয়ামী নির্বাচন কমিশন হিসেবে কাজ করবে। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া তো দূরের কথা আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের লুটপাট দুর্নীতি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আওয়ামী বাকশালীদের সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে। সরকার দেশকে উন্নত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রচার করলেও এখনো মানুষ না খেয়ে অনাহারে দিন যাপন করছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে এই সরকার। এই মেঘা দুর্নীতির হিসাব একদিন দিতেই হবে, দুর্নীতির সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আজকে বিচার বিভাগ আইন বিভাগ থেকে শুরু করে সরকার প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আওয়ামী সিন্ডিকেটের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে। এই সিন্ডিকেটের অধীনে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা কোন কিছুই নিরাপদ নয়।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।

বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মো. মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, শ্রমিকদলের নুরুল্লাহ বাহার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মহিলাদলের ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী, কৃষকদলের সদস্য সচিব কামাল পাশা নিজামী, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, মৎস্যজীবী দলের হাজী নুরুল হক প্রমুখ।

 

পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট