চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাড়তি মজুত, নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না চালের বাজার

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

সবেমাত্র বোরো ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এ ধান বাজারে আসবে আগামী বৈশাখে। মাঝখানে বাকি আরও দুই মাস। এরিমধ্যে চালের দাম বেড়েই চলেছে। সরকার মিলার ও মজুতকারীদের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আড়তদারদের দাবি, রমজান মাস আসন্ন। এখনই চাল আমদানির অনুমতি না দিলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগ জানান, দু-তিন মাস আগ থেকেই বাজারে এসেছে আমন চাল। সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমও প্রায় শেষ। সবমিলে দেশি ও আমদানি করা চাল সবার গুদামে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তারপরও বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বড় শিল্পগোষ্ঠী, মিলার ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

দেশে সরকারি খাদ্য গুদামে ২০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল মজুত আছে। সরকারি স্বাভাবিক মজুত ধরা হয় ১৪-১৫ লাখ টন। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর ধান মজুত রয়েছে। তারপরও বাড়ছে চালের দাম। ঢাকা খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে খাওয়ার রুচি পরিবর্তন ঘটেছে। মোটা চালের বদলে চিকন চালের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ছে। এতে চিকন চালের দাম বাড়ছে। সেই তুলনায় মোটা চালের দাম বাড়েনি’।চালের বড় পাইকারি মোকাম চাক্তাই ও পাহাড়তলী চাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, চিকন চালের দাম বেশি বেড়েছে। বর্তমানে কাটারি (৫০ কেজি বস্তা) চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৩৪শ টাকা, জিরাশাইল বস্তাপ্রতি তিন হাজার থেকে ৩২শ টাকা, মিনিকেট আতপ ২৬শ থেকে ২৬৫০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ ২৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার তুলনার চিত্রে দেখা যায়, চট্টগ্রামে এক বছরে সরু (মিনিকেট) চালের দাম ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম বাড়েনি।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘আমন চালের দাম বেশি বাড়েনি। কিন্তু চিকন-সরু চালের দাম বেশি বেড়েছে। ১৫ দিন আগেও বস্তাপ্রতি দেড়-দু’শ টাকা বেড়েছে’। তিনি বলেন, ‘আর দেড় মাস পরই শুরু হবে রমজান মাস। তাই দ্রুত চাল আমদানির অনুমতি না দিলে রমজানে চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে’। আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের দাবি, বড় মিলার ও শিল্প গ্রুপ ধান-চাল মজুতের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রতি মৌসুমে বাজার অস্থির করে তুলে এসব মিলার-শিল্প গ্রুপ। পরবর্তীতে বাজার অস্থির করে ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। কৃষকের লাভ লুটেপুটে খাচ্ছেন এসব শিল্প মালিকেরা। সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বাজার দখল করে নিয়েছেন শিল্পপতিরা। আর পকেট কাটা পড়ছে ভোক্তাদের।

নগরীর চালের বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বড় বড় শিল্প গ্রুপ ও মিলাররা প্রচুর পরিমাণে চাল মজুত করেছে। তাদের কারসাজির কারণে চালের দাম প্রতিক্ষণেই বাড়ছে। তাদের বেঁধে দেওয়া দরেই চাল বিক্রি করতে হচ্ছে’।

সরকারের নজরদারি না থাকায় চালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে উল্লেখ করে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারিভাবে প্রচুর চাল মজুত করে রাখা হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং না থাকায় চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে মজুতদারি গড়ে ওঠেছে। এজন্য সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বড় শিল্পগোষ্ঠী ও মিলারদের গুদামে গুদামে মনিটরিং করে মজুতদারি নিয়ন্ত্রণ করা হলে বাজারও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে’।

কৃষক পর্যায়ে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার অস্থির করে তুলেছেন ব্যবসায়ী, মিলার ও বড় শিল্পগোষ্ঠী।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট