চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চকবাজার-কাজীর দেউড়ির উল্টো চিত্র কর্ণফুলীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৯ জানুয়ারি, ২০২২ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

বড় ধরনের প্রচারণা চালিয়ে গত ১ ডিসেম্বর থেকে নগরীর তিনটি কাঁচাবাজার পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে ঘোষণার প্রায় দুই মাস পার হতে চললেও পুরোপুরি পলিথিনমুক্ত করা যায়নি এসব কাঁচাবাজার। চকবাজার এবং কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে পলিথিনের ব্যবহার কমলেও দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে দুই নম্বর গেটের কর্ণফুলী বাজারে।

গতকাল সকালে তিনটি কাঁচাবাজার সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। ছুটির দিন থাকায় এদিন সকালে তিনটি কাঁচাবাজারেই বিপুল ক্রেতার সমাগম ছিলো। তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে পলিথিনের ব্যবহার ঠেকাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বাজার কমিটির সদস্যদেরও কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

পলিথিনের প্রবেশ ঠেকাতে বাজারের মুখে চসিকের গার্ড থাকার কথা। সকাল ৯টার দিকে দুই নম্বর গেটের কর্ণফুলী বাজারে গিয়ে চারটি প্রবেশ পথের একটিতেও গার্ড দেখা যায়নি। বাজারের ভেতর পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও ১ ও ২ নম্বর গলির প্রতিটি মুদি দোকানে পলিথিনে ভরে পণ্য সরবরাহ করতে দেখা গেছে। ৪ নম্বর গলির একটি দোকানে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছিলো পলিথিন। কর্ণফুলী বাজারের ১ নম্বর গলি দিয়ে ভেতরে ঢুকলে মাংসের দোকান। সেখানে গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি শেষে পলিথিনে ভরে ক্রেতাদের সরবরাহ করা হচ্ছিলো। মাছ, সবজি, পোল্ট্রি এবং শুঁটকি বিক্রিতেও দেদারসে পলিথিন ব্যবহারের চিত্র দেখা গেছে শুক্রবার। পলিথিনে ভরে বাজার নিয়ে বের হন ক্রেতারা।

তবে কর্ণফুলী বাজারের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে- চকবাজারে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই কাঁচাবাজারের প্রবেশ পথে জহিরুল ইসলাম নামে চসিকের একজন গার্ডকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কাঁচাবাজারের মাছ, মাংস, সবজিসহ প্রতিটি দোকানে পলিথিনের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। কাপড়ের ব্যাগে ভরেই বাজার নিয়ে বের হয়েছেন ক্রেতারা।

কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের প্রায় একই চিত্র ছিলো নগরীর কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে। তবে সকাল ১০টার দিকে এই কাঁচাবাজারের মাছের দোকানে কয়েকজন দোকানি কাপড়ের ব্যাগের পরিবর্তে পলিথিনে ভরে বিক্রি করা মাছ সরবরাহ করেছেন। কাঁচাবাজারের প্রবেশ মুখে বাজার কমিটির দুইজন স্বেচ্ছাসেবককে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান- পলিথিনের ব্যপক ব্যবহারের কারণে চসিকের নালা-নর্দামাগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফলাইন কর্ণফুলীতে অতিরিক্ত পলিথিন পড়ায় ড্রেজিং করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া পলিথিন পুড়িয়ে বায়ু দূষণ করা হচ্ছে। মাটিতে পুঁতে ঊর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিবেশের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে।

এসব বিষয় মাথায় রেখে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে নগরীর কাঁচাবাজারগুলো পলিথিনমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চসিকের পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায়। কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন এ নিয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বাজার কমিটি, অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রথমে তিনটি বাজার পলিথিনমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে চকবাজার, কাজীর দেউড়ি এবং দুই নম্বর গেটের কর্ণফুলী কাঁচাবাজারকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করে চসিক। এই উদ্যোগ সফল করতে ৩০ হাজার কাপড়ের ব্যাগ উপহার, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, চসিকের দুইজন সিকিউরিটি গার্ডের নেতৃত্বে বাজারের মুখে মনিটরিং এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পলিথিন ব্যবহারকারীদের জরিমানা করা হয়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন-  উদ্যোগ নেওয়ার পর প্রথমদিকে তিনটি কাঁচাবাজারেই পলিথিনের ব্যবহার কমে আসে। এখন তদারকি কমে যাওয়ায় ফের পলিথিনের ব্যবহার বেড়েছে। এরমধ্যেই গত বুধবার বাজার কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব কাঁচাবাজার পলিথিনমুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান পরিচালনাসহ তদারকি না বাড়ালে এই নির্দেশনা সফল হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাঁচাবাজারে দেদারসে পলিথিন ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী পূর্বকোণকে বলেন, শুধু তিনটি নয়-সব বাজারকেই পলিথিনমুক্ত করতে যাচ্ছে চসিক। এজন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তাই আপাতত অভিযান বন্ধ রয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর সব বাজার পলিথিনমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট