চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

নতুন আইসিডির জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর

১ জানুয়ারি, ২০২২ | ১:১০ অপরাহ্ণ

সারোয়ার আহমদ 

 

শতভাগ রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং করা দেশের ১৯টি বেসরকারি অফডকের সাথে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন আরো তিনটি অফডক। যার মধ্যে একটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে গেছে। বাকি দুটি আবেদনের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে বেসরকারি আইসিডির জন্য বিনিয়োগের সংস্থান করা, অবকাঠামো নির্মাণ এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহের সময় মিলিয়ে নতুন বছরে নতুন অফডক চালুর সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ নতুন বেসরকারি অফডক পেতে আরো অন্তত আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে ব্যবসায়ীদের। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস : রপ্তানি ও বন্ড) মো. মশিয়ার রহমান মণ্ডল পূর্বকোণকে বলেন, ইতোমধ্যে বে লিংকস কনটেইনার লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি অফডককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরো দুটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বেসরকারি অফডক নির্মাণ ও পরিচালনা করা একটি মহাযজ্ঞের ব্যাপার। এবিষয়ে এনবিআর ইতিমধ্যে একটি নীতিমালাও চূড়ান্ত করেছে। নতুন অফডক চালু করতে ওই নীতিমালার সব নিয়ম কানুন মেনেই অফডক তৈরি করতে হবে। এদিকে গত ২৪ অক্টোবর অনুমোদন পাওয়া অফডক সম্পর্কে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ১৫ একর জমির উপর গড়ে তোলা হচ্ছে এই অফডক; যেখানে মোট ৩ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম বে লিংকস কনটেইনার লিমিটেড। এই অফডক চালু হলে এতে সাড়ে ৪ হাজার একক কনটেইনার উঠানামা-রাখা সম্ভব হবে। ঢাকার একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান এই অফডক নির্মাণ করছে।
অন্যদিকে, হালিশহরে রেলওয়ের ২১ একর জমির পর নতুন আরেকটি কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক। এতে বিনিয়োগ করা হবে ৩০০ কোটি টাকা; চুক্তির পর ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে সাইফ পাওয়ারটেক সময় পাবে ২ বছর। আর এই ডিপোতে বছরে এক লাখ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার আশা কর্তৃপক্ষের।
ঢাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিষ্ঠান কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশের সাথে সাইফ পাওয়ারটেকের এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় রেলওয়ের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের পাশে রেলওয়ের মালিকানাধীন ২১ দশমিক ২৯ একর জায়গায় নির্মিত হবে এই অফডক।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সাইফ পাওয়ারটেক আইসিডি পরিচালনা, ফি আদায়সহ সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ২০ বছর পর সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় আইসিডি সিসিবিএলের কাছে হস্তাস্তর করবে সাইফ পাওয়ারটেক। পরবর্তীতে আবারো টেন্ডারের মাধ্যমে পরিচালনাকারী সংস্থা নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া সাইনিং মানি হিসেবে সিসিবিএলকে ৭ কোটি টাকা দেবে সাইফ পাওয়ারটেক। আইসিডি পরিচালনা করে যে লাভ হবে তার ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ সিসিবিএলকে দেবে এই প্রতিষ্ঠান।
এ প্রসঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এনসিটি, সিসিটি এবং ঢাকা আইসিডি পরিচালনার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি আমরা এই আইসিডিতে সবচে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো। আর এই কারণেই বছরে প্রায় ১ লাখেরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এতে বছরে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০০ লোকের।
প্রসঙ্গত, রেলপথে কনটেইনার পরিবহন বাড়াতে ২০১৬ সালের ১৭ মে ‘কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামে আইসিডি নির্মাণের জন্য এর অনুক‚লে ২১ দশমিক ২৯ একর জায়গা বরাদ্দ দেয় রেলওয়ে। ওই জায়গায় আইসিডি নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের ৩ ফেব্রæয়ারি ‘কনস্ট্রাকশন অব আইসিডি কাম অফডক থ্রো ডিবিএফওএমটি’ মুডে দরপত্র আহবান হয়। এতে সাইফ পাওয়ারটেক নির্বাচিত হয়।
অন্যদিকে নগরীর হালিশহরে সাড়ে ২২ একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে আরো একটি বেসরকারি অফডক। যেটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম ১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. আফসারুল আমিন ও তার পারিবারিক সদস্যদের নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান। এটিও সরকারি অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। তবে ২০২২ সালের মধ্যে চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এর কাজ চলছে বলে জানান ওই অফডকের আরেক কর্ণধার মো. আরশাদ আমিন।
বর্তমানে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজ থেকে নামিয়ে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে নিয়ে খালাসের সুযোগ আছে। এর বাইরে সব ধরনের রপ্তানি পণ্য বেসরকারি কনটেইনার ডিপো হয়েই বন্দর জেটিতে যায়; সেখান থেকেই জাহাজীকরণ করা হচ্ছে।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট