চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভূমি নামজারি শতভাগ অনলাইনে যাচ্ছে নতুন বছরের প্রথম দিনেই

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

 

বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডী মুন্সিপাড়া এলাকার আবদুল মোনাফ নামজারির আবেদন করতে যান বোয়ালখালী ভূমি অফিসে। তার ফাইলপত্র গ্রহণ করেননি কর্মচারীরা। এ নিয়ে খটকায় পড়েন তিনি। তিনি ভাবলেন, টাকা ছাড়া তার ফাইল নিচ্ছেন না কর্মচারীরা। কারণ, কথায় আছে ভূমি অফিসের টেবিলেও টাকা খায়। শেষমেষ ফাইল নিয়ে সরাসরি গেছেন ভূমি কর্মকর্তার কাছে। পথ বাতলে দিলেন তিনি। নতুন বছর থেকে শতভাগ অনলাইনে যাচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা। অনলাইন ছাড়া ফাইল আর নিচ্ছেন না।

বোয়ালখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা সুলতানা পূর্বকোণকে বলেন, ‘নতুন বছর থেকে শতভাগ অনলাইনে চলে যাচ্ছে নামজারিসহ ভূমি ব্যবস্থাপনা। অনলাইন ছাড়া আর আবেদন নিচ্ছেন না। তাই বছরের শেষদিন থেকে কাগজের ফাইলের নথি গ্রহণ করছেন না।’ তিনি বলেন, যেকোন স্থান থেকে অনলাইনে আবেদন করা যাবে। আবেদনের পর মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে নামজারি ফাইলের আপডেট জানতে পারবেন সেবা গ্রহীতা। তবে ২৪ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফাইল পেতে একটু সমস্যা হতে পারে। কারণ এখনো পুরোনো নথি অনলাইনভুক্ত করা হয়নি। ধীরে ধীরে পুরোটাই অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’

ভূমি অফিসে দেখা গেল, এনালগ (কাগজের ফাইল) ও ডিজিটাল (অনলাইন ফাইল) দুই ধরনের ফাইল চালাচালি হচ্ছে। তবে, সেবাগ্রহীতাদের কাগজের ফাইলে কাজ চলছে। সমানতালে ই-নথির কাজও চলছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে পুরোটাই অনলাইনে চলে যাচ্ছে। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, আগামী মার্চের মধ্যে চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে। মানুষের হয়রানি, প্রতারণা বা দুুর্নীতি যা-ই বলা হোক না কেন সমূলে বন্ধ করা হবে। যতই বাধা আসুক না কেন আমি তা বন্ধ করে ফেলব।’

ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, কাগজের ফাইল চালাচালি হলেও সব ফাইল ই-নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। দুটির জন্য আলাদা দুটি নম্বর দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে নতুন বছর থেকে পুরোপুরিভাবে ডিজিটালাইজেশন হয়ে যাওয়ার পর সব ধরনের ফাইল ই-নথিভুক্ত হয়ে যাবে। ফাইল নোট থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ হবে অনলাইনে। তবে কাগজের ফাইলও সংরক্ষণ করা হবে।

নগরীর একাধিক ভূমি অফিসেও একই দৃশ্য দেখা গেল। কাগজের ফাইল ও ই-নথি চলছে একসঙ্গে। কর্মকর্তারা জানালেন, এখন থেকে সব ধরনের ফাইল ই-নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পুরোটায় ই-নথিভুক্ত হয়ে যাবে। নতুন ফাইল ছাড়াও পুরোনো ফাইলও ই-নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। কাগজের ফাইল হারিয়ে গেলেও অনলাইনের নম্বর দিয়ে ফাইল খুঁজে পাওয়া যাবে।

ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি, হয়রানি, অনিয়ম-দুর্নীতিরোধ ও দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন করেছে। জমি বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, জমা-ভাগসহ নানা কার্যক্রম ধীরে ধীরে অনলাইনে ঢুকে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন’ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ১৭ ধরনের  সেবা পাবে।

জেলা প্রশাসন, উপজেলা ও নগরীর ভূমি কর্মকর্তারা জানান, ‘এপসের’ মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনার সব ধরনের সেবা ঘরে বসে করতে পারবেন সেবা গ্রহীতারা। এছাড়াও ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কার্যালয়ের ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নামজারিসহ ভূমি-সংক্রান্ত সেবা নিতে পারবেন।

ভূমি অফিসে ‘এপসে’ দেখা যায়, নামজারি বা ভূমিসেবা সংক্রান্ত নানা ধরনের ধাপ রয়েছে। সেবাগ্রহীতা প্রয়োজনীয় ধাপে গিয়ে নিজের কাজ নিজেই করার সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযোজন করতে হবে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় জানায়, ভূমি সংক্রান্ত সব ধরনের ফাইল এখন ই-নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। নামজারি, বেচাকেনা, খাজনা আদায়, জমা-ভাগ ছাড়াও খাস বা পরিত্যক্ত জমি-পুকুর ইজারা গ্রহণ, হাটবাজার ইজারা, ওয়ারিশানের মাধ্যমে জমি হস্তান্তর, জমি বন্ধকসহ ১৭ ধরনের সেবা মিলবে এক এপসে। ভূমি মালিক ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাধ্যমে অতি সহজেই এসব কাজ নিষ্পন্ন করতে পারবেন। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে ওয়ানস্টপ সেবা নিশ্চিত করেছে সরকার। হয়রানি, দুর্ভোগ, দুর্নীতির শিকার হতে হবে না। নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য গত জুন মাসে সারাদেশে এই সেবা চালু করেছে সরকার।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট