চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাঠ সংকটে বিবর্ণ ক্রীড়াঙ্গন

হুমায়ুন কবির কিরণ

৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

হুমায়ুন কবির কিরণ

 

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) বছরে আয়োজন করে প্রায় ৩৭ ইভেন্ট। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে রাজধানী ঢাকার পর এই চট্টগ্রাম একমাত্র জেলা যেখানে নিয়মিত বিভিন্ন ইভেন্ট মাঠে গড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্তরে আয়োজন হচ্ছে ফুটবল-ক্রিকেটসহ বিবিধ ইভেন্ট। অতীতে বিভিন্ন জাতীয় দলে চট্টগ্রামের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সবে সময়ের বিবর্তনে আগের সে জৌলুস এখন আর নেই। তবে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে সচেষ্ট সিজেকেএস।
সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনও স্বপ্ন দেখেন সেটা। সে লক্ষ্যে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আয়োজন করে যাচ্ছেন বিভিন্ন ইভেন্ট। এতে সাফল্যের প্রত্যাশা ছুঁতে না পারলেও তিনি আশাবাদী আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের ক্রীড়ার দৈন্যদশা। এ জন্য সবার আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)’কে এগিয়ে আসতে হবে। স্টেডিয়াম না হোক, খেলার জন্য বিশেষায়িত মাঠের ব্যবস্থা করতে পারলেই সাফল্য আসবে। আর তাই তিনি ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির জন্য পৃথক মাঠের উপর গুরুত্বরোপ করলেন। সাথে জানালেন, বিসিবির মাধ্যমে খেলার মত খোলা জায়গা কেনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। এই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখলে ভবিষ্যতে সেখানে স্টেডিয়ামও গড়ে তোলা হবে।
চট্টগ্রামে মাঠ সংকট প্রকট। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিকল্পনায় শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশকে মাথায় রেখে পুরো নগরের ১০ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রাখার বিধান রাখা হয়েছিল। কার্যত সেই মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। সিটি কর্পোরেশন বছর কয়েক আগে ওয়ার্ড ভিত্তিক মাঠের ব্যবস্থা করার কথা বললেও সেটাও রয়ে গেছে কাগজে কলমেই। নগরীতে বেশ ক’টি স্কুলে খেলার মাঠ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেগুলোতে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই কিংবা ব্যবহার উপযোগী নয়। এর অন্যতম উদাহরণ নগরীর নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠটি। দীর্ঘদিন ধরেই এই স্কুল মাঠটি প্রায় অ-ব্যবহৃত পড়ে আছে।
এম এ আজিজ স্টেডিয়াম অধিক ইভেন্ট আয়োজনের চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সহ-সভাপতি, সাবেক ফুটবলার মো. হাফিজুর রহমান মনে করেন, চট্টগ্রাম থেকে অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলেছে। কিন্তু এখন আর আগের মতো খেলোয়াড় উঠে আসছে না। পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকায় ছেলেরা খেলতে পারছে না। উপজেলাগুলোতেও মাঠে খেলার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে নজর দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়শেনের সদ্য নির্বাচিত সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর মনে করেন, দিন দিন খেলার মাঠের সংখ্যা কমছে, তৈরি হচ্ছে না নতুন মাঠ কিংবা ক্রীড়া অনুশীলনের সুবিধা। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যুবক-যুবতীরা খেলাধুলার পরিবর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিক উৎসাহী, ক্রীড়া শিক্ষাকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারা, মানসম্মত ক্রীড়া সংগঠকের অভাব, আধুনিক ক্রীড়া বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সাথে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে না পারাসহ নানাবিধ কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি।
সাবেক ফুটবলার ও সিজেকেএস কাউন্সিলর মসিউল আলম স্বপন যোগ করলেন, আগে প্রচুর মাঠ ছিল, খেলার জন্য ছোট-বড় জায়গার অভাব ছিল না। আর এখন অপরিকল্পিত নগরায়নের অভিশাপে পাড়া-মহল্লায় মাঠতো দূরের কথা স্বাভাবিক হাঁটার পরিবেশও নেই। নগরীতে যে ক’টি মাঠ আছে, হয় তার পরিকল্পিত ব্যবহার নেই কিংবা মেলাসহ নানাবিধ আয়োজনে খেলাই সেখানে নির্বাসিত।
সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর, মো. হাফিজুর রহমান ও মসিউল আলম স্বপনসহ চট্টগ্রামের অধিকাংশ ক্রীড়া সংগঠক খেলাধুলার উন্নয়নে সবার আগে মাঠ সংকট অবসানের উদ্যোগ নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। মাঠ সংকট সমাধানে রাষ্ট্র এবং প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের যথাযথ সমন্বয় ছাড়া এটি কোনোভাবে সম্ভব নয়। মাঠ সংখ্যা বাড়াতেও রাষ্ট্রযন্ত্র তথা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে তদারকি বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষদেরকে আধুনিক বাসযোগ্য ভবিষ্যত রেখে যেতে মাঠ এবং ক্রীড়াঙ্গনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে এবং ধারণ করতে হবে। অন্যথায় মাঠে খেলার বদলে চলবে মেলা, যাত্রা কিংবা অন্য কিছু।
ক্রীড়াঙ্গনের আক্ষেপ, স্বাধীনতার ৫১তম বর্ষে পা রাখার পরও বিশেষায়িত স্টেডিয়াম নেই চট্টগ্রামে। বিভাগীয় স্টেডিয়াম থাকলেও সেটি ব্যবহৃত হয় আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্রিকেটের জন্য। চট্টগ্রাম হোক কিংবা দেশের যে কোন প্রান্ত, খেলাধুলার প্রকৃত উন্নয়নে ইভেন্টভিত্তিক মাঠ এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট