চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রয়োজনের তুলনায় কম খান চট্টগ্রামের ১৫. ১৭ শতাংশ মানুষ

অনলাইন ডেস্ক

৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ | ৯:০৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ও ঢাকার ৩ শতাংশের বেশি মানুষ এখনো অনাহারে থাকে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় প্রায় ২২ শতাংশ পরিবার চিন্তায় থাকে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত খাবার না থাকার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ পরিবার চিন্তিত ছিল। এ হার ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যতীত অন্য শহরে ছিল ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ। যেখানে সব মহানগরে এ হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ পরিবার পছন্দের খাবার খেতে পারেনি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের শহরে এ হার ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সব মহানগরে এ হার ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ খানার অপছন্দের খাবার খেতে হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের মহানগরে এ হার ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সব মহানগরে যা ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ খানা প্রয়োজনের তুলনায় কম খেয়েছে। যেখানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের মহানগরে এ হার ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। সব মহানগরে যার গড় হার ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণে জরিপটি ২০১৯ সালের ৮ থেকে ২৬ ডিসেম্বর সময়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ জরিপে ঢাকা-চট্টগ্রাম নগর এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যতীত অন্য নগরকে দুটি প্রতিবেদনাধীন এলাকা ধরে নিম্ন আয়ের অংশকে প্রাধিকার দিয়ে তিনটি স্তর করা হয়ছে। এসব স্তরের মধ্যে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন আয়ের ভিত্তিতে নির্বাচিত মোট ৮৬টি প্রাথমিক নমুনা এলাকা (পিএসইউ) থেকে ২ হাজার ১৫০টি নগরাঞ্চলের খানা হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোন খাবার ছিল না বা খাবার কেনার টাকা ছিল না এমন খানার পরিমাণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। দেশের সব মহানগরে এ হার ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। খাবার না থাকায় রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ খানা। সব মহানগরে এ হার ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। জরিপকালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মহানগরের পুরো দিন অনাহারে ছিল ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ খানা। অন্যদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের মহানগরে এ হার মাত্র ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সারা দেশের মহানগরের ২ দশমিক ৮০ শতাংশ পরিবার অনাহারে ছিল।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৯৩ দশমিক ১২ শতাংশ খানা সামান্য ক্ষুধার্ত ও ক্ষুধার্ত নয়। যেখানে সারা দেশের মহানগরে এ হার ৯৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ খানা মোটামুটি ক্ষুধার্ত থাকলেও সারা দেশের মহানগরে এ হার ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের তীব্র ক্ষুধার্ত থাকে শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ খানা, যা অন্যান্য মহানগরে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। মোটামুটি অথবা তীব্র ক্ষুধার্ত থাকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ পরিবার। সারা দেশের মহানগরে এ হার ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

খাদ্য বাবদ ব্যয়ের বিষয়টিও বিবিএসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতি খানায় বাড়িতে তৈরি খাবারের জন্য ব্যয় হয় ১ হাজার ৮৯১ টাকা। যেখানে সারা দেশের মহানগরে এ ব্যয় ১ হাজার ৮৯৩ টাকা। বাড়ির বাইরের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতিটি খানার জন্য ব্যয় ১৪৩ টাকা। সারা দেশের মহানগরে এ ব্যয় ১৩৪ টাকা। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতিটি খানায় খাদ্য বাবদ ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৩৪ টাকা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্যান্য মহানগরে এ ব্যয় ২ হাজার ১ টাকা। দেশের সব মহানগরে গড়ে খাদ্য বাবদ ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ২৭ টাকা।

খাদ্যনিরাপত্তা ও ভোগের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের নমুনা এলাকার খানায় এ বিষয়ে উদ্বেগ খুব বেশি। জরিপকালে প্রায় ২২ শতাংশ খানা আগের মাসে তাদের পর্যাপ্ত খাবার না থাকার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। যদিও খুব কম সংখ্যক খানা উচ্চখাদ্য নিরাপত্তাহীন হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়েছে। ৮ শতাংশ খানা লঘু খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। তবে নারীদের খাদ্য ভোগের অবস্থা সন্তোষজনকের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নমুনা এলাকার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ২৪ শতাংশ খানার ক্ষেত্রে এ প্রবণতা পাওয়া গেছে।

খাদ্য সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের খানার মধ্যে একটি সাধারণ অনুসৃত কৌশল হলো ভোগকৃত খাবারের গুণগতমান এবং পরিমাণ হ্রাস করা। পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর যা সরাসরি প্রভাব ফেলে থাকে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত খাদ্য ভোগ স্কোর অনুযায়ী গুরুতরভাবে নিম্ন খাদ্য ভোগের পর্যায়ে পড়ে অর্থাৎ স্কোর ৪২-এর নিচে রয়েছে এমন খানা এক-তৃতীয়াংশের বেশি (৩৪ শতাংশ)। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বিবেচনায়, স্বল্প-আয়ের খানাগুলো শুধু মাছ বাদে অন্য সব খাদ্যসামগ্রী সুপারিশকৃত ন্যূনতম ভেগের চেয়ে কম পরিমাণে ভোগ করে থাকে। সকল সিটি করপোরেশন এলাকার খানায় খাদ্য তালিকার মধ্যে ভাতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, মাথাপিছু প্রতিদিন ২৭৫ গ্রাম।

অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রামের তুলনায় অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার সামান্য পার্থক্য ছাড়া খানাগুলো মোট বাজেটের অর্ধেকই খাদ্যসামগ্রীর পেছনে ব্যয় করে থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার খানাগুলো পোলট্রির মতো প্রাণিজাত খাবার বেশি পরিমাণে ভোগ করে থাকে। যার কারণে তাদের মাথাপিছু মাসিক খাদ্যভোগ ব্যয় তুলনামূলক বেশি। সংত্র: বণিক বার্তা

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট