চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জলাবদ্ধতা যেনো ললাট লিখন

ইমরান বিন ছবুর

৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

বছরের পর বছর পার হলেও চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয়নি। নগরীর অন্যতম ও প্রধান এই সমস্যা সমাধানে সেবা সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প গ্রহণ করলেও তার সুফল পায়নি নগরবাসী। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে চট্টগ্রাম পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসেও বর্ষা মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ২০১৭ সালে জুলাই মাসে নেয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৬০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম শহরের ড্রেনেজ সমস্যা দূরীকরণে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছিল। কিন্তু গত দুই দশকেও এর সুপারিশগুলো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি নগরও দ্রæত স¤প্রসারিত হচ্ছে। ফলে বন্দরনগরীর নিষ্কাশন ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিপর্যয়। বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পাশাপাশি ভারী কিংবা মাঝারি বৃষ্টিতেই নগরীর অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে সিডিএ’র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে জলাবদ্ধতা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পেত বলে মনে করছেন নগরবিদরা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। শুধুমাত্র জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান থাকলেও নগরবাসী এর সুফল পাচ্ছে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ১৮৩৬ সাল থেকে চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানে সেসময় সার্ভে করা হয়েছিল। তবে গত ৩৫ বছর যাবত এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে এবং এরপর থেকে তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর আগ পর্যন্ত কিছু নির্দিষ্ট এলাকার খুব অল্প জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। অন্যদিকে, পুরো একটি এলাকা পানির নিচে ডুবে যাওয়া এটা শুরু হয়েছে গত ২০ বছর যাবত। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে ঘিরে অনেকগুলো স্ট্যাডি করা হয়েছে। এসব স্ট্যাডি আমলে নিয়ে ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যান করা হয়। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে পারেনি। এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য তেমন উদ্যোগও দেখা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবেশ তো ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। যার কারণে আগের মাস্টারপ্ল্যান এখন বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। এরফলে নতুন মাস্টারপ্ল্যান করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এখন সিডিএ নতুন করে যে মাস্টার প্ল্যান করার কথা সেটাও হতাশাব্যঞ্জক অবস্থায় আছে। সেটাও যদি গতিবেগ পেত, তাহলে নতুন মাস্টার প্ল্যানেও আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা এড্রেস করতে পারতাম। এরফলে কোনো মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই ভিন্ন ভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার কারণে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন গড়ে উঠছে।
সিডিএ’র বোড সদস্য ও স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, পরিকল্পিত নগরী করার জন্য সিডিএ’র তো একটি মাস্টারপ্ল্যান ছিল। সেই মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে। এই মাস্টারপ্ল্যানের ১০ ভাগও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। যে কারণে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের খাল ও ড্রেন বেদখল হয়ে গেছে। এগুলো সিডিএ’র দখলে আনতে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। খাল ও ড্রেনের জায়গা দখল করে ছোটবড় স্থাপনা গড়ে তুলেছে দখলদাররা। এদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার। অন্যদিকে, প্রভাবশালীদের চাপ থাকে। তাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে অনেক সময় আইন প্রয়োগ করা যায় না।
জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেড লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, এ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৬০ শতাংশ। ইতোমধ্যে আমাদের ৫৪ কিলোমিটার ড্রেনের কাজও শেষ হয়েছে। এর বাইরেও নতুন করে আমাদের কিছু ড্রেনের কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, ৩৬টি খালের মধ্যে তিনটি খালের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি খালে কাজ চলমান রয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আমাদের কিছু কাজ আটকে রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এজন্য আমাদের কাজের অগ্রগতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে আমাদের প্রকল্পের মেয়াদও বৃদ্ধি পেতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট