চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সব ছেড়ে দেয়ার পর হলো সৌন্দর্যবর্ধনের নীতিমালা

ইফতেখারুল ইসলাম

৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:০১ অপরাহ্ণ

নগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং স্থান সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দিয়ে দেয়ার পর এ সংক্রান্ত নীতিমালা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নগরবিদদের অভিমত, দেরিতে হলেও নীতিমালা করেছে চসিক। সৌন্দর্যবর্ধনের বর্তমান চুক্তিগুলো নীতিমালার আলোকে রিভিউ করার উদ্যোগ নিতে পারে চসিক। তাতে জনস্বার্থ রক্ষা হবে।
নগরী সৌন্দর্যবর্ধনে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যন্ত ৪২টি চুক্তি করেছে চসিক। এছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২৮ জানুয়ারি ১০টি জায়গা সেলামি ও মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবহারের অনুমতি ও বরাদ্দ দেয়। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ফুটপাত বরাদ্দ দিয়েছে সংস্থাটি। অভিযোগ আছে, সৌন্দর্যবর্ধন চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে এস্টেট (ভূ-সম্পত্তি) শাখা হতে কোনো নথি খোলা হয়নি। নগর পরিকল্পনা শাখার মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদিত হলেও তাদেরকে এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করার কোনো রেজুলেশনও সংরক্ষিত নাই সংস্থাটির কাছে। আবার জায়গা বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ন্যায্যমূল্যে না দেয়ার অভিযোগ আছে। নিয়ম-নীতি না মেনে এসব কার্যাদেশ দেয়ার পর ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা, ২০২১’ শিরোনামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে চসিক।
এদিকে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সড়কের ফুটপাত, মোড় ও আইল্যান্ড সৌন্দর্র্যবর্ধনের কার্যাদেশের বৈধতা নিয়ে চসিকের সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের আমলে তদন্ত করা হয়েছিল। চসিকের আইন বিভাগ বিষয়টি তদন্ত করে অসঙ্গতি পায়। এই অসঙ্গতি লাঘবে পাঁচটি সুপারিশও করে। যা পরবর্তীতে আর কার্যকর হয়নি।
কী আছে নীতিমালায় : প্রণীত নীতিমালায় ২১টি অনুচ্ছেদ আছে। এসব অনুচ্ছেদের আলোকে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্দেশ্য, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রসমূহ, প্রকল্প বরাদ্দের পদ্ধতি, সৌন্দর্যবর্ধন সংক্রান্ত কমিটি, প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া, প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ, প্রকল্প যাচাই বাছাই, অনুমোদন, প্রকল্পের মেয়াদ, সালামি-ভাড়া ও ইজারা মূল্য পরিষদ, চুক্তির খসড়া অনুমোদন, ইজারা চুক্তি নবায়ন, ইজারা চুক্তি বাতিল, মেয়াদ পূর্তির পূর্বে চুক্তি বাতিল, প্রযোজ্য আইন ও নীতিমালা অনুসরণ, ইজারাকৃত ভূমির স্বার্থ হস্তান্তর বা সাব-লিজ প্রদান, সৌন্দর্যবর্ধন সংক্রান্ত বিষয়ে নগর পরিকল্পনা শাখার দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়েছে।
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, নীতিমালা না থাকায় যেমন খুশি তেমন করা হয়েছে। তাই আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। তা সাধারণ সভায় অনুমোদনও হয়েছে। তার আমলে সৌন্দর্যবর্ধনের কোন কার্যাদেশ দেয়া হয়নি উল্লেখ করে বলেন, অতীতে যেসব চুক্তিতে সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ রক্ষা হয়নি তা তিনি আর নবায়ন করবেন না। অনেক চুক্তির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। তাই এসব চুক্তি বাতিলের বিষয়টি আর চিন্তা করছেন না। বাতিল করতে গেলেও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বিশিষ্ট নগরবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার পূর্বকোণকে বলেন, দেরিতে হলেও সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে একটি নীতিমালা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন করতে পেরেছে। এজন্য আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। তবে শুধুমাত্র নীতিমালা করে বসে থাকলে হবে না। এখন এর প্রয়োগ করতে হবে। নীতিমালা করার আগে যেসব এলাকা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সিটি কর্পোরেশন চুক্তি করেছে। এখন সময় এসেছে নীতিমালার আলোকে সেগুলো রিভিউ করে দেখা। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যারা সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ নিয়েছেন তারা দোকান কিংবা বিজ্ঞাপন বিক্রি করেই তাদের দায়িত্ব সেরেছে। বাকি কাজ তারা করেনি। এখন সিটি কর্পোরেশনের সুযোগ আছে, নীতিমালার আলোকে চুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী উদ্যোগ নেয়ার। তাতে জনস্বার্থ রক্ষা হবে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট