চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

জ্বালানি তেল খালাসে ১০ কর্মকর্তার সিন্ডিকেট!

ইমাম হোসাইন রাজু

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:০০ অপরাহ্ণ

খালাসের নামে জ্বালানি তেল চোরাই বাজারে ভাগিয়ে নেয়ার পেছনে তিন প্রতিষ্ঠানের দশজনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকার বিষয়টি নজরে নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রায়ত্ত তিন তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে দুদকের অনুসন্ধানে। অভিযোগ, সিন্ডিকেটটির একাধিক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে একই পদে কর্মরত থাকায় বছর বছর তেলের কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে সরকারকে। যারা তেল খালাসের নামে অপারেশনাল লস দেখিয়ে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে বহু দিন ধরেই।
বিপিসি ও দুদক সূত্র বলছে, সরকারি অর্থে তেল আমদানি করলেও তেলের খালাস, অপারেশন, হিসাব, সরবরাহ, বিক্রয়, বিক্রিত অর্থের পরিমাণ সবই দেখভাল করে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তারাই সিন্ডিকেট গড়ে তুলে তেল পরিমাপের নামে লস দেখিয়ে পাচার করে থাকেন। যারা টার্মিনাল থেকে প্রতি মাসে মাসে ও ডিপো থেকে এবং নিজের বা আত্মীয়ের নামে গড়ে তোলা পেট্রোল পাম্পগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। সিন্ডিকেটের প্রতি সদস্যের পদ ভেদে অর্থের অংশটি বুঝে নেয়। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে সরকার একদিকে হারায় নগদ অর্থ, দিনদিন বাড়ে লোনের হার আর টাকা চলে যায় সিন্ডেকেট ও শেয়ার হোল্ডারদের পকেটে। এ সুযোগে সিন্ডিকেটের মনগড়া সিস্টেমেই চলে তেলের রাজ্য। তবে এসব ব্যক্তিদের ইতোমধ্যে নজরে নিয়ে অনুসন্ধান কাজ করে যাচ্ছে দুদক।
দুদকের সূত্র মতে, যমুনা অয়েলের উর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তার নাম রয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে। এরমধ্যে দেশের এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়েও চলার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির এসব কর্মকর্তাদের হয়ে কাজ করে থাকেন একই প্রতিষ্ঠানের এক সিবিএর প্রভাবশালী নেতাও। এছাড়া মেঘনা পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনেরও উর্ধ্বতন তিনজনের নাম ওঠে এসেছে। যাদের মধ্যে একজনই দীর্ঘ ২২ বছর ধরে টার্মিনালে কর্মরত থেকে বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। যাকে এ সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবেও দুদকের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। আর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের চার কর্মকর্তার নাম রয়েছে তালিকায়। এরমধ্যে একজন উপ-মহা ব্যবস্থাপক হিসেবে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পদে রয়েছেন। এছাড়া একজন টার্মিনালের কর্মকর্তার নাম আছে, যিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একই পদে থেকে এ সিন্ডিকেটকে প্রতক্ষ্যভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদক ও বিপিসির দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেখানে সবকিছুই এখন ডিজিটালভাবে চলছে, সেখানে জাহাজ থেকে তেল খালাসের আগে পরিমাপ চলে পুরোনো পদ্ধতিতে তথা এনালগ সিস্টেমে। মূলত এ সিন্ডিকেটটি ডিজিটাল কর্মকাণ্ড চালিয়ে না যাওয়ার জন্যই এমন কাজটি করে আসছেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে যদি এ পরিমাপ শুরু করা যেত, তাহলে কিছুটা হলেও পরিমাপের কারচুিপ কমে আসতো। তাছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিজেকে দেশের শীর্ষ এক শিল্প গ্রুপের লোক বলেও দাপট দেখিয়ে কর্মকাণ্ডগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যাংকে এফডিআরের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে। যার একটি বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান করছে দুদক।’
প্রসঙ্গত : চলতি বছরের মাঝামাঝিতে সরকারি তেল পাচার হওয়া সংক্রান্ত এক অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। যা যাচাই বাছাই শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য অনুমতি দেয় দুদক কমিশন। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা বিপিসি ও সংশ্লিষ্ট তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন নথি-পত্র চেয়েছেন। একই সঙ্গে নাম ওঠে আসা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও চিঠি দিয়েছেন ইতোমধ্যে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট