চট্টগ্রাম রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

২ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

নতুন বছরের উপহার বন্দরের ৪ প্রকল্প

সারোয়ার আহমদ

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

নতুন চারটি প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের যাত্রা শুরু হবে চট্টগ্রাম বন্দরের। আগামী ২ জানুয়ারি রবিবার চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে চট্টগ্রামে আসছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসময় আরো উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
ওইদিন যে চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভিস জেটি, টাগ বোট কান্ডারি-৬, ‘নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড ও সুইমিং কমপ্লেক্স। ২০২২ সালের নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন এসব প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, আগামী রবিবার বন্দরের চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব চট্টগ্রামে আসবেন। তাঁরা প্রকল্পগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে ওই সব প্রকল্পের কাজ শেষ করে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সার্ভিস জেটি : চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটির উজানে এক নম্বর জেটির পাশে নির্মিত হয়েছে নতুন এই সার্ভিস জেটি। এই জেটি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব পাইলট জাহাজ, জরিপ জাহাজ, দূষণ প্রতিরোধক জাহাজ, পানি বহনকারী জাহাজ, দুর্ঘটনা প্রতিরোধক জাহাজসহ বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদানকারী জাহাজ ভিড়বে। সেইসাথে সার্ভিস প্রদানকারী কর্মকর্তারা খুব সহজে জেটি দিয়ে জাহাজে উঠতে পারবেন। এতদিন সার্ভিস জেটি না থাকায় একজন পাইলটকে গুপ্তা এলাকায় গাড়ি নিয়ে গিয়ে জাহাজে উঠতে হতো। আবার কখনো ১৫ নম্বর ঘাটে গিয়ে জাহাজে উঠে বহির্নোঙরে যেতে হতো। ৮৩ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থে এই জেটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ২২০ মিটার, প্রস্থ ২০ মিটার ও ড্রাফট সাড়ে ৫ মিটার। জেটিতে অনায়াসে ২২০ মিটার দীর্ঘ ভিড়তে পারবে। ছোট জাহাজ হলে বেশ কয়েকটি একসঙ্গে ভেড়ানো যাবে। জেটি ছাড়াও দুই হাজার ৬৫০ বর্গফুটের তিনতলা একটি অফিস ভবন, ৩ হাজার বর্গফুটের স্টিল কাঠামোর একটি ওয়্যার হাউস, ২ হাজার ১০০ ঘন মিটারের একটি পানির রিজার্ভার, ২২২ মিটার লম্বা ৮ ফুট উঁচু রিটেইনিং ওয়াল, রিভার ব্যাংক ও শোর প্রোটেকশন, ড্রেনেজ সিস্টেম, ৫০০ কেভির বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ১০০ ফুট উঁচু সিগন্যাল টাওয়ারও নির্মিত হয়েছে।
টাগ বোট কান্ডারি-৬ : বর্তমানে ৭টি টাগবোট চলমান থাকলেও নতুন টাগবোট কান্ডারি-৬ সহ চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে মোট টাগবোটের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৮টিতে। নতুন এই টাগবোট সক্ষমতা ৪০টি বিপি (বলর্ড পুল-জাহাজের শক্তির একক)। এর গভীরতা ৩ দশমিক ৭৫ মিটার এবং লম্বায় ৩৩ মিটার। এটি নির্মাণ করতে বন্দরের খরচ হয়েছে ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এই টাগবোটটি নির্মানের জন্য ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ ইয়ার্ডের চুক্তি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্পের পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মাঝে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত ওই কান্ডারি-৬ জাহাজের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। রবিবার এটি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করবে ওয়েস্টার্ন মেরিন কর্তৃপক্ষ।
নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড : ফ্রি পোর্ট মোড় সংলগ্ন নেভী কলোনির বিপরীতে পুরাতন লেবার কলোনির জায়গায় বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেছে ‘নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড’। যার আয়তন প্রায় ৩৭ একর। ওই জায়গায় একটি সিএফএস সেড ছাড়াও বন্দরের কাজে ব্যবহারে জন্য চারটি ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। বন্দরের প্রয়োজনে ও বিভিন্ন সময়ে কনটেইনার চাপ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে এই ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ডটি ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। তবে রবিবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এই ইয়ার্ডে প্রায় ১২ হাজার কনটেইনার রাখা যাবে বলে জানিয়েছেন বন্দর সূত্র।
সুইমিং কমপ্লেক্স : প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সোয়া একর জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর সুইমিং কমপ্লেক্স যাতে রয়েছে আলাদা দুইটি সুইমিং পুল। আন্তর্জাতিক মানে তৈরি ১২৫০ বর্গমিটার (দৈর্ঘ্যে ৫০ মিটার ও প্রস্থে ২৫ মিটার) আয়তনের প্রধান পুলে রয়েছে ৮টি লেন। যার একপাশের গভীরতা সাড়ে চার ফুট এবং অপরপ্রান্তের গভীরতা সাড়ে ১৩ ফুট। যাতে একসাথে ৮ জন সাঁতারু লো ডাইভিং দিতে পারবেন। এছাড়া কমপ্লেক্সের প্রধান পুলের পাশে ৫০ ফুট দৈর্ঘ লম্বা ও ২০ ফুট প্রস্থের আরো একটি ক্ষুদে সুইমিং পুল। যাতে ক্ষুদে ও শিক্ষানবীশরা সাঁতার শিখতে পারবেন। যার একদিকের গভীরতা দুই ফুট ও অপরপ্রান্তে ৪ ফুট। সুইমিং পুলের একপাশে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গ্যালারি। যাতে একসাথে চার’শ লোকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। কমপ্লেক্সে যুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সনা বাথ ও জ্যাকুজি সিস্টেম। এছাড়া পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের জন্য আলাদা আলাদভাবে ড্রেসিংরুম, শাওয়ার জোন ও টয়লেটের ব্যবস্থা। সুইমিং কমপ্লেক্সটি চালু হলে পেশাদার সাঁতারুরা যেমন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করতে পারবেন। তেমনি দক্ষ ট্রেনারে মাধ্যমে সাঁতারও শিখতে পারবেন নতুনরা।
সুইমিং কমপ্লেক্সের প্রবেশপথের পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি বাস্কেটবল ও টেনিস কোর্ট।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট