চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

৫০ হাজার টাকা হলেই বেঁচে যায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

মাত্র ৫০ হাজার টাকার অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’। মাসিক ৫০ হাজার টাকার সাহায্য পেলেই রক্ষা পাবে এই স্কুল। যেখানে বর্তমানে পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী। জার্মানির ইউ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে হোপ ৮৭ বাংলাদেশ ‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ পরিচালনা করে আসছে। একটি বড় বাসের মধ্যে স্কুলটি পরিচালনা করা হয়।

বর্তমানে নগরীর বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকা ও বাকলিয়া এক্সরোড রোডে এই স্কুলটির কার্যক্রম চলমান । চলতি ডিসেম্বর মাসে ‘হোপ ৮৭ বাংলাদেশ’ এর ভ্রাম্যামাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। তাই কোন ব্যক্তি বা সংগঠন যদি স্কুলটি পরিচালনার জন্য এগিয়ে না আসে, তাহলে হয়তো স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাবে। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে সাড়ে ৩০০ শিশু।  রবিবার (গতকাল) বেলা ১১টায় নগরীর কল্পলোক আবাসিকে গিয়ে দেখা যায়, একদল সুবিধাবঞ্চিত শিশু হাতে বইখাতা ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই স্কুলের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা সবাই ভ্রাম্যমাণ এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

একটু পরেই স্কুল এসে পৌঁছালে সবাই লাইন ধরে একে একে স্কুলে উঠে পড়ে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রিমা আক্তারের (১০) সাথে কথা বলে জানা যায়, কল্পলোকের পাশে তুলাতলী এলাকার একটি বস্তিতে নানা-নানির সাথে থাকে রিমা। প্রথম শ্রেণি থেকে ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। ডিসেম্বর থেকে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে শুনে এখন সে চিন্তিত। রিমার মত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থীর চাওয়া স্কুলটি যেন বন্ধ না হয়। সমাজের বৃত্তবানরা যেন স্কুল পরিচালনায় এগিয়ে আসেন। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কণা চৌধুরী জানান, মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকার অভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার পথে। আমাদের সমাজের বৃত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে প্রায় সাড়ে ৩০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশু পড়াশুনার সুযোগ পাবে। জার্মানির ইউ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে হোপ ৮৭ বাংলাদেশ ‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে তাদের চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। এখনো পর্যন্ত নতুন করে স্কুলের দায়িত্ব নিতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এই স্কুল পরিচালনার জন্য কেউ যদি এগিয়ে না আসে এতগুলো শিশুর শিক্ষা জীবন এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে? তাদের আর পড়াশুনা করা হবে না।

তিনি আরো বলেন, মূলত যে সব শিশুদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ বা সামর্থ্য নেই তারাই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখন যদি কেউ এককভাবে বা যৌথভাবে অথবা কোনো সংগঠন যদি এই স্কুলের দায়িত্ব নেয়, তাহলে এই সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশুনার সুযোগ পাবে। কেউ গাড়ির তেল খরচ দিয়ে, কেউ ড্রাইভারের বেতন এবং কেউ শিক্ষকের বেতন দিয়ে স্কুলটি পরিচালিত করতে পারেন।

জানতে চাইলে হোপ ৮৭ বাংলাদেশের প্রতিনিধি মো. রেজাউল করিম জানান, ইউ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প যেহেতু শেষ হয়েছে। তাই অন্য জায়গা থেকে অর্থায়নের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো সাড়া পাইনি। এক্ষেত্রে আমাদের সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। কেউ যদি একক বা যৌথভাবে স্কুল পরিচালনার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে অনেক শিশু শিক্ষার সুযোগ পাবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট