চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্ধের পথে সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থীর ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি

ইমরান বিন ছবুর 

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

নগরীর বাকলিয়া এলাকার কল্পলোক আবাসিক এলাকা। প্রধান সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলেই মডেল মসজিদ। এর পাশেই একটি বাস দাঁড়ানো। বাসের গায়ে লেখা ‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’। বাসের সামনে যেতেই বাংলা ছড়ার শব্দ কানে বাজে। শিশুরা ছন্দে ছন্দে ছড়া পড়ছে। বাসে উঠে দেখা যায়, ১২ বছরের সাইমন নামের এক শিশু সবাইকে মুখে মুখে পড়াচ্ছে। প্রায় ২৫-৩০ জন শিশু সারিবদ্ধভাবে দুইপাশে বসে পড়ছে। কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাদের ছড়া শুনি। এরপর কথা হয় শিক্ষক কণা চৌধুরী ও শিক্ষার্থীদের সাথে।

কণা চৌধুরী জানান, জার্মানির ইউ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে হোপ ৮৭ বাংলাদেশ ‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে তাদের চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। এখনো পর্যন্ত নতুন করে স্কুলের দায়িত্ব নিতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এই স্কুল পরিচালনার জন্য কেউ যদি এগিয়ে না আসে এতগুলো বাচ্চা কোথায় যাবে? তাদের আর পড়াশুনা করা হবে না।

তিনি আরো বলেন, মূলত যে সব শিশুদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ বা সামর্থ্য নেই তাদের জন্য চট্টগ্রামে প্রথম ‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। ২০০৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক দল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু করে এই স্কুল। এর আগে বাংলাদেশে এই ধরনের প্রকল্প কেউ গ্রহণ করেনি। বর্তমানে এই ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাকলিয়া এক্সেস রোড ও কল্পলোক আবাসিকে প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।

কথা হলে সাইমন জানায়, ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকলে আমার পড়ালেখা করার সুযোগ হতো না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। টাকা খরচ করে যে স্কুলে ভর্তি হওয়ার মত সামর্থ্য নেই। ‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এ বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে জেনে সেখানে ভর্তি করান মা। গতবছর আমি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বর্তমানে কল্পলোক আবাসিকের বিদ্যানিকেতন স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছি।

ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নেয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সাইমন বলে, কিছুদিন আগেই আমার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে মাঝেমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ছড়া পড়াই।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কল্পোলক আবাসিকের আশপাশে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায়, আশপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশু এই স্কুলে পড়াশুনা করছে। এই স্কুলের অধিকাংশ শিশুই আশপাশের বস্তিতে থাকে। এদের কারো বাবা নেই, কারো মা নেই। আবার অনেকের বাবা-মা কেউ নেই। দাদা-দাদী বা নানা-নানীর কাছে থাকে তারা। এই স্কুল না হলে হয়তো তাদের লেখাপড়ার সুযোগ হতো না।

জানতে চাইলে হোপ ৮৭ বাংলাদেশের প্রতিনিধি মো. রেজাউল করিম জানান, জার্মানির ইউ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে হোপ ৮৭ বাংলাদেশ স্কুলটি পরিচালনা করে আসছে। ইউ ফাউন্ডেশন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বাসটি কিনেছে। ইউ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প যেহেতু শেষ হয়েছে। তাই অন্য জায়গা থেকে অর্থায়নের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমাদের সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আশা উচিত। তারা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেক শিশু শিক্ষার সুযোগ পাবে।

‘ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ কল্পলোক এবং বাকলিয়া এক্সেস রোডে মোট ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে কল্পলোকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২১৬ জন এবং বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট