চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

বাঁশখালী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

বাঁশখালী সংবাদদাতা

১২ ডিসেম্বর, ২০২১ | ৩:৫৯ অপরাহ্ণ

আজ ১২ ডিসেম্বর, বাঁশখালী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের বাঁশখালী পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। এদিন পাক হানাদারদের রুখে দিয়ে মুক্তিকামী জনতা প্রথম তুলেছিলেন বিজয়ী বাংলাদেশের রক্তসূর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।

বিভিন্ন গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাঁশখালীর বিভিন্ন জায়গায় হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। স্বাধীনতার বিজয়কে ছিনিয়ে আনতে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বাঁশখালীর স্বাধীনতাকামী জনগণেরও ভূমিকা ছিল। পাক হানাদার বাহিনী সাতকানিয়া সড়ক হয়ে বাঁশখালীতে প্রথম অভিযান চালায় ১৯৭১ সালের ১৯ মে। এদিন সকাল ১০ টার দিকে বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চল এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রভাবশালী স্বাধীনতা বিরোধীরাসহ শতাধিক সৈনিক ও ১০ ট্রাক সাজোয়া বহর নিয়ে বাণীগ্রাম থেকে শুর করে নাপোড়া পর্যন্ত চালায় ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর গণহত্যা। দেয় বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ। তাদের হিংস্রতায় বাঁশখালীর বিভিন্ন গ্রামে ৯০ জন সংখ্যালগু নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়। নিজ এলাকা ও দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন বাঁশখালীর আরো ১০ জন বীর সেনানী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি এসব শহীদ পরিবারগুলো খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।

এসব শহীদদের মধ্যে কালীপুর ইউনিয়নের কোকদন্ডী ও পালেগ্রামের ১৮ জনকে হাত-পা বেঁধে আধমরা অবস্থায় বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের দক্ষিণ পার্শ্বে গর্তে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। এ বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন’র উদ্যোগে ১৫ মার্চ ১৯৮৯ সালে একটি গণসমাধি ভিত্তিস্থাপন করা হয়। ২৬ মার্চ ১৯৮৯ সালে এই গণসমাধির ফলক উন্মোচন করেন বাঁশখালীর তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান সুজিত কান্তি সিকদার ও ইউএনও জালাল আহমদ। পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও দেশীয় স্বাধীনতা বিরোধীরা বাণীগ্রামের নিরীহ ২২ হিন্দুকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করে সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম মধ্যপাড়া পুকুরে ফেলে দেয়। পরে স্থানীয় হিন্দুরা মুসলমানদের সহযোগিতায় পুকুর পাড়ে সমাহিত করা হয়। যা বর্তমানে একিট স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই শহীদের স্মরণে ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ সালে নামফলক সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এমএফ কমান্ডার ও সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন। ২৬ মার্চ ২০১২ সালে এই স্মৃতিস্তম্ভ ফলক উন্মোচন  করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। দীর্ঘদিন যাবৎ এ বধ্যভূমি ২টি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকায় সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে দৃষ্টিনন্দন বধ্যভূমি নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাঁশখালীর মানুষ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের এই সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা সেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান মোক্তার আহমদ (প্রাক্তন এমপি), তৎকালীন চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সুলতানুল কবির চৌধুরী (প্রাক্তন এমপি), তৎকালীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী, তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিমান বিধ্বংসী গোলন্দাজ বাহিনীর রাড়ার অপারেটর খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন, পুকুরিয়ার শফিকুল ইসলাম, জলদীর নূরুল কবির চৌধুরী ও চাম্বলের মীর ওয়াজেদ আলী খান প্রমুখ। চট্টগ্রাম শহর ও আশেপাশের বিভিন্ন অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বাঁশখালীর আরেক বীর সন্তান শহীদ মৌলভী ছৈয়দ আহমদ যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার ১ম প্রতিবাদকারী ও ১ম শহীদ। বাঁশখালী হানাদার মুক্ত দিবসে এসব বীর সেনানীদের বাঁশখালীবাসী গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছেন।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট