চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

২০ বারের অধিক মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, শেষ ইচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করা

কে. জি. ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া

১২ ডিসেম্বর, ২০২১ | ২:২৮ অপরাহ্ণ

৭-ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর প্রোগ্রামে রেসকোর্স ময়দানে নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে ৩২ জন ইপিআর সৈনিক পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা। মাঠে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রতিটি কথা তার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার সেদিনকার বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়েই তিনি সেদিনই সিদ্ধান্ত নেন স্বাধীকার আন্দোলনের সংগ্রামে তিনিও অংশ নেবেন। ঢাকার পিলখানায় ইপিআর হেডকোয়ার্টারে তিন দিন থেকে ফিরে আসেন রামগড় কোম্পানির অধীনে বাগান বাজার ক্যাম্পে। ২৬ শে মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রামে কি হচ্ছে বুঝতে পারছিলেন তারা। রেডিও বার্তায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটা শুনেই বাঙালি সুবেদার ইলিয়াছের নেতৃত্বে তিনিসহ ১৮ জন সিপাহী পাক বাহিনীদের মোকাবেলায় ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে পড়েন। শুরুতেই সীতাকু-ের কুমিরায় সুবেদার ইলিয়াছ, সুবেদার মুছা ও ক্যাপ্টেন ভূইয়ার নেতৃত্বে পর পর দুই দিন পাক বাহিনীদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। রণাঙ্গনে চোখের সামনেই শহীদ হয়েছিলেন তার সহযোদ্ধা তোরাব আলী, মনছুর ও লুৎফরসহ বেশ কয়েকজন। ভাগ্যক্রমে তিনি সেদিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। এরপর চলে আসেন রাউজানের রাবার বাগান এলাকায়। তার ভাষ্যমতে, ‘২০ বারের অধিক মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি’ সেখানেও পাক বাহিনীর কর্নেল আজিজ তার পরিবার নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে একথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী গোলাম মোস্তফার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পরবর্তীতে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ দুই বছরের সিনিয়রটি সহ পদোন্নতি পেয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী বিডিআর-এ নায়েক, হাবিলদার, নায়েক সুবেদার ও সুবেদার পদে চাকরি করে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করেন রণতারকা, সমরপদক, মুক্তি তারকা, জয় পদক ও সংবিধান পদকসহ মহামূল্যবান ৫টি পদক।

মুক্তিযোদ্ধা হাজী গোলাম মোস্তফা জানান, ১৯৬৭ সালে ইপিআর-এ চাকরির সুবাদে সেখানে ২ মাস ট্রেনিং নিয়ে বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ক্যাম্পে যোগদান করেন তিনি। ১৯৭১ সালে সেখান থেকে পুনরায় ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে তিনি সহ অন্যান্য ইপিআর সদস্য চট্টগ্রাম হালিশহরে ট্রেনিং-এ আসেন। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এক রাতে আমার খোঁজে পাকিস্তানি বাহিনী রাঙ্গুনিয়ায় বাড়িও ঘেরাও করেছিল এবং আমি বাড়ি ফিরলে প্রাণে বাঁচতে চাইলে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল মা-বাবাকে। এতে বাবা হাজী নুরুল ইসলাম ও মা আয়শা খাতুন খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা। লোকমুখে পিতা-মাতার এই অবস্থা শুনে তাদের দেখতে বাড়ি এসেছিলাম। বাড়িতে কয়েকদিন থাকাকালীন সময়ে রাঙ্গুনিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. নুরুল আলমের সহযোগিতায় আরও একদল মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করে ভারতে ফিরে যাই। এই দলের মধ্যে পুলিশের সাবেক আইজি খোদাবক্স চৌধুরীও ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার বদান্যতায় এখন ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাচ্ছি। সেই টাকা দিয়েই আমার খাওয়া-দাওয়া, ঔষধ খরচসহ যাবতীয় সবকিছু চলছে। তিনি না থাকলে হয়ত পথে পথে ভিক্ষা করে চলতে হতো। জীবনে আর কোন স্বপ্ন নেই। শুধু একটাই স্বপ্ন, মৃত্যুর আগে যদি অন্তত একবার বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে দেখা করতে পারি।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট