চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডিসেম্বরেই খালি হচ্ছে নিলাম গোলা

সারোয়ার আহমদ 

২৯ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৩৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৫ একর জায়গা দখল করে আছে জরাজীর্ণ পুরাতন অকশন গোলা। বন্দরের পরিকল্পনা আছে অকশন গোলাটি সরিয়ে সেখানে কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। এজন্য বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে বন্দরের নিজস্ব জায়গায় ও নিজস্ব অর্থায়নে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সমপরিমাণ জায়গায় নতুন অকশন শেড নির্মাণ করে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান নতুন অকশন শেডটি উদ্বোধন করার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটি চট্টগ্রাম কাস্টমসকে বুঝিয়ে দিলেও গত ৬ বছরেও পুরাতন অকশন গোলাটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস। কারণ বন্দর থেকে অখালসকৃত বিপুল বাজেয়াপ্ত পণ্য পড়ে আছে অকশন গোলায়। এগুলো বহুবার নিলামে তুলেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি এবং অকশন গোলার জায়গাও খালি হয়নি। ফলে ওই অকশন শেড বন্দরকে বুঝিয়ে দিতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে এবার সেই অকশন গোলা খালি করতে জোর প্রস্তুতি নিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

অকশন গোলাটি খালি করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে গত ১১ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে বলা হয়- পুরাতন অকশন গোলায় রক্ষিত বিভিন্ন পণ্যসমূহের নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সকল লট সমূহের ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুরাতন অকশন গোলায় দীর্ঘদিনের বিভিন্ন মালামাল ও গাড়ি রয়েছে। ইতোপূর্বে কোন নিলামে কোন বিডার অংশগ্রহণ করে থাকলে অথবা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট লট/গাড়ির বিপরীতে কোন আমদানিকারকের মামলা ও অন্য কোন আদেশ থাকলে উপযুক্ত প্রমাণসহ সাত দিনের মধ্যে কাস্টমসের নিলাম শাখাকে অবহিত করতে হবে। অন্যথায় ওই সব মালামালে কোন দাবিদার নেই মর্মে বিবেচনা করে পণ্যের লটগুলো আইনানুগভাবে নিষ্পত্তি করবে কাস্টমস।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার মো. আল আমিন পূর্বকোণকে বলেন, পুরাতন অকশন গোলায় এখন আর ইনভেন্ট্রি ছাড়া কোন পণ্য নেই। যেটুকু গাড়ি আছে তার ৮০ শতাংশেরও ইনভেন্ট্রি হয়ে গেছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাকি গাড়িগুলোরও ইনভেন্ট্রি হয়ে যাবে। এসব পণ্য দ্রুত নিলামে বিক্রি করা হবে এবং নিলাম অযোগ্য পণ্যগুলো ধ্বংস করা হবে। এছাড়া মামলা থাকা লটগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। সব মিলিয়ে এই অকশন গোলাটি খালি করতে ডিসেম্বর নাগাদ সময় লাগবে।

এদিকে অকশন গোলার জায়গা বন্দর ব্যবহার করলে কি সুফল পাবে – সে প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, ৫ একর (২ লক্ষ ১৭ হাজার ৮শ বর্গফুট) অকশন গোলার জায়গায় কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এই পরিমাণ জায়গা কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হলে বছরে কমপক্ষে সাড়ে তিন লক্ষ কনটেইনার স্টোর ও ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ হতো। এর থেকে আয় হিসেবে গড়ে প্রতি কনটেইনারে ২ হাজার টাকা ধরলেও বছরে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা বন্দরের আয় হতো। আর নতুন অকশন শেড হস্তান্তরে ১ বছর ব্যয় ধরলেও বাকি ৫ বছরে বন্দরের ওই জায়গা ব্যবহার করে প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা আয় করার সুযোগ ছিল। এছাড়া বন্দরে কখনো কনটেইনার জট লাগলে সেটিরও বেকআপ দিতে পারতো এই জায়গা।

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পুরাতন অকশন গোলা প্রসঙ্গে বন্দর সচিব ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, ‘৫ একর ওই জায়গায় বন্দরের নতুন ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। ওই জায়গায় কনটেইনার রাখা গেলে বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। করোনাকালে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনারের যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল ওই জায়গায় কনটেইনার ইয়ার্ড থাকলে তা অনেক কমে যেত। এখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত জায়গাটি বুঝিয়ে দেবে তত তাড়াতাড়ি বন্দর ওই জায়গাটি ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করতে পারব।

উল্লেখ্য, বন্দরের ভেতরে জেটি ও ইয়ার্ড এলাকায় থাকা অকশন শেড বাইরে নিয়ে আসার জন্য ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে সমপরিমাণ জমির উপর ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি অকশন শেড নির্মাণ করে। ২০১৫ সালে নতুন অকশন শেড চট্টগ্রাম কাস্টমসকে বুঝিয়ে দিলেও বন্দরের ভেতরের অকশন গোলায় থাকা সব বাজেয়াপ্ত পণ্য নিলামে বিক্রি না করে সেটি খালি করা পর্যন্ত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওই অকশন শেড বন্দরে বুঝিয়ে দিতে পারছে না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট