চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

অসংক্রামক রোগের সমন্বিত চিকিৎসায় হোপ ক্লিনিক

ইমাম হোসাইন রাজু 

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

হার্ট ডিজিজ কিংবা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং কোলেস্টেরেলের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় চমেক হাসপাতালে চালু হল সমন্বিত চিকিৎসা কেন্দ্র। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘হোপ ক্লিনিক’।

চিকিৎসকরা জানান, অসংক্রামক এসব দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে এবং পরের করণীয় কী হবে, তার সেবা ও পরামর্শ মিলবে এক ছাতার নিচে। যেখানে সংশ্লিষ্ট রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই সেবা প্রদান করবেন। ফলে রোগীদের এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করেই সেবা পাবেন এক ছাতার নিচেই।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগেই এ ক্লিনিক খোলা হয়। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ইউনিট-২ তে তথা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেই এ সেবা কার্যক্রম দেয়া হবে। যেখানে আপাতত আউটডোর বা বহির্বিভাগ হিসেবে সপ্তাহে একদিন সেবা ও পরামর্শ দিবেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এরমধ্যে প্রাধান্য দেয়া হবে মেডিসিন, কার্ডিওলজি, এন্ডিক্রাইনোলজি, লিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকে। যেখানে একাধিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গুরুত্ব অনুযায়ী সেবা দেয়া হবে। পরবর্তীতে তার অন্য রোগেরও সেবা প্রদান করা হবে। যা একই স্থানে বসেই দেয়া হবে। এতে করে বিভিন্ন রোগে ভোগা রোগীদের ঘোরাঘুরি করতে হবে না।

মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল হোপ ক্লিনিক প্রসঙ্গে বলেন, এই ক্লিনিকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের এক ছাতার নিচে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। কেননা অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার চেয়ে কাউন্সেলিংই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ দেখা যায়, অসংক্রামক রোগ নিয়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। যার বিষয়ে রোগী বা তার স্বজনরাও অবগত নন কিংবা তারাও এসব বিষয়ে করণীয় কী তা জানেন না। যেহেতু চিকিৎসার প্রথম ধাপেই হচ্ছে মেডিসিন বিভাগ, এ বিভাগেই রোগীর বিভিন্ন সমস্যা প্রথম পর্যায়ে শনাক্ত হয়, তাই চালু হওয়া হোপ ক্লিনিকে রোগীদের সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।’

এদিকে, নতুন করে যাত্রা শুরু হওয়া হোপ ক্লিনিকটিতে সেবা প্রদানে মেডিসিন বিভাগের দুইজন সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। যারা এ ক্লিনিকের রোগীদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের অবহিত করবেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আপতত সপ্তাহে একদিন এ কার্যক্রম চালু হলেও, পরবর্তীতে তা দুইদিন পর্যন্ত নেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এ কার্যক্রম বিশে^র অন্যান্য দেশে চালু থাকলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য এটিই প্রথম।

মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশেদ মিরজাদা বলেন, ‘সাধারণত সংক্রমণকৃত রোগকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু অসংক্রমিত রোগ যে আরও বেশি ভয়ঙ্কর, তার দিকে নজরই দেয়া হয় না। ফলে হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, লিভারের মতো রোগগুলোতে মানুষের বেশি মৃত্যু হয়। অথচ একটু লাইফ স্টাইল বদলানো গেলেই এসব রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।’

হোপ ক্লিনিকে সকল ধরণের অসংক্রামক রোগের সেবা প্রদান করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একজন মানুষের শরীরে একাধিক রোগ থাকতে পারে। যেমন স্থূলতা মানুষরা হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, লিভারসহ এসব রোগে বেশি আক্রান্তে ঝুঁকি থাকে। তারাও সেবা পেতে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয়। তবে হোপ ক্লিনিকে এসব ব্যক্তিদের অগ্রিম পরামর্শ দেয়াসহ লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার পরমর্শ এবং ক্ষেত্রবিশেষ চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। ফলে কার্ডিয়াক, হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক কমানো সম্ভব হবে। মূলত বিশ^ব্যাপী ধারণা হচ্ছে, রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই সবচেয়ে বেশি উত্তম।

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় এ ওয়ার্ডের। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার ফিতা কেটে নতুন এ ওয়ার্ডের কার্যক্রম চালু করে। এসময় মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান, আব্দুস সাত্তার, রাশেদ মিরজাদা, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশীস দে, গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শর্মিলা বড়–য়াসহ বিভাগীয় প্রদানগণ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট