চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

বন্দরে ৪টি নতুন স্ক্যানার বসানোর কাজ শুরু শীঘ্রই

সারোয়ার আহমদ 

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১২:৪১ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ৪টিসহ মোট ৬টি নতুন অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার মেশিন বসানোর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে শীঘ্রই। প্রায় ৬ মাস আগে ১ এপ্রিল এই কাজের দরপত্র আহবান করা হলেও করোনা মহামারীর গ্যাঁড়াকলে পড়ে ৪ বার পেছাতে হয়েছিল দরপত্র খোলার তারিখ। কারণ ব্যয়বহুল ও অত্যন্ত সংবেদনশীল এসব মেশিন যথাযথভাবে নির্দিষ্ট স্থানে বসানোর জন্য দরপত্রদাতাদের ফিল্ড ভিজিটের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করোনার কারণে গত লকডাউনের মধ্যে এসব কাজ শেষ করতে বেগ পোহাতে হয়েছিল এনবিআর’কে। সে কারণে ৪ বার পিছিয়েছিল দরপত্র খোলার তারিখ।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৬৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৩টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয় ও প্রতিস্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ৬টি স্ক্যানার মেশিন বসানো হচ্ছে। যার ৪টি স্ক্যানারই বসবে চট্টগ্রাম বন্দরে। অন্য দুটি বেনাপোল এবং ভোমরা স্থলবন্দরে একটি করে স্ক্যানার স্থাপন করা হবে। এর দরপত্র আহবান করা হয়েছিল গত ১ এপ্রিল এবং দরপত্রের খোলার তারিখ ছিল ২৫ মে। করোনার লকডাউনের কারণে এই টেন্ডার খোলার তারিখ ৪ বার (২৪ জুন, ১৫ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট) পেছানো হয়। সর্বশেষ ২৫ আগস্ট এই টেন্ডার সম্পন্ন করে দরপত্রগুলো মূল্যায়ন কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে এক/ দেড় মাসের মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এই স্ক্যানার মেশিন বসানোর কার্যাদেশ দিতে পারবেন এমনটাই আশা করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা।

আধুনিক প্রযুক্তির যেসব স্ক্যানার বসানো হবে সেগুলো এক্স-রে বা গামা-রশ্মি ইমেজিং প্রক্রিয়ায় কনটেইনার খোলা ছাড়াই এর ভেতরের রঙ্গিন ছবি তুলতে পারবে। এসব মেশিনে স্ক্যানার ছাড়াও কনটেইনারের ওজন পরিমাপ, রেডিও পোর্টাল মনিটর এবং ইমেজিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নতুন স্ক্যানারগুলো ‘বোথ ওয়ে’ স্ক্যান ডিরেকশনে স্ক্যানিং করতে সক্ষম। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয় কনটেইনার স্ক্যানিং করা যাবে এই মেশিনগুলো দিয়ে।

প্রথম ধাপে এই ৬টি কনটেইনার স্ক্যানার সফলভাবে প্রতিস্থাপন ও চালুর পর দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৭টি কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয়ের কথা জানিয়েছে এনবিআর। সেই ৭টি থেকেও বেশ কয়েটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বরাদ্ধ রাখা হবে বলেও জানিয়েছে এনবিআর ওই সূত্র।

সরকার, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটের ‘অর্থ আইন-২০১৯’ এ বোঝাই পণ্য কনটেইনার বাধ্যতামূলক বৈদ্যুতিক স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনার বিধান চালু করে। বিধান অনুযায়ী, সরকারী আদেশে অব্যাহতি ব্যতিরেকে কোনও চালানকে বৈদ্যুতিক স্ক্যান ছাড়া কোনও শুল্ক বন্দর বা শুল্ক স্টেশনে থেকে ছাড়ানো যাবে না। বৈদ্যুতিক স্ক্যানিং সিস্টেমের অভাবে শারীরিক পরীক্ষা করে চালান খালাসের বিধানও রাখা হয়েছে। অপ্রতুল স্ক্যানার মেশিনের কারণে এখনো সারা দেশের কাস্টম হাউসগুলো আমদানি করা চালানের ১০-১৫ শতাংশ কায়িকভাবে পরীক্ষা করে।

নতুন স্ক্যানার মেশিন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার ফখরুল আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে চোরাচালান রোধে স্ক্যানার মেশিন বাড়ানো দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। চাহিদার প্রেক্ষিতে এখন ধাপে ধাপে নতুন নতুন আধুনিক স্ক্যানার মেশিন বসানো হচ্ছে।

নতুন আধুনিক কনটেইনার স্ক্যানারগুলোতে জৈব, অজৈব, ধাতব, প্লাস্টিক, বিভিন্ন পণ্যের রঙিন স্ক্যান ইমেজ (ছবি) পাওয়া যাবে। তাই স্ক্যান করা কনটেইনারের পণ্যের পার্থক্য নিরূপণ ও সঠিকতা যাচাই সহজ ও দ্রুততর হবে। এছাড়া নতুন স্ক্যানারগুলো শুল্কফাঁকি, চোরাচালান, মিথ্যা ঘোষণা রোধ, ঝুঁকিমুক্ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

চট্টগ্রাম কাস্টম সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের খবরটি সত্যি আনন্দের বিষয়। আধুনিক স্ক্যানিং মেশিন হচ্ছে কায়িক পরীক্ষার বিকল্প। কারণ সঠিক স্ক্যানিংয়ে ডিজিটাল ইমেজে একটি কনটেইনারের ভেতরে কী আছে সব নিখুঁতভাবে ফুটে ওঠে। বন্দরের সব গেটে যদি স্ক্যানার বসে যায় তাহলে ব্যবসায়ীদের পণ্য বা কনটেইনার খালাস নিতে সময় কমবে, কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমবে, দেশ ও বন্দরের ভাবমূর্তি বাড়বে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইএসপিএস কমপ্লায়েন্স পোর্টের শর্তাবলী পূরণে সব গেটে কনটেইনার স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের বিকল্প নেই। এটি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারগুলো যথাযথ স্ক্যানিংয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার দাবি করে আসছিল। নতুন অত্যাধুনিক স্ক্যানারগুলো সে সমস্যার সমাধান করবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে স্ক্যানার আছে ৭টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে ‘এফএস ৬০০০’ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে ‘এফএস ৩০০০’ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি ২ ও জিসিবি ২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। তবে পুরোনো কয়েকটি স্ক্যানার মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে গিয়ে স্ক্যানিং কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট