চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

চট্টগ্রাম কাস্টমস : ই-অকশনে কারনেট সুবিধায় আনা ১৩০ বিলাসবহুল গাড়ি

সারোয়ার আহমদ 

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ১৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি ই-নিলামে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। সারাদেশ থেকে ব্যাপক হারে অংশগ্রহণকারীদের যুক্ত করে উচ্চমূল্যের এসব গাড়ি বিক্রির জন্য এই নিলামটি ই-অকশন ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার এসব বিলাসবহুল গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম কমিটি। একই সাথে নিলামের জন্য এই মাসের সুবিধাজনক একটি তারিখ ঠিক করবে কমিটি।

চট্টগ্রাম বন্দরের বিপুল জায়গা দখল করে রাখা ওই ১৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলাম প্রক্রিয়ায় বিক্রির জন্য গত ২৪ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে আবেদন করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস গোয়েন্দা ও নিলাম) সাদিয়া আফরোজ গাড়িগুলো ই-অকশনের তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত দেন।

কাস্টমসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা যায়, নিলামের জন্য রাখা গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, জাগুয়ার, লেক্সাস, মিৎসুবিসির মতো দামি ব্র্যান্ড। কারনেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় আনা অখালাসকৃত এসব গাড়ি নিলামের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। এর মাধ্যমে এসব গাড়ির প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য (শুল্ক-করসহ গাড়ির সম্ভাব্য দাম) নির্ধারণ করা হবে। পরে দিনক্ষণ ঠিক করে এ মাসের মধ্যেই নিলাম কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার উপ-কমিশনার মো. আল আমিন পূর্বকোণকে জানান, কারনেট সুবিধায় আনা ১৩০টি গাড়ি বিক্রির জন্য এর আগেও কয়েক দফা নিলাম অনুষ্ঠিত হলেও কাক্সিক্ষত দর না পাওয়ায় তা বাতিল করা হয়। তবে এবার বৃহৎ পরিসরে গাড়িগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। ই-অকশন পদ্ধতিতে নিলাম হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম ও ঢাকা ছাড়াও সারাদেশের সব জেলার বাসিন্দারা এই নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এতে নিলামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক দরও পাওয়া যাবে। এসব গাড়ি বিক্রির মাধ্যমে যেমন বন্দরের জায়গা খালি হবে তেমনি সরকারের কোষাগারেও বিপুল রাজস্ব জমা পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কাস্টমসের নিলাম শর্ত অনুযায়ী, যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নিতে পারবে। টেন্ডারে অংশ নেওয়ার সময় শিডিউলের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সনদ অথবা টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। প্রদত্ত কোটেশনের ১০ শতাংশ হারে ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডার চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের অনুকূলে জমা দিতে হবে।

শুল্ক আইন অনুযায়ী, প্রবাসী, পর্যটক ও কূটনীতিকসহ বিশেষ শ্রেণির ব্যক্তিরা কারনেট সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে বাংলাদেশে গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন। তবে বাংলাদেশ থেকে ফেরার সময় অবশ্যই গাড়িগুলো নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু অনেকেই ফেরত না নিয়ে কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে গাড়িগুলো এখানে বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে কাস্টমসের কড়াকড়ির কারণে কারনেটের আওতায় আনা অনেক গাড়ি বন্দর থেকে ছাড়িয়ে নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

কারনেট হচ্ছে এক দেশের গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে অন্য দেশে নিয়ে ব্যবহারের একটি বিশেষ সুবিধা। বিদেশি বিশেষ ব্যক্তিরা এ সুবিধায় গাড়ি এনে স্বল্প সময় ব্যবহার করে নিজ দেশে যাওয়ার সময় তা আবার ফেরত নিয়ে যান। এই সুবিধা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে এসব গাড়ি ব্যবহারের পর তার বেশিরভাগই ফেরত যায়নি। এনবিআরের হিসাবে, বিভিন্ন সময় ৩১৫টি গাড়ি কারনেট সুবিধার আওতায় দেশে এসেছে। এসব গাড়ির মধ্যে শর্তানুযায়ী অনেক গাড়িই পুনরায় রপ্তানি বা ফেরত নেওয়া হয়নি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট