চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

অফডকে সব ধরণের পণ্য পাঠানো বন্ধ হচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক 

৩১ আগস্ট, ২০২১ | ১:০১ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের ১৯টি বেসরকারি অফডকে সব ধরণের পণ্য পাঠানোর শেষ দিন আজ। ফলে আজ মঙ্গলবারের (৩১ আগস্ট) পর পূর্ব নির্ধারিত ৩৮ ধরনের পণ্যের বাইরে অতিরিক্ত কোন ক্যাটাগরির পণ্য আর বন্দর থেকে অফডকেগুলোতে পাঠানো হবে না। তবে আজ পর্যন্ত ৩৮ ধরণের পণ্যে অতিরিক্ত যেসব পণ্য অফডকে ঢুকে যাবে সে সকল পণ্যের খালাস প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

গত জুলাইয়ে ঈদের ছুটি ও লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে অভ্যন্তরে কনটেইনারের চাপ প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে ওই সময়ে বিদেশ থেকে আসা জাহাজের কনটেইনার রাখার জায়গার সংকট সৃষ্টি হয়। সে জটিলতা নিরসনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা সব ধরণের পণ্যের কনটেইনার বেসরকারি অফডকে সাময়িক সংরক্ষণ, আনস্টাফিং ও খালাসের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ২৫ আগস্ট এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মোহাম্মদ মেহরাজ-উল-আলম সম্রাট স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যা আজ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

প্রসঙ্গত, সংকট চলাকালীন সময়ে ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউ’স কনটেইনার ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২৫ আগস্ট কনটেইনার ছিল ৪৩ হাজার ৫৭৪ টিইইউ’স। অন্যদিকে বেসরকারি ১৯টি অফডকের মধ্যে অপারেশনে থাকা ১৭টি অফডকের ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউস কনটেইনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে ওই দিন ২৫ জুলাই পর্যন্ত কনটেইনার ছিল ৫৩ হাজার ৮৬৪ টিইইউস। অর্থাৎ সব ধরণের পণ্য অফডক থেকে খালাস হওয়ার এনবিআরের সেই সিদ্ধান্তে অফডকে খালি থাকা ২৪ হাজার ৮৩৬ টিইইউস কনটেইনারের জায়গায় চট্টগ্রাম বন্দরে জমে থাকা কনটেইনারগুলো স্থানান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যদিও গত ২৬ জুলাই থেকে গতকাল ৩০ আগস্ট পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী অফডকগুলোতে নির্ধারিত ৩৮ ধরণের পণ্যে বাইরে অতিরিক্ত পণ্যে কনটেইনার গেছে ১৪ হাজার ৭২৫ টিইইউস। এই সময়ে পণ্য খালাসের জন্য অফডকে মোট আমদানি পণ্যের কনটেইনার গেছে ৪২ হাজার ২৪৮ টিইইউস।

এদিকে, অফডক থেকে সব ধরণের পণ্য খালাসের সিদ্ধান্ত হওয়ায় বাড়তি খরচের চাপে পড়ার আশংঙ্কায় এর বিরোধিতা করেছিল তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বিজিএমইএ’র আলোচনার প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল অফডকে না পাঠিয়ে সরাসরি বন্দর থেকেই খালাস দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রকিবুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, গার্মেন্ট খাত এমনিতেই করোনার কারণে বিপর্যস্ত। তার মধ্যে গার্মেন্টসের কাঁচামাল অফডক থেকে খালাস হলে আমাদের বাড়তি খরচের ও অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণের চাপ থাকতো। এরই প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ’র নেতৃবৃন্দ বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করে গার্মেন্ট কাঁচামাল বন্দর থেকে খালাসের ব্যবস্থা করে।

৩৮ ধরণের পণ্যের অতিরিক্ত পণ্য অফডক থেকে খালাস প্রসঙ্গে বিকডা সচিব রুহুল আমিন শিকদার পূর্বকোণকে বলেন, গত জুলাইয়ে বন্দরে পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় কনটেইনারের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। সে সময় ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাদার ভ্যাসেল না পাওয়া ও শিপিং এজেন্ট কর্তৃক রপ্তনি পণ্যের কনটেইনার বুকিং না দেওয়ায় অফডক গুলোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য পোর্ট কেলাংয়ে বিশেষ জাহাজ যোগে রপ্তানি পণ্য পাঠিয়ে এর সমাধান করেছিল বন্দর। এর মধ্যেই এনবিআরের সিদ্ধান্তে ৩৮ ধরনের পণ্য ছাড়াও সব ধারণের পণ্যের কনটেইনার অফডকে আসে। ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অফডকগুলো মোট ৪২ হাজার ২৪৮ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে। যার মধ্যে ৩৮ ধরনের পণ্য ছাড়াও অতিরিক্ত পণ্যের কনটেইনার ছিল ১৪ হাজার ৭২৫ টিইইউস। এ সংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার সময় কেউ অফডকের কাজের কোন অভিযোগ তুলতে পারেনি। সফলভাবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পণ্য খালাস হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০ থেকে ২২ জুলাই ঈদের ছুটি ও ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের কারণেই চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। লকডাউনে কারখানা বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তে কোন কারখানার মালিকই তাদের আমদানিকৃত কাঁচামাল বন্দর থেকে খালাস নিচ্ছিলেন না। অন্যদিকে ঈদের ছুটিতে পণ্যের খালাস অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই দুই কারণেই পণ্যবাহী কনটেইনার স্তুপ পড়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট