চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

তিন মাসের মাথায় আবারো নিম্নমানের চাল আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক 

৭ আগস্ট, ২০২১ | ১:২০ অপরাহ্ণ

তিন মাসের ব্যবধানে আবারো ধরা পড়ল নিম্নমানের চাল। ভারত থেকে আমদানি করা নি¤œমানের চাল খালাস বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। ওই জাহাজে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টন চাল রয়েছে। ১৮ হাজার দুইশ টন চাল নিয়ে বন্দর জেটিতে ভিড়ে এমভি ড্রাগন। খালাসের তিন দিনের মাথায় ধরা পড়ে বেশির ভাগ চাল ছিল লালচে ও ঘোলাটে। আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য মান ছিল না বলে জানান খাদ্য বিভাগ।

গত ৮ মে একইভাবে এমভি ড্রাগন জাহাজযোগে দেশে আসা আমদানি করা চালের মানও খারাপ ছিল। অতিরিক্ত ভাঙা থাকার কারণে ওই জাহাজে আসা চাল খালাস বন্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বস্তা যাছাই-বাছাই করে খালাস করা হয়েছিল বলে দাবি খাদ্য বিভাগের। তাও ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছিল। একাধিক সূত্র জানায়, চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিম্নমানের চাল খালাস করা হচ্ছে।

আমদানি করা চালে প্রতি জাহাজেই ভালোমানের চালের সঙ্গে নিম্নমানের চালও খালাস করা হয়। তবে কোনো জাহাজে মাত্রাতিরিক্ত নিম্নমানের চাল ধরা পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। অন্যথায় অগোচরে খালাস করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মো. শফিউল আজম পূর্বকোণকে বলেন, জাহাজের প্রথম স্তরের চাল খালাসের পর পরের স্তরে কিছু বস্তা চালের মান খারাপ থাকায় খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চালের মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা খাদ্য অধিদপ্তর ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেওয়া হবে, সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খাদ্য বিভাগ জানায়, আমদানি করা চাল বহির্নোঙর ও বন্দর জেটিতে নোঙর করার পর একাধিকবার মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। একাধিকবার পরীক্ষার পরও বার বার কিভাবে নিম্নমানের চাল আমদানি ও খালাস করা হয়, তা নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।

জাহাজ থেকে চাল খালাসে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, জাহাজে বর্তমানে ১৬ হাজার ৪৯৫ টন চাল রয়েছে। বেশিরভাগ চালই লালচে ও ঘোলা। এই জাহাজ থেকে খালাসের পর ময়মনসিংহ, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলে বিভিন্ন খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন গুদামে চাল খালাস বন্ধ করে দেওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এরপর এমভি ড্রাগন থেকে চাল খালাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য বিভাগের সমুদ্র বন্দর চলাচল ও সংরক্ষণ দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আমদানি করা চালে জাহাজের উপরের স্তরে ভালোমানের চাল থাকে। ভেতরের স্তরে বেশির ভাগই মান খারাপ থাকে। প্রতিটি জাহাজে এই ধরনের চাল পাওয়া যাচ্ছে।

গত ৮ মে ভারত থেকে আমদানি করা চালের মান খারাপ হওয়ায় জাহাজ থেকে খালাস বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। ওই জাহাজে প্রায় ১৯ হাজার টন চাল ছিল। এসব চালের মধ্যে কিছু কিছু বস্তায় অতিরিক্ত ভাঙা চাল থাকায় খালাস বন্ধ করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে লাইটার জাহাজে করে সাইলো জেটিতে তা খালাস করা হয়েছিল। এসব চাল দেশের বিভিন্ন খাদ্য গুদামে সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু তা না করে শেষতক নগরীর হালিশহর ও দেওয়ানহাট সিএসডি গুদামে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে খাদ্য চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মো. শফিউল আজম বলেন, ‘যাছাই-বাছাই করে ভাঙা চাল ফেরত নিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। মান বাছাই করে খালাস করা হয়েছে।’

দেশে চাল সংকটের কারণে সরকার ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। জিটুজি ও আন্তর্জাতিক টেন্ডারে আমদানি করা হচ্ছে এসব চাল। চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের কয়েকটি স্থল ও সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকছে এসব চাল। তারই ধারাবারিকতায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ছয় লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে।

খাদ্য বিভাগের সদরঘাটের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা খালাসের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। বার বার চালের মান খারাপ হওয়ার বিষয়ে ল্যাব সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট