পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত ফোর লেনের যে প্রকল্প সওজ বিভাগ নিয়েছে সেই এক্সপ্রেসওয়ের সাথেই যুক্ত হবে আলোচ্য সিটি আউটার রিং রোডটি। তবে সিডিএ জানিয়েছে ১৫ কিলোমিটার সিটি রিং রোড সীতাকু-ের বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত আরো ১৫ কিলোমিটার বাড়ানোর কাজ চলছে।
এরপর সড়কটি সওজের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নির্মিত হলে এটি হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সওজ চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) ও অস্ট্রেলিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইসি (স্মেক) যৌথ উদ্যেগে সড়কটির মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র উপকূলবর্তী সড়ক।
দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের ব্যাপারে সার্ভে পরিচালনা করার জন্য গত বছরের ২৬ আগস্ট স্মেক ইন্টারন্যাশনালের সাথে চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আলোকে স্মেক ও সওজ যৌথ উদ্যেগে সড়কটি কোন পথে নিলে খরচ কম হবে সে ব্যাপারে সমীক্ষার কাজ করছে।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, মিরসরাই-সীতাকুণ্ড থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূলবর্তী মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে-মিরসরাই-সীতাকুণ্ড-কক্সবাজার ফোর লেন মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে। এর একটি অংশ হচ্ছে, সীতাকুণ্ড থেকে মুহুরী সেচ প্রকল্প হয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের উপর বিকল্প সড়ক নির্মাণ ও অপর অংশ হচ্ছে শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলবর্তী অঞ্চল দিয়ে মেরিনড্রাইভ নির্মাণ।
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, প্রাথমিকভাবে মিরসরাই মুহুরী সমুদ্র উপকূল থেকে সীতাকু- হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর নেভাল একাডেমি, বঙ্গবন্ধু টানেল, আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী, বাঁশখালী,পেকুয়া, চৌফলদ-ী, খুরুশকুল সমুদ্র উপকূল হয়ে কক্সবাজার শহরে কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়কে সংযুক্ত করার বিষয়টি সমীক্ষা চলছে। মাঝখানে ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার আউটার রিং রোড নির্মাণ করেছে সিডিএ।
রিং রোডটি আমরা মালিকানা হস্তান্তর করতে চাইছি। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ের গড় উচ্চতা হবে ১৫ ফুট। ২৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চট্টগ্রাম অংশে ৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে পড়বে ১৫০ কি.মি.। এটি কক্সবাজার- টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত নির্মিত ৮০ কি.মি. মেরিন ড্রাইভওয়ের সাথে ফোর লেনে উন্নীত হয়ে যুক্ত হবার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামস জানান, ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পর্যন্ত সড়কটির বর্তমান দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এবার দ্বিতীয় ফেজে সড়কটির সাগরিকা থেকে সীতাকুণ্ডের বাঁশাবাড়িয়া পর্যন্ত আরো ১৫ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। আগামী বছর থেকে পুরোটাই চার লেনে উন্নীত করা হবে। সড়কটির সাগরিকা, বাঁশবাড়িয়া ও ভাটিয়ারি অংশে লিংক রোড রাখা হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ সম্পন্ন হলে রিং রোডে গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে। বিষয়টি মাথায় রেখে দ্বিতীয় ফেজের একই প্রকল্পে ১৫ কিলোমিটার আউটার রিং রোডের রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পও হাতে নেয়া হবে।
প্রধান প্রকৌশলী শামস বলেন, মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হতে আরো সময় যাবে। কারণ প্রকল্পটি এখনো মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা চলছে। এরমধ্যে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রিং রোডের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর রিং রোড সওজের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, স্মেক ইন্টারন্যাশনালের সাথে মিরসরাই-কক্সবাজার ফোরলেন এক্সপ্রেসওয়ের যৌথ উদ্যোগে পৃথিবীর দীর্ঘতম এ মেরিন ড্রাইভের মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা চলছে। এতে একশ’ বছরের সর্বোচ্চ ফ্লাড লেভেল এবং বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাগুলো বিবেচনায় রাখা হবে। এটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময়ে উপকূলকে দেবে সুরক্ষা। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। মহাসড়কটি হবে সামগ্রিকভাবে পর্যটকবান্ধব। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। পুরো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষার পর দাতা সংস্থার খোঁজ নেয়া হবে। দাতা সংস্থা পাওয়া গেলে সরকারি অর্থায়নের প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
পূর্বকোণ/এএ