চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়া

লকডাউন শিথিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে

মোহাম্মদ আলী 

১৩ জুলাই, ২০২১ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদকে সামনে রেখে লকডাউন শিথিলে সরকারি ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, কমপক্ষে ২১ দিন থেকে এক মাস টানা লকডাউন দিলে মানুষ সুফল পাবে। এর আগে লকডাউন শিথিল করলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে। জনগণ কাক্সিক্ষত সুফল পাবে না। তাছাড়া শুধু আমলা দিয়ে লকডাউন সফল হবে না। এ ক্ষেত্রে সমাজকে সম্পৃক্ত করতে পারলে সফলতা আসবে।
প্রসঙ্গত করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত শিথিল করার সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে। ঈদকে সামনে রেখে সরকার এ ব্যবস্থা নিয়ে বলে জানা গেছে। তবে ২৩ জুলাই থেকে আবারও লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হবে। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, বিধিনিষেধ শিথিল করার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের গণপরিবহন এবং শপিং মলসহ দোকানপাট খোলা থাকবে। তবে আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে হবে গণপরিবহনকে। কোরবানির হাটও বসবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। প্রথমে ৭ জুলাই পর্যন্ত তা থাকলেও পরে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, যা আগামীকাল বুধবার (১৪ জুলাই) শেষ হবে। তবে বিধিনিষেধের মধ্যে সব সরকারি অফিসের দাপ্তরিক কাজগুলো ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করা হবে।
শ্রমজীবী মানুষসহ জীবিকার দিক বিবেচনা করে ঈদের আগে বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর বর্তমান পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ শিথিল করলে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটা নিয়েও আশঙ্কা আছে।
দেশে একদিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে গতকাল রবিবার। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬৮ জন। এ সময় করোনায় মারা গেছে ২২০ জন। এ অবস্থায় লকডাউন শিথিলের বিষয়টি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইস্ট-ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ও সুজন এর সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘১৪ দিন টানা লকডাউন চালিয়ে পুনরায় শিথিল করলে তাতে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে না। লকডাউন আরো কিছুদিন চালালে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমে আসতো। লকডাউন শিথিল করার আগে ভাইরাস নিয়ে যারা কাজ করছেন, আগে তাদের মতামত নিতে হবে। এরপর করণীয় নির্ধারণ করলে কাক্সিক্ষত সুফল আসতো। কিন্তু এখন কি হচ্ছে, মাঝপথে এসে লকডাউন শিথিল করলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বাড়বে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘কমপক্ষে ২১ দিন থেকে এক মাস টানা লকডাউন দিলে মানুষ সুফল পাবে। এর আগে লকডাউন শিথিল করলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে। তারপরও সরকারকে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বিশেষ করে দিনমজুর, শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীদের জীবিকার কথা বিবেচনা করতে হয়। তাই হয়তো সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। এরপরও বলবো লকডাউন থাকুক আর নাই থাকুক, প্রত্যেক মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। এ মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি তেমন একটা ভাল নয়। এটি বিবেচনা নিয়ে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।’
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমলা দিয়ে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, সমাজকে জড়িত করতে হবে। সমাজকে দায়িত্ব দিলে তারা কমিটি গঠন করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এ সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণ করবে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে, তা সাধারণ মানুষ কতটা আমলে নিচ্ছে? বিষয়গুলো এখন ভেবে দেখতে হবে। তাই সমাজকে সম্পৃক্ত করে লকডাউন দিলে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। একই সাথে লকডাউন শিথিলের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মানা হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে।’

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট