চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

চট্টগ্রামের দুটি সার্ভিল্যান্স চেক পোস্ট নির্মাণের টেন্ডার আগস্টে

মোহাম্মদ আলী 

১২ জুলাই, ২০২১ | ৪:১৮ অপরাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে মাছধরা নৌযান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গৃহীত সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হবে আগামী আগস্ট মাসে। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও নিয়ন্ত্রণে ১ হাজার ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার এ মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করে। প্রকল্পের অধীনে সারাদেশের ৬৮ হাজার ফিশিং বোটকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। স্থাপন করা হবে ১৬ সার্ভিল্যান্স চেক পোস্ট। এরমধ্যে চট্টগ্রামে নির্মিত হবে দুইটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হয়। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ মৎস্য আহরণ হয় ৬৮ হাজার ফিশিং বোটের মাধ্যমে। কিন্তু আহরণ ও নিয়ন্ত্রণের কোন তথ্য না থাকায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে সরকার প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব হারায়। তাই এ খাতে উন্নয়নের জন্য সরকার দেশের ১৬টি উপকূলীয় জেলার জন্য বিশাল এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

সূত্র জানায়, দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরূপণ, আহরণ, বিপণন, নিয়ন্ত্রণ, নজরদারিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণা, জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য আহরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলে মোট ১৬টি মেরিন ফিশারিজ সার্ভিলেন্স চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। 

এরমধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারার উপকূলের গহিরায় একটি এবং দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপের বাংলাবাজার এলাকায় একটি রয়েছে। প্রতিটি চেকপোস্ট নির্মাণে খরচ হবে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। নির্মাণের পর প্রতিটিতে লোকবল থাকবে ৩০ জন করে। ইতোমধ্যে ২টি চেক পোস্টের জন্য ভূমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ দুইটি চেক পোস্টের মাধ্যমে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক ফিশিং বোটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

বিশেষ করে সাগরে ফিশিং করতে যাওয়ার প্রাক্কালে ফিশিং বোটগুলোর রেজিস্টেশন, লাইসেন্স, অনুমোদিত জাল ব্যবহার, জেলেরা জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ব্যবহার করছে কিনা যাবতীয় মনিটরিং করা হবে। পাশাপাশি চেক পোস্টে প্রতিটি ফিশিং বোটকে একটি করে ডিভাইস দেওয়া হবে। এটির মাধ্যমে বোটগুলোর নিয়ন্ত্রণ, জরুরি সতর্কতা ও সুনামি সতর্কতা সংকেত পাঠানো এবং সাগরে জলদস্যুর হামলা কিংবা অন্য কোন বিপদে সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে। ফিশিং বোটগুলো সাগরে মৎস্য আহরণশেষে ফেরার পথে পুনরায় চেকপোস্টে আহরণকৃত মাছের মনিটরিং করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার নতুন ফিশারিঘাটকে আধুনিকায়ন এবং আনোয়ারার গহিরায় একটি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার নির্মাণ করা হবে। এসব ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারে ফিশিং বোট থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে আহরণকৃত মাছ লোড-আনলোড করা হবে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও প্রতিটি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারে বরফ কলের ব্যবস্থা থাকবে। চেকপোস্ট ও ফিশ ল্যান্ডিং ছাড়াও প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামে একটি ফিশ কোয়ারেন্টিন ল্যাব, ডায়াগনস্টিক ল্যাব ও পিসিআর ল্যাব নির্মাণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপ-প্রকল্প পরিচালক অধীর চন্দ্র দাস দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনার কারণে প্রকল্পটি দ্রুত আগানো যাচ্ছে না। আগামী আগস্টে প্রকল্পটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য কাজগুলো করা হবে।’

অধীর চন্দ্র দাস বলেন, ‘সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন, গবেষণা, মনিটরিংসহ যাবতীয় কর্মকা- পরিচালনার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিশাল এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। দেশের উপকূলীয়  ১৬টি জেলার ৭৫ উপজেলার ৭৫০টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।’

সূত্র আরো জানায়, সারাদেশে মোট ৬৭ হাজার ৬৬৯টি মাছ ধরা যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক ফিশিং বোট রয়েছে। এর মধ্যে যান্ত্রিক বোট রয়েছে মাত্র ৩২ হাজার। অবশিষ্ট ফিশিং বোট অযান্ত্রিক। এছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং ট্রলার রয়েছে ২৫৭টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৫০টি এবং অবশিষ্ট ৭টি রয়েছে খুলনায়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিং ট্রলারগুলোর রেজিস্টেশন ও লাইসেন্সসহ সরকারের সব ধরনের অনুমোদন থাকলেও মাত্র ৭ হাজার ফিশিং বোটের রেজিস্টেশন ও লাইসেন্স রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৬১ হাজার ফিশিং বোটের কোন লাইসেন্স নেই। এতে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি মনিটরিংয়ের বাইরে রয়েছে বোটগুলো। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি শৃঙ্খলা আনায়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট