চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জীবন বাঁচাতে জীবনবাজি

মিজানুর রহমান

৪ জুলাই, ২০২১ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা ১২টার ঘরে। শনিবার দুপুরের এই সময়ে নগরীর জিইসি এলাকায় গায়ে লাল জ্যাকেট আর লকডাউন লেখা ব্যাজ পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছিলেন একদল যুবক। দূর থেকে তাদের সরকারি কোনো বাহিনীর সদস্য মনে হলেও কাছে গিয়ে জানা গেল-তারা স্বেচ্ছাসেবক। লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার পাশাপাশি করোনার ভয়াবহতা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণই তাদের কাজ। শুধু জিইসি এলাকা নয়। শনিবার যুব রেড ক্রিসেন্টের এসব স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রম দেখা গেছে-কোতোয়ালী মোড়, কাজীর দেউড়ি, চকবাজার, আগ্রাবাদ, নতুন ব্রিজ, সিটি গেটসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সমবয়সী অন্যরা যখন ঘরে সময় কাটাচ্ছেন- তখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সড়কেই দিন পার করছেন এই তরুণরা। নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যের জীবন বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউন বাস্তবায়নে যুব রেড ক্রিসেন্টের ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছেন। মাঠে প্রশাসনের আভিযানিক দলকে সহায়তার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করছেন তারা। এছাড়া জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে ধর্মীয় স্থাপনা জীবাণুমুক্তকরণ, লকডাউনে কর্মহীন দিনমজুরদের খাবার বিতরণ, টিকা কার্যক্রমে সহায়তা, বিনামূল্যে প্রবাসীদের টিকা নিবন্ধন কার্যক্রমসহ নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের যুব প্রধান গাজী মো. ইফতেখার হোসেন ইমু পূর্বকোণকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা তিনটি ভাগে কাজ করছি। ৫০ জনের একটি দল ৫ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযান পরিচালনায় সহায়তা দিচ্ছেন। ৫০ জনের অন্য একটি দল ৫ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছেন। এছাড়া আমাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আরো কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবক নগরীর অলি-গলি, কাঁচাবাজারে সচেতনতা তৈরি করতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছেন।
তিনি বলেন, শুধু সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মধ্যেই আমরা কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখিনি। কর্মহীনদের খাবার দেওয়া, মসজিদসহ ধর্মীয় উপসনালায়গুলো জীবাণুমুক্তকরণ, টিকাদান কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান এবং প্রবাসীদের টিকা নিবন্ধন করতে সহায়তা দিচ্ছেন আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা। সব মিলিয়ে যুব রেড ক্রিসেন্টের ৫শ স্বেচ্ছাসেবক করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দিনরাত কাজ করছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে লড়ছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে গাজী মো. ইফতেখার হোসেন ইমু বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর এখন পর্যন্ত আমাদের ৬ জন স্বেচ্ছাসেবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে সবাই সুস্থ হয়ে গেছেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কোনো স্বেচ্ছাসেবক করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য প্রশাসন এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবককে আমরা ইনস্যুরেন্সের আওতায়ও এনেছি। দেশকে ভালোবেসেই সবাই স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন।
যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা সহায়তা করায় লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা সহজ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, শুধু ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। এই কাজে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা যেভাবে সহায়তা দিচ্ছেন তা প্রশংসনীয়।
যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য প্রশংসা ঝরলো সিটি মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের কণ্ঠেও। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের তরুণরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন অন্যদের জন্য তা অনুকরণীয়। শুধু করোনা মোকাবিলা নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের সহায়তা করেন। এটি আশাব্যঞ্জক।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট