চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাদেকের দিন বদলের গল্প!

নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকুণ্ড

৪ জুলাই, ২০২১ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

রাত ৯টা বাজলেই কলেজ রোডের মুখে এসে দাড়ায় একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান। তা দেখে এগিয়ে আসেন কিছু মানুষ। মধ্য বয়সী দোকানি হাসি মুখে চা তুলে দেন তাদের হাতে। বেশিরভাগ ক্রেতা শুধু চা খেয়েই তৃপ্ত হন। কেউবা আবার চায়ের সাথে জমিয়ে বিস্কিট, কেক কিংবা ঝালমুড়ি মুখে দিয়ে খিদে মিটান।
সীতাকুণ্ড পৌরসদরের মন্দির সড়ক (কলেজ রোড) এর মুখে এভাবেই দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে প্রতিদিন রাতে চলছে একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান ‘সাদেক নাইট স্টোর’। এর মালিক মো. সাদেক আলী সীতাকুণ্ড পৌরসদরের চৌধুরীপাড়ার মৃত নুরুল আলমের ছেলে। রাতে দোকান করার পাশাপাশি দিনে মাইকিংয়ে প্রচারণার কাজ করেন তিনি। তবে বছরের বেশিরভাগ সময়েই তার সংসার চালানোর মূল হাতিয়ার ভ্যানের উপর গড়ে তোলা রাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানটি। কথায় আছে ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবে দেখা, দেখা হবে বিজয়ে’। সাদেকেরও তাই হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ এই দোকান করেই তিনি এখন সচ্ছল। নিজ বাড়িতে করেছেন পাকা দালান ঘর। দুই ছেলে ও স্ত্রীর যাবতীয় ভরণ-পোষণ ও ছেলেদের পড়াশুনা সবই করছেন তিনি।
জানা যায়, সাদেক নাইট স্টোর একটি ছোট্ট ভ্রাম্যমাণ দোকান হলেও এর ক্রেতা প্রচুর। সাদেকের হাতে তৈরি স্পেশাল চা খেতে খুবই সু-স্বাদু হওয়ায় সন্ধ্যায় নাস্তার পর অনেকেই এই চা খাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
এ দোকান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাদেক নাইট স্টোরের মালিক সাদেক (৫৭) হেসে বলেন, বেশিরভাগ মানুষ যখন দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন তখন দোকান খুলি আমি। রাতে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে থাকা সিকিউরিটি গার্ড, টহলরত পুলিশ সদস্য, বাজারের নৈশপ্রহরীরা আমার কাছে আসেন চা পান করতে। এছাড়া সীতাকুণ্ডে মধ্যরাতে অনেক পর্যটকের আগমন হয়। তারাও আসেন।
সাদেক বলেন, ১৯৮১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তারপর আর পড়া হয়নি। সময়ের প্রয়োজনে একসময় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ইত্যাদি চালিয়ে সংসার চালাতাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন হবার পর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ২০০৪ সালে গাড়ি চালানো ছেড়ে দিই।
অন্যদিকে সাদেকের গলাও ভালো। তাই দিনে তাকে দিয়ে প্রচারণার কাজ করেন অনেকে। আর একদিন প্রচারণায় বের হলে এক-দেড় হাজার টাকা আয় হয়। এভাবে তিনি এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি, মেলার প্রচারণা, ডাক্তার বসার, কোরবানের হাট, নির্বাচনী প্রার্থীর প্রচারণা, শোক সংবাদ, মাহফিলের প্রচারণাসহ বিভিন্ন প্রচারনা কাজে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। কিন্তু মাহফিল ও শোক সংবাদে কোন টাকা চান না তিনি। কেউ স্বেচ্চায় কিছু দিলে নেন। সব মিলিয়ে স্ত্রী সুফিয়া বেগম, ছেলে মারুফ (২০) ও শারুফ (১৩) নিয়ে চারজনের সংসার চলে যাচ্ছে ভালোই। এ আয় থেকেই ছেলেদের পড়াশুনা করাচ্ছেন। বাড়িতে করেছেন পাকা দালান। সাদেক বলেন সৎ পথে থেকেছি আল্লাহ ভালো রেখেছেন। তেমন বড় কোন ঋণ নেই আমার।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট