চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোরাল রীফে স্লট কিনে মাথায় হাত

ইফতেখারুল ইসলাম

৪ জুলাই, ২০২১ | ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

‘কক্সবাজারে চার লাখ টাকায় ফাইভ স্টার হোটেলের মালিকানা’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে কোরাল রীফ প্রপার্টিজের হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজে বিনিয়োগ করেন প্রায় তিন হাজার গ্রাহক। বিনিয়োগের এক দশকেও লাভের মুখ দেখেননি তারা। এমনকি ক্ষতিপূরণও দেয়নি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। ৪/৫ বছরে বিনিয়োগ উঠে আসাসহ লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা টানলেও চুক্তির নির্ধারিত সময়ে স্লøট হস্তান্তরে ব্যর্থ হয়েছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি। তবে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের দাবি – তারা চুক্তির বাইরে কিছুই করেননি।
এ নিয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘চট্টগ্রাম স্লট ওনার্স এসোসিয়েশন।’ সংগঠনের সভাপতি সামশুল আনোয়ার খান পূর্বকোণকে বলেন, চুক্তিপত্রে ৬০ শতক সম্পত্তিতে শেয়ার ওনারশিপ ভিত্তিতে ১৬ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে স্লট ওনারদের হস্তান্তরের কথা রয়েছে। তাতে ব্যর্থ হলে প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে ডেভেলপার কোম্পানি। কিন্তু তারা কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বরং বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখে চুক্তিপত্রে লিখিত সাইজের চেয়ে ছোট আকারের রুম করেছে। হোটেলে মোট ২৩৬টি স্যুট নির্মাণ করে একটি স্যুটকে সর্বোচ্চ ১২টি স্লটে ভাগ করে মোট ২৮৩২টি স্লট কোনো চেইন হোটেল ম্যানেজমেন্ট দ্বারা এটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত থাকলেও এখন ‘গ্র্যান্ড হেরিট্যাজ লিমিটেড’ নামক কোম্পানি গঠন করে পরিচালনা করছে। সেখানে স্লট ওনার্সদের প্রতিনিধি নাম দিয়ে নিজেদের লোক নিয়েছে। ২০১৫ সাল হতে আজ পর্যন্ত হোটেলের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব দেয়নি। এমনকি স্লটের সম্পূর্ণ টাকা গ্রহণ করেও অনেককে রেজিস্ট্রি দেয়নি। স্লট ওনারদের প্রাপ্য বুঝিয়ে না দিয়ে নতুন কৌশলে কর্পোরেট প্রিমিয়াম ও ডিলাক্স প্যাকেজ নাম দিয়ে রুম বরাদ্দ দিচ্ছে। জমির আনুপাতিক রেজিস্ট্রেশনে সাফ কবলায় আজীবন মালিকানা। বছরে ৩০ দিন ৩০ রাত অবস্থান বা ভাড়ার মাধ্যমে মুনাফার সুযোগ। ৪ লাখ টাকায় ৩০ লাখ টাকার সমান রিটার্ন এমন সব চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ফেঁসে গেছেন তারা। চুক্তিপত্রে সর্বোচ্চ ৯১৩ বর্গফুট ও সর্বনিম্ন ৬১৪ বর্গফুট কক্ষ নির্মাণের কথা থাকলেও তারা কোন শর্তই পূরণ করেনি। গত এক যুগে তাদের কেউ কেউ রিটার্ন পেয়েছেন গড়ে ১৬ হাজার টাকা। তাও সবাই পাননি। কেউ রেজিস্ট্রেশন নিতে চাইলে ৩৫ হাজার টাকা দাবি করে। সেই টাকা পরিশোধ করেও রেজিস্ট্রির জন্য ঘুরতে হয়। চুক্তির শর্ত ভেঙ্গে তারা কয়েকটি ফ্লোর থেকে মিলিয়ে একটি স্যুটের সমান বর্গফুট স্লট রেজিস্ট্রি দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় অনেক বিষয় নিয়ে আপত্তি উঠে। পরবর্তী সাধারণ সভার আগে এসব আপত্তি নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা না করেই আগামী ৯ জুলাই ভার্চুয়াল সাধারণ সভা ডেকেছে। মূলত স্লট ওনারদের তোপের হাত থেকে রক্ষা পেতেই তারা এই কূটকৌশল করছে। ভার্চুয়ালি সাধারণ সভা না করার জন্য তাদেরকে উকিল নোটিশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মামলা করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সদস্যদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে সদস্য ফি নিয়েছেন। যা দিয়ে একটি স্থায়ী অফিস করার কথা ছিল। সেই টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখন তারা বলছেন নির্বাচনে খরচ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোরাল রীফ প্রপার্টিজ লি. এর ডিরেক্টর অপারেশন মো. কামরান দিদার চট্টগ্রাম স্লট ওনার্স এসোসিয়েশনের অভিযোগকে অসত্য উল্লেখ করে বলেন, ২০১২ সালে হোটেলের নির্মাণকাজ যখন শেষ পর্যায়ে, তখন বেস্ট ওয়েস্টার্ন ইন্টারন্যাশনালের একটি টিম কক্সবাজার পরিদর্শনে আসে। তারা হোটেলটি পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করলে কোনো কোনো ফ্লোরের নকশা পরিবর্তন করে বেস্ট ওয়েস্টার্ন ইন্টারন্যাশনালের সাথে সাব-লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট এবং প্রফেশনাল সার্ভিস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করা হয়।
ক্ষতিপূরণ না দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ হোটেলের হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়। তিনি দাবি করেন, সেখানে প্রায় ১২০০ স্লটওনার উপস্থিত ছিলেন। ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হোটেলটি স্লট ওনারদের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২০১৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী এই সময় বাড়ানো হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ১৪ মার্চ নির্বাচন হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ৬ জন স্লটওনার ‘কোরাল রিফ রহমান হেরিটেজ ওনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনে’-এর সদস্য হন। স্লটের রেজিস্ট্রেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২২০৮টি স্লটের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। প্রতিটি স্লটের গড় আয়তন ৬০ বর্গফুট, সে হিসেবে কোরাল রিফ ১,৩২,৪৮০ বর্গফুটের রেজিস্ট্রেশন প্রদান করেছে। ১৬৯টি স্লটের রেজিস্ট্রেশন বাকি আছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, ২০১৫ সাল হতে আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশাদার অডিট ফার্মের মাধ্যমে পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন হোটেল পরিচালনার আয়-ব্যয়ের হিসাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পরিচালনা বোর্ড ৭ কোটি টাকা স্লট ওনারদের মাঝে প্রতি বর্গফুটের ভিত্তিতে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। আয়-ব্যয় হিসাবের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভ্যন্তরীণ অডিটও করা হয়। সদস্য ফি ও খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১১২০টি স্লটের বিপরীতে ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা হয় যা প্রতিনিধি নির্বাচনে খরচ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট