চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহেশখালে বিলীনপ্রায় সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক 

৪ জুলাই, ২০২১ | ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বিয়ের দিন সাম্পানে চড়ে মহেশখাল দিয়ে স্বামীর ঘরে প্রথমবার এসেছিলেন চারুবালা। সে প্রায় তিন যুগ আগের ঘটনা। সময়ের ব্যবধানে চারুবালাদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। কাঁচাঘর ছেড়ে পাকা ঘরে উঠেছেন অনেকেই। কিন্তু এখনো যোগাযোগের কোনো সুব্যবস্থা হয়নি দক্ষিণ কাট্টলী জেলেপাড়ার এ বাসিন্দাদের। পাশাপাশি ময়লা আর্বজনার স্তূপ ও দখলে-বেদখলে হারিয়ে গেছে মহেশখাল। খালের পাশে যে প্রধান সড়কটিতে একসময় ভারী যানবাহন চলাচল করতো বর্তমানে তা বিলুপ্তপ্রায়। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এর বিভিন্ন অংশ মিশে গেছে খালের সাথে। ফলে শুধু বর্ষা নয়, বছরজুড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলেপাড়ার কয়েক হাজার অধিবাসীকে।
গতকাল সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে মহেশখালের দক্ষিণ কাট্টলীর জেলেপাড়া এলাকার পুরো অংশই ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে শেষ প্রান্তের জহুর আহমেদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে কিছু অংশে খালের দু’পাশে গাইডওয়াল দেয়া হয়েছে। শেষ প্রান্তে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন ফিডার রোডের নিচে পুরো খালটি বন্ধ। দুটি পাইপ দিয়ে পুরো খালের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে পথে একসময় দাপিয়ে বেড়াতো ইঞ্জিনচালিত নৌকা সে পথটি এখন যেন সুয়ারেজ পাইপে বন্দী। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেও তলিয়ে যাচ্ছে এলাকার নি¤œাঞ্চল। বিটাক থেকে ফইল্ল্যাতলী বাজার পর্যন্ত খালের পাশ দিয়ে একটি সুপ্রশস্ত পাকা সড়ক ছিল। যে পথে এলাকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালামাল বোঝাই ভারী যানবাহনও চলাচল করত, সংস্কারের অভাবে গত কয়েকবছরে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে সড়কটি। এখন গাড়ি নয়, হেঁটে চলাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার ও অন্যান্য মালামাল আনা নেওয়া করতে হয়।
স্থানীয় নগর দাশ পূর্বকোণকে বলেন, গত তিন বছর ধরে অমানবিক জীবন পার করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মহেশখাল এখন মৃত। দুই দশক আগেও এ খাল দিয়ে জেলেরা নৌকা নিয়ে বাড়ি ফিরত। পাশের সড়কটিও সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। জনপ্রতিনিধিদের কাছে এ নিয়ে বারবার অভিযোগ করেও লাভ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। সামান্য বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে ঢুকে পড়ে খালের ময়লা আবর্জনাবাহী পানি।
দীর্ঘদিন ধরে জমা ময়লা আবর্জনায় মহেশখালের এ অংশ এখন পরিপূর্ণ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এসব ময়লা অপসারণে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাইল। তিনি বলেন, গত সপ্তাহেই পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানো হয়েছে এখানে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে এসব ময়লা-অবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে না। রাস্তার সংস্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিডিএর চলমান উন্নয়ন প্রকল্প শেষ না করলে রাস্তার উন্নয়ন কাজে হাত দেয়া সম্ভব নয়।
খবর নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে ডা. কামিনী সড়ক থেকে ফইল্ল্যাতলী বাজার এলাকা পর্যন্ত খালটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এর ধারাবাহিকতা না থাকায় কোন সুফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। বর্তমানে সিডিএর উন্নয়ন প্রকল্পে জেলেপাড়ার এ অংশে এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি। অন্যদিকে, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেই আন্তরিকতা, আছে অজুহাত। ফলে কবে নাগাদ এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ শেষ হবে তা জানা নেই কারো।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট