চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ডোজ: লক্ষাধিক মানুষ সংশয়ে

ইমাম হোসাইন রাজু

১৯ মে, ২০২১ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

ভ্যাকসিনের জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রামসহ পুরো দেশেই প্রবল হাহাকার। প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আট সপ্তাহ কিংবা দুই মাস পার হলেও দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন নিবন্ধিত চট্টগ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। কেন্দ্রে কেন্দ্রে টিকা প্রত্যাশীদের ক্ষোভও বিরাজমান। এমন বাস্তবতার মধ্যেই চট্টগ্রামে নতুন করে আরও দুই হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে।

এছাড়া বিভাগের জন্য নতুন করে আরও ৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন আসছে আজ-কালের মধ্যেই। যাতে অনেকটাই সংকট নিরসন হবে, এমনটাই আশাবাদ স্বাস্থ্য বিভাগের। যদিও লক্ষাধিক মানুষকে সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন প্রদান এখন এক প্রকার চ্যালেঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার পার্শ্ববর্তী জেলা ফেনী থেকে নতুন করে দুই হাজার ডোজ ভ্যাকসিন আনা হয় চট্টগ্রামে। যা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কোল্ড স্টোরে মজুদ রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বিভাগের জন্য ৯ হাজার ডোজ পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে চার হাজার ডোজ পাবে চট্টগ্রাম। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ।

চট্টগ্রামে করোনা টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ২৭৪ জন। যাদের মধ্যে প্রথম  ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৬ জন। এরমধ্যে গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭২ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেতে অপেক্ষমান আছেন ১  লাখ ১৮ হাজার ৭৯৪ জন। বিপরীতে গত রবিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে টিকা মজুদ ছিল মাত্র ১ হাজার ১০৪ ভায়লা বা ১১ হাজার ৪০ ডোজ ভ্যাকসিন। যারমধ্যে নতুন করে গেল সোমবার দুই হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে আরও চার হাজার ডোজ টিকা পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা। ইতোমধ্যে পুরো বিভাগের জন্য ৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। যা আজ-কালের মধ্যে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন,  ফেনী জেলা থেকে সোমবার ২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন আনা হয়েছে। যা নগরীরসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন যা ভ্যাকসিন আছে, তা আরও কিছুদিন চলবে। তবে যাদের টিকা পাওয়ার জন্য এসএমএস আসবে, তাদের এখন টিকা দেয়া হবে। তবে আশা করছি, নতুন ভ্যাকসিন আসলে সংকট কেটে যাবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, কেন্দ্র থেকে নতুন করে চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আরও ৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে চার হাজার ডোজই পাবে চট্টগ্রাম জেলা। তবুও ইতোমধ্যে অন্য জেলা বা কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে সংকট মেটানো হচ্ছে। যেখানে অতিরিক্ত ভ্যাকসিন রয়ে যাচ্ছে, ওই কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে তা নিয়ে আসা হচ্ছে। আশা করছি, সামনে আরও কিছু ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এছাড়া নতুন করে দেশে ভ্যাকসিন আসলে সংকট নিরসন হবে।

উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে প্রথম ডোজের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় ডোজের টিকা  দেওয়া শুরু হয় এর আট সপ্তাহ পর ৮ এপ্রিল থেকে। টিকার সংকট দেখা দেয়ায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম  ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়।

দেশে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে। যা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু গত মার্চ মাসের শেষ দিকে সেরামের টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশে টিকা পেতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামেও। ইতোমধ্যে সংকট পড়েছে টিকার। যদিও সংকট পড়ার মধ্যেই অন্য জেলা ও বিভিন্ন কেন্দ্রের বরাদ্দ থেকে নিয়ে এসে এখন পর্যন্ত টিকাদান কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে তাও ঠিক কতদিন পর্যন্ত চলবে, তা পুরোপুরি অনিশ্চিত।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও নগর ভ্যাকসিন প্রধান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘সীমিত পরিসরে এখন পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে  মঙ্গলবার (গতকাল) নতুন করে এক হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। যাদের এসএমএস আসবে, শুধুমাত্র তাদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তাও সীমিত আকারে আমরা চালিয়ে যাব। এছাড়া ভ্যাকসিন পাওয়ার প্রেক্ষিতে কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট