চট্টগ্রাম সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘মসজিদ আল রাহমাহ’ থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে আজানের ধ্বনি

মিনারুল হক, বান্দরবান

৪ মে, ২০২১ | ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

ব্রিটিশ আমলের ১৮শ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ের কথা। সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী ছোট একটি জায়গায় তৎকালীন সময়ে বান্দরবান বাজার গড়ে উঠেছিল। বোমাং রাজার এলাকায় হওয়ায় এটি অনেকের কাছে বোমাং থং নামেও পরিচিতি ছিল। পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল সবচেয়ে বেশি। পার্শ^বর্তী সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকার হাতেগোনা কয়েকজন বাঙালি মুসলিম ব্যবসায়ী এলাকায় তখন বসতি গড়ে তুলেন।

বর্তমান বান্দরবান বাজারের মূল কেন্দ্র বাজার মসজিদ এলাকায় মুসলিম ব্যবসায়ীরা একটি মসজিদ স্থাপন করতে চাইলে তৎকালীন বোমাং রাজা বাধা দেন। পরে সাঙ্গু নদীর পূর্ব তীরে বর্তমান সেনানিবাস এলাকায় পাহাড়ের উপর প্রথম মসজিদ স্থাপন করে আজান দেয়া হয়। মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল প্রথম মসজিদটি। আর এই মসজিদ থেকেই আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে এই পাহাড়ি অঞ্চলে। যার বর্তমান নাম মসজিদ আল রাহমাহ। এর আগে এটি আর্মি মসজিদ বা বান্দরবান জোন সদর জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিত ছিল।

স্থাপত্য নির্মাণশৈলীতে এটি অন্যান্য মসজিদগুলোর মতোই সাধারণ। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলের পাহাড়ি অধ্যুষিত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এই মসজিদটির নির্মাণের ইতিহাস এখনো অনেকেরই অজানা। বর্তমানে সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী বান্দরবান সেনানিবাসের প্রবেশদ্বারে এই মসজিদটির অবস্থান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই মসজিদটি এখন পরিচালনা করছে বান্দরবান সেনাবাহিনীর সদর জোন। প্রায় আড়াইশ মুসল্লী একসাথে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন। বান্দরবানের প্রবীণ মুরব্বি আবু তাহের চৌধুরী এই মসজিদটি সম্পর্কে জানান, ১৮’শ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া এলাকা থেকে

দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, তার ভাই মিয়াজান চৌধুরী, সুয়াজান চৌধুরী ও খায়রুজ্জামান চৌধুরী এ অঞ্চলে ব্যবসা করতে আসেন। তাদের মতো আরও অনেক বাঙালি মুসলমান ব্যবসায়ী অঞ্চলে ব্যবসা করতে আসতেন। বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছিল সেই সময়। মুসলিম ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা বর্তমান বাজার মসজিদ এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে চাইলে তৎকালীন বোমাং রাজা বাধা প্রদান করে।

সে সময় দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী,  মিয়াজান চৌধুরী ও তার ভাইয়েরা সাঙ্গু নদীর পূর্ব তীরে ১৫ একর ৮৫ শতক জায়গা বন্দোবস্তি করেন। মুসলিম ব্যবসায়ীদের নামাজের সুবিধার্থে বর্তমান সেনানিবাস মসজিদের ওই এলাকায় মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় প্রথম মসজিদ। পরে ক্রমে মুসল্লী বাড়তে থাকে ওই মসজিদটিতে। দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী ঐ প্রথম মসজিদটিতে ১৬ বছর ইমামতি করেন।

বান্দরবানের প্রবীণ মুরুব্বিরা জানিয়েছেন, সে সময়ে এক রমজানে তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য বোমাং রাজার অনুমতিক্রমে বর্তমান বাজার মসজিদ এলাকায় একটি ইবাদত খানা নির্মাণ করেন মুসলিম ব্যবসায়ীরা। রমজানের পর হাতি দিয়ে ঐ এবাদত খানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে ওই হাতি ব্যর্থ হয়। ওই এবাদত খানাই এখন ঐতিহ্যবাহী বাজার মসজিদ।

বান্দরবান প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ওসমান গনি জানান, বান্দরবান প্রথম মসজিদটির ইতিহাস অনেকের কাছেই অজানা। তৎকালীন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শত বাধা পেরিয়ে মসজিদ স্থাপন করে প্রথম আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে দেয় এ পাহাড়ি অঞ্চলে। নদীপথে সে সময়ে সমতল এলাকার মুসলিম ব্যবসায়ীরা যাত্রাপথে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। বান্দরবানের অনেক ইতিহাস রয়েছে এই প্রথম মসজিদটিকে ঘিরে।

সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সেনাবাহিনীর ২ বেঙ্গল এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ারুল আজিম এই প্রথম মসজিদটির সংস্কার করেন। পরে ২০১৭ সালে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন এই মসজিদটির আধুনিকায়ন করে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি’র উপস্থিতিতে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এই মসজিদ উদ্বোধন করেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট