চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

আমার সামনেই হারুনকে হত্যা করে শিবিরের নাছির: ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ মার্চ, ২০২১ | ৭:৪২ অপরাহ্ণ

নিজের হত্যাচেষ্টা মামলার দ্রুত বিচার চাইলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বলেন, ২৯ বছর আগে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশরসহ দু’জনকে হত্যা করে। সেই সময়ে আমাকেও হত্যাচেষ্টা করা হয়।

সম্প্রতি সে ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শিবির ক্যাডার নাছিরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে না আসা ও সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে দেয়ায় মঙ্গলবার (৯ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় `ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন হত্যাচেষ্টা মামলা, শিবির ক্যাডার নাসিরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসেনি কেউ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এ কারণে আমার উপর একটি দায়িত্ব বর্তায় এটাকে ক্লিয়ার করে দেয়া দরকার। ৮ মে ১৯৯২ সালে তখন বিএনপি ক্ষমতায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন জামায়াত-শিবিরকে লালন-পালন ও উৎসাহিত করেছে।

তিনি বলেন, সেদিন ফটিকছড়ি আজাদী বাজার এলাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগ দিয়ে ফিরছিলাম। আমার সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন ভুজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশর। সেদিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত মো. নাছির উদ্দিনের (শিবির নাছির) নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়। নাছির নিজেই ব্রাশ ফায়ার করে হারুন বশরকে হত্যা করে। এ ঘটনায় তিনি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার চোখের দেখা তখন, আমি ফটিকছড়িতে ছাত্রলীগের একটি সম্মেলনে গিয়েছিলাম। যথাসময়ে সম্মেলন শুরু হয়, দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ করে শিবিরের একটা দল, সশস্ত্রবাহিনী ট্রাকে এবং বাসে করে এসে সম্মেলনে আক্রমণ চালায়। এ সময় ফায়ারিং হয়, সেখানে আমাদের ছাত্রলীগের একজন কর্মী জমির উদ্দিন মারা যায়। এরপর ছোটাছুটি শুরু হয়। আমি রফিকুল আনোয়ারসহ আমরা ওসির রুমে বসলাম। আমার চোখের সামনে দেখলাম, পুলিশবাহিনীর সামনে বাসে-ট্রাকে করে অস্ত্র হাতে নিয়ে দুপুরে তারা এ হত্যাকাণ্ড করে চলে যাচ্ছে। পুলিশ ফোর্স কিছু করেনি।

তিনি আরও বলেন, এরপর আমাদের সম্মেলন পণ্ড হয়ে গেলো, আমরা নিহতদের জানাজার নামাজ শেষে হাটহাজারী এড়িয়ে মোহাম্মদ তকির হাট হয়ে রাউজান হয়ে চট্টগ্রাম আসার পরিকল্পনা করলাম। আমার সঙ্গে হারুন বশর নামে একজন আমাদের নেতা গাড়িতে ছিলো। আমি পঙ্গু হিসেবে তাকে সামনে বসাই। সন্ধ্যার পরে মাগরিবের নামাজ শুরু হবে তখন, আমার গাড়ি যখন মোহাম্মদ তকির হাট পৌঁছালো, আমি দেখে আশ্চার্য হয়ে গেলাম। চারদিকে সেইম ড্রেসে ২০-২৫ জন উইথ আর্মস আমার গাড়ি ঘিরে ফেললো। মিনিটের মধ্যে তারা আমার গাড়ি ভাঙচুর করলো।

মোশাররফ বলেন, আমি গাড়ি খুলে বের হলাম, বললাম আমার নাম ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। তোমরা কি চাও। এসময় তারা গাড়ির সামনে বসা হারুন বশরকে টেনে নামালো। নামিয়ে তাকে আমার গাড়ির চাকার উপর বসালো। ব্রাস ফায়ার করবে, আমি সামনে দাঁড়ালাম। বললাম সে তো পঙ্গু, তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না ‘ডোন্ট কিল ইট, কিল মি’। তারা আমাকে সরিয়ে দিলো, আমার সামনেই তাকে গুলি করে হত্যা করে শিবির ক্যাডার নাছির। চাক্ষুস আমি দেখলাম। সে আমার গাড়ির চাকার উপরেই শুয়ে পড়রো। এরপরে নাছির আমার বুকে রাইফেল তাক করে বলে- ‘আমার নাম নাছির’।

তিনি বলেন, আমি বলতে চাই- এ মামলায় আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। আদালতে শিবিরের নাছিরকে আমি চিহ্নিত করেছি। এই সেই নাছির যে হত্যা করেছে। আদালতের সামনে, জজের সামনে আমি এ কথা বলেছি। এতোক্ষণ যা বললাম, হুবুহু তা বলেছি। এর অতিরিক্ত তো কিছু হতে পারে না। চোখে যেটা দেখেছি সে কারণেই তো তাকে (নাছির) ফাঁসি দেয়া উচিত। এখন বলা হচ্ছে সাক্ষীর অভাবে তার বিচার হচ্ছে না, এটা সঠিক না।

এ মামলায় রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলির দায় থাকলে তাদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ বলেন, কথায় আছে বিচার বিলম্বিত হলে, বিচার পাওয়া দুষ্কর। এটাতেও এই অবস্থা হচ্ছে। আমি আদালতের কাছে বলব, আবারও যদি সাক্ষ্য দিতে হয়, আমি দেবো। দোষীরা যাতে ছাড়া না পায়। আর যারা এ মামলার দায়িত্বে আছেন, তারা যদি যথাযথ দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন তবে পদত্যাগ করা উচিত।

১৯৯২ সালের ৮ মে ফটিকছড়ি আজাদী বাজার ও মোহাম্মদ তকির হাটে পৃথক হামলায় দুইজন নিহতের ঘটনায় মোশাররফের গাড়িচালক ইদ্রিস বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এতে ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছিলো। এর মধ্যে আটজনের মৃত্যুর পর এখন আসামি আছেন ২৩ জন। এর মধ্যে জেলে আছেন শুধু শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন। তিনজন জামিনে আছেন। বাকিরা পলাতক।

পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট