চট্টগ্রাম শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

জোয়ারের পানি যেন ললাট লিখন

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

জোয়ারের পানি যেন ললাট লিখন

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২১ আগস্ট, ২০২০ | ৫:৫৬ অপরাহ্ণ

২০১৫ সালে ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে সময়ে শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে দোকান, গুদামসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দেয়াল নির্মাণের পরও ঠেকানো যাচ্ছে না জোয়ারের পানি। গত দুদিনে বৃষ্টিহীন দিনেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীদের দাবি, রাজাখালী খালে স্লুইস গেট নির্মাণে ধীরগতি ও কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং না করায় জোয়ারের পানি ফুলে ডুবে যাচ্ছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা। শুধু তাই নয়, বৃহত্তর বাকলিয়াসহ নগরীর অর্ধেক অংশে জলাবদ্ধতার একমাত্র কারণ হচ্ছে খাল দুটি বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী ও আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, গত দুই দিনে বৃষ্টি না হলেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জসহ আশপাশ এলাকা। দোকান, গুদামসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, রাজাখালী খালের মোহনায় নির্মাণাধীন স্লুইস গেট নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বাণিজ্যপাড়া ছাড়াও বৃহত্তর বাকলিয়া এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং না করা পর্যন্ত জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী সমাধানের উপায় নেই। নদী ড্রেজিং করা না হলে স্লুইস গেট নির্মাণের সুফল আসবে বলে মনে হয় না।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ৯১ ও ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ২০১৫ সালেও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল ব্যবসায়ীরা। সেই থেকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দোকান ও গুদামের প্রতিবন্ধকতা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।

দেখা যায়, জোয়ার আর জলোচ্ছ্বাসের পানি ঠেকাতে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ আশপাশের সড়ক-উপ-সড়কগুলো উঁচু করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের সামনে প্রতিবন্ধকতা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় তিন ফুট উচ্চতার এই প্রতিবন্ধতা দেয়াল টপকে দোকান-গুদাম তলিয়ে গেছে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও কর্মচারীরা পানি সেচ করে মালামাল রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দুই দিন ধরে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। পানির কারণে ক্রেতা আসতে পারছে না। তাছাড়াও মালামাল বিক্রির চেয়ে রক্ষা করাই দায় হয়ে পড়েছে। তারা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠার উপক্রমপ্রায়। তাছাড়াও পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে পড়েছে অনেক পণ্য। এখন দুদিকেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী ও আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগে জোয়ারের পানি ঘণ্টা-দুই ঘণ্টা স্থায়ী থাকত। এখন দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। সকালে পানি ওঠলে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত স্থায়ী থাকছে।’ তিনি বলেন, স্লইস গেট নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে জোয়ারের পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে। এতে ক্ষতির পরিমাণও বেশি হচ্ছে।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে জোয়ারের পানি ও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পেতে রাস্তায় নেমেছিল ব্যবসায়ীরা। কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং, প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, খালের মোহনায় স্লুইস গেট স্থাপনসহ ৭ দফা দাবিতে বিশাল মানববন্ধন করেছিল ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সিডিএ’র মেগাপ্রকল্পের আওতায় স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু ধীরগতির কারণে দুর্ভোগ-দুর্দশা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এ দুটি প্রধান খাল চাক্তাই ও রাজাখালী। অবৈধ দখল ও ভরাটে সরু হয়ে গেছে খাল দুটি। এছাড়াও খালের তীর দখল করে গড়ে ওঠেছে বরফকল ও হিমাগার এবং মৎস্য অবতরণকেন্দ্র। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, বৃহত্তর বাকলিয়া এবং নগরীর বড় অংশ জলাবদ্ধতায় ডুবে যাচ্ছে। একই সঙ্গে নগরীর অর্ধেক অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘খাল দুটি ভরাট ও সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশন স্থানীয় সড়কগুলো উঁচু করেছে। এতে দু-এক বছর থেকে জলাবদ্ধতা থেকে অনেকটা রেহাই পেয়েছিলাম। এখন ফের আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দেখা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগাপ্রকল্পের আওতায় খাল দুটিতে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চলে আসলেও বেইস ঢালাইয়ের কাজ হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের ধীরগতির কারণে ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর।

স্থানীয় কাউন্সিলর হাজি নুরুল হক বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও আশপাশের সব সড়ক উঁচু ও পাকাকরণ করা হয়েছে। কিন্তু রাজাখালী খালের তীরে স্লুইস গেট নির্মাণে ধীরগতির কারণে এবার ফের জোয়ারের পানি ঢুকেছে। নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি করেছেন তিনি। অন্যথায় ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাক্তাই ও রাজাখালী খালে স্লুইস গেট, সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে নৌবাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। হাতিয়া, নোয়াখালী, সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে এখান থেকে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্য পরিবহন হয় নৌপথে। খালের মোহনা সরু হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। অনেকটা জোয়ার নির্ভর হয়ে পড়েছে।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট