চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

দেউলিয়া হয়ে যেতে পারেন অনেক রেস্তোরাঁর মালিক

নাজিম মুহাম্মদ

৭ এপ্রিল, ২০২০ | ৯:০৬ অপরাহ্ণ

  • এপ্রিল-মে মাসে আনুমানিক শত কোটি টাকা ক্ষতি
  • আর্থিক সংকটে পড়বেন প্রায় দুই লাখ কর্মচারী

করোনার প্রাদুর্ভাবে নগরীর হোটেল রেস্তোরাগুলোকে দুই মাসে আর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে প্রায় শত কোটি টাকা। এ অবস্থায় অনেকের ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসার আশংকা রয়েছে। নগরীতে বড় ও মাঝারি মাপের প্রায় এক হাজারের কিছু বেশি খাবার হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল বন্ধ থাকলে প্রতিমাসে একজন হোটেল মালিক গড়ে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

আর্থিক সংকটে পড়বেন প্রায় দুই লাখ কর্মচারী। করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অংশ হিসেবে গত ২৬ মার্চ থেকে নগরীর সব ধরনের খাবার হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এরমধ্যে চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্ধের সময় বাড়ানো হয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে। এতে আগামী মে মাসেও হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে। সব মিলিয়ে দুই মাসে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও মিনি চাইনিজ ও দেশি-বিদেশি খাবার বিক্রি করে এমন রেস্টুরেন্টও রয়েছে পাঁচ শতাধিক।

গত ২৯ মার্চ দামপাড়া পুলিশ লাইন্স মেট্রোপলিটন সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে নগরীর সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের বৈঠকে সাত শর্তে হোটেল রেস্তোরাঁ খোলা রাখতে বলা হয়। শর্তগুলো হলো- শুধু খাবার সংগ্রহ করে বাসায় পার্সেল নেয়া যাবে; রেস্টুরেন্টে বা দোকানের ভেতর বসে খাবার খাওয়া যাবে না; স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রেস্টুরেন্টে আসা-যাওয়া করতে হবে; খাবার সংগ্রহের সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়াতে হবে; রেস্টুরেন্টে বা খাবার দোকানকে কেন্দ্র করে কোনরূপ আডডা চলবে না; খাবার তৈরি থেকে বিক্রি পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে, প্রত্যেক খাবারের দোকানের প্রবেশপথে হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার ব্যবস্থা রাখতে হবে ও খাবার পার্সেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

হোটেল মালিকরা জানান, নিজেকে নিরাপদ রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে আসলে সেভাবে খাবার হোটেলের ব্যবসা কখনো সম্ভব নয়। এতে আর্থিক ক্ষতি আরো বেশি হবে। নগরীর একাধিক হোটেল মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় দেড় হাজারের মতো খাবারের হোটেল রয়েছে। এরমধ্যে বড় ও মাঝারি মাপের হোটেল রয়েছে প্রায় এক হাজার। এসব হোটেলের প্রতিমাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ রয়েছে। যেমন- হোটেল বন্ধ থাকলেও মাসিক ভাড়া, কর্মচারীদের বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, ন্যূনতম বিদ্যুৎ বিল, ওয়াসার বিল, ভ্যাট খরচ না দিয়ে থাকা যাবে না। এর বাইরে প্রতিটি খাবার হোটেল বয় ছাড়াও কিছু কর্মচারী থাকে যাদেরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখা হয়। হোটেল বন্ধ থাকলেও তাদের বেতন না দিয়ে থাকা যাবে না। যেমন বাবুর্চি, ম্যানেজার, বিভিন্ন নাস্তা তৈরির কারিগর- এদের বেতন দিতে হবে। নয়তো ওরা অন্যত্র চলে যাবে। পরে তাদের আর পাওয়া যাবে না।
নগরীর স্টেশন রোডের সত্ত্বাধিকারী নিজাম হোটেলের মালিক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দিয়ে হোটেল খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসার। কারণ হোটেল মালিকদের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি চিন্তা করে হয়তো প্রশাসন এমন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু রেস্তোরাগুলোতে অধিকাংশ লোকজন বসে খাবার খায়। পার্সেল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খুবই কম। যে পরিমাণ পার্সেল বিক্রি হয় তাতে হোটেলের খরচ পোষাবে না।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক নগরীর বান্ডেল রোডের হোটেল সোনালীর মালিক আবদুল হান্নান (বাবু) জানান, গত মার্চ শেষ সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রামের প্রায় এক হাজারের অধিক হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। এতে কার্যত বেকার হয়েছে প্রায় দুই লাখ কর্মচারী। যাদেরকে এখনো বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মাসের পর মাস চলতে থাকলে হোটেল মালিকদের পক্ষে কর্মচারীর বেতন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

আবুদল হান্নান বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে এপ্রিল মাসে হোটেল বন্ধ থাকবে। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় রমজানে এমনতিই খাবার হোটেল বন্ধ থাকে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাস জুড়ে থাকবে রমজান। অনেকে ঐতিহ্য ধরে রাখতে ইফতারি বিক্রি করে। সারাবছর ব্যবসা করে রমজান একমাস আর্থিক ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে তা পুষিয়ে উঠা যায়। বর্তমান পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ দুই মাসে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট