চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

চীনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে সহিংস বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৩:৩৪ অপরাহ্ণ

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শানশি প্রদেশের পুচেং শহরে এক কিশোরের মৃত্যুতে সহিংস প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। যাচাই করা ভিডিওর মাধ্যমে এ খবর নিশ্চিত করেছে বিবিসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে বিভিন্ন জিনিস নিক্ষেপ করছেন এবং পুলিশ কিছু প্রতিবাদকারীকে মারধর করছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২ জানুয়ারি স্কুলের ছাত্রাবাসে দুর্ঘটনায় পড়ে ওই কিশোর মারা যায়। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে, ঘটনাটি “ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা” করা হয়েছে।

এই অভিযোগের পর দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং কয়েক দিন ধরে তা চলে। তবে, সপ্তাহের শুরুর দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর থেকে পুচেংয়ে নতুন কোনো বিক্ষোভের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

২০২২ সালের হোয়াইট পেপার প্রতিবাদের পর থেকে চীনা কর্তৃপক্ষ জনসমাবেশ নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক। ওই প্রতিবাদগুলোতে কোভিড নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছিল।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পুচেংয়ের বিক্ষোভ নিয়ে সম্পূর্ণ নীরব। বিক্ষোভের কোনো ভিডিও বা তথ্য চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও তা দ্রুত সেন্সর করা হয়েছে। সাধারণত কর্তৃপক্ষের কাছে এসব ঘটনা সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচিত হয়।

তবে, চীন থেকে বেশ কিছু ভিডিও ফাঁস হয়ে এক্স-এ পোস্ট করা হয়েছে। বিবিসি নিশ্চিত করেছে, এসব ভিডিও পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারে ধারণ করা হয়েছে এবং বিক্ষোভ শুরুর আগের কোনো সংস্করণ অনলাইনে পাওয়া যায়নি।

বিবিসি পুচেং সরকারের প্রচার দপ্তরের এক প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিক্ষোভের ঘটনা অস্বীকার করেন। তবে, গণমাধ্যম সংক্রান্ত প্রশ্নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সপ্তাহের শুরুতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহত কিশোরের পদবি ডাং এবং তিনি পুচেং এডুকেশন সেন্টারের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার রাতে ডাং অন্য শিক্ষার্থীদের ডরমেটরিতে কথা বলার কারণে ঘুম থেকে উঠে তাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে একজন স্কুল কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। কিছুক্ষণ পর ডাং-এর মৃতদেহ ছাত্রাবাসের নিচে খুঁজে পায় আরেকজন ছাত্র।

বিবৃতি অনুযায়ী, ঘটনাটি “স্কুলে উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়ার একটি দুর্ঘটনা”। পুলিশ তদন্ত ও ময়নাতদন্ত করেছে এবং এটিকে “অপরাধমূলক ঘটনা নয়” বলে উল্লেখ করেছে।

তবে, অনলাইনে অভিযোগ উঠছে, ঘটনাটির পেছনে আরও কিছু রয়েছে এবং স্কুল ও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছে।

প্রমাণ ছাড়াই একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ডাং হয়ত সহপাঠীদের হেনস্তার পর আত্মহত্যা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পরিবারের অনিশ্চিত বক্তব্যও ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে ডাং-এর শরীরের আঘাতের ধরন কর্তৃপক্ষের বিবৃতির সঙ্গে মেলেনি এবং তাদের দীর্ঘ সময় ধরে মরদেহ পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়নি।

এই অভিযোগগুলো পুচেংয়ের বাসিন্দাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং শত শত লোকের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ শুরু হয়।

চীনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিয়ে জনগণের মাঝে ব্যাপক সংবেদনশীলতা তৈরি হয়েছে। পূর্বে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনাগুলোও বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত মাসে, চীনের একটি আদালত দুই কিশোরকে তাদের সহপাঠীকে হত্যার দায়ে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড দিয়েছে।

বিবিসি নিশ্চিত করেছে, সোমবার ধারণ করা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, মানুষ স্কুলের প্রবেশপথে ফুল এবং উপহার রেখে ঐতিহ্যবাহী শোক অনুষ্ঠান পালন করছেন। তারা স্কুল ভবনের ছাদ থেকে কাগজ ছুঁড়ে শোক প্রকাশ করেন।

অন্য ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, অনেক তরুণ বিক্ষোভকারী একটি ভবনে হামলা চালিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন এবং চিৎকার করছেন, “আমাদের সত্য বলো”।

একটি যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যায়, একজন স্কুল কর্মকর্তাকে বিক্ষোভকারীরা ঘিরে ধরে চিৎকার করছেন এবং তাকে ধাক্কা দিচ্ছেন। আরও কিছু ভিডিওতে স্কুল কম্পাউন্ডে ধ্বংস হওয়া অফিস এবং প্রবেশপথের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতে দেখা যায়।

অন্য ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের ট্র্যাফিক কোণসহ বিভিন্ন বস্তু পুলিশদের দিকে ছুঁড়তে এবং পুলিশ সদস্যদের লাঠি দিয়ে মানুষকে মারধর করতে দেখা যায়। কিছু বিক্ষোভকারীর মাথা ও মুখে রক্তের চিহ্ন দেখা গেছে।

এরপর কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে তথ্য অল্প। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পুচেংয়ে পুলিশের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যদিও নতুন কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।

কর্তৃপক্ষ জনগণকে “গুজব তৈরি না করতে, গুজবে বিশ্বাস না করতে এবং গুজব না ছড়াতে” অনুরোধ জানিয়েছে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন