কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে দৈনিক ৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ক্ষমতার আরো একটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আগামী ২৮ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তাতে ধাপে ধাপে বাড়বে পানি উৎপাদন ।
প্রকল্পটি পুরো বাস্তবায়নের পর ওয়াসার পানি উৎপাদন হবে দৈনিক ১৩২ কোটি লিটার। বর্তমানে ওয়াসার পানি উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে দৈনিক প্রায় ৪৭ কোটি লিটার।
ওয়াসা সূত্র জানায়, নগরীতে ওয়াসার পানি সরবরাহের প্রধান উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদী। এ দুইটি নদী থেকে বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ৪৬ দশমিক ৬ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করে নগরীতে সরবরাহ করছে। হালদা নদীতে শুষ্ক মওসুমে উচ্চ জোয়ার ও কাপ্তাইবাঁধ থেকে পানির প্রবাহ হ্রাস পেলে সাগরের লবণ পানি প্রবেশ করে এ নদীতে। তাতে হালদার পানির উপর নির্ভরশীল মোহরা পানি শোধনাগার ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের ইনটেক স্টেশন পয়েন্টে পৌঁছে লবণ পানি। এতে শুষ্ক মৌসুমে (এপ্রিল-মে) র-ওয়াটারে ক্লোরাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় প্রায় ৫ হাজার পিপিএম। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ অবস্থায় ওইসময়ে মোহরা এবং শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পায়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং নগরীতে দীর্ঘমেয়াদি পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘লবণাক্ততা পরিহারের লক্ষ্যে মোহরা পানি শোধনাগারের ইনটেক স্থানান্তর এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি গ্রহণ করে ওয়াসা। প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর ওপারে বোয়ালখালী উপজেলার ভাণ্ডালজুড়ি অথবা এর আশেপাশে সুবিধাজনক স্থান থেকে যেখানে লবণাক্ততা ছাড়া সারাবছরই মিঠা পানি পাওয়া যায় সেখানে ইনটেক স্টেশন তৈরি করা হবে। এটির ধারণ ক্ষমতা হবে দৈনিক ৬৩ কোটি লিটার। একই সময়ে মোহরা পানি শোধনাগারের পাশের জায়গায় প্রকল্পের মাধ্যমে আরো একটি দৈনিক ২০ কোটি লিটারের শোধনাগার তৈরি হবে। এরপর নদী থেকে প্রথম পর্যায়ে উত্তোলনকৃত দৈনিক ২০ কোটি লিটার র-ওয়াটার ইনটেক স্টেশন হয়ে নদীর তলদেশের পাইপলাইনের মাধ্যমে আসবে মোহরার নতুন পানি শোধনাগারে। সেখানে পরিশোধনের পর পানি সরবরাহ দেওয়া হবে নগরীতে। পরবর্তীতে নতুন করে আরো শোধনাগার নির্মাণ এবং মোহরা ও মদুনাঘাটস্থ শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে মাধ্যমে পানি ট্রিটমেন্ট করে নগরীতে সরবরাই দেওয়া হবে। আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর তলদেশে দৈনিক ৬০ কোটি লিটারের কনভেন্স পাইপলাইন বসানো হবে। যাতে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে পানি উৎপাদন বাড়ানো যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। যার মধ্যে এক হাজার ৯৫ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। অবশিষ্ট তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক অর্থায়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পের ফিজি- বিলিটি স্টাডির জন্য দাতা সংস্থাটির কাছে ইতোমধ্যে চিঠি প্রেরণ করেছে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ইআরডি (অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগ)। চিঠি পেয়ে সংস্থাটি এটির ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ওয়াসা সূত্র আরো জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপ চালায়। ওই সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে চট্টগ্রামে ২০৩২ সালে দৈনিক ৭৮ কোটি লিটার, ২০৪২ সালে দৈনিক ১২০ কোটি লিটার এবং ২০৫২ সালে দৈনিক ১৩২ কোটি লিটার পানির সম্ভাব্য চাহিদার কথা উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ওয়াসা নিজেদের ইতিহাসে এ যাবতকালের বৃহৎ প্রকল্পটি গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, “ওয়াসা এর আগে কয়েকটি পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এবার নেওয়া আলোচ্য প্রকল্পটি ওয়াসার ইতিহাসে এ যাবতকালের বৃহৎ প্রকল্প। প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে দাতা সংস্থাটি।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দৈনিক ১৪ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতার দুইটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রকল্প দুইটির নাম হচ্ছে- কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও ২। প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়া পোমরা এলাকা থেকে পানি উত্তোলন করে নগরীতে দৈনিক ২৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দিচ্ছে ওয়াসা।
পূর্বকোণ/পিআর