চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বায়েজিদে তিন সহোদরে অতিষ্ঠ পুলিশ-জনতা

নাজিম মুহাম্মদ

২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

তিন সহোদর-সবুজ, সাইফুল ও ফাহিম। তিনজনের বিরুদ্ধেই নগরের পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এলাকায় চাঁদাবাজি, কথায় কথায় মানুষকে মারধর, কুপিয়ে আহত করা যেন তাদের নিত্যদিনের কাজ। তাদের অত্যাচারে জনতা থেকে পুলিশ সবাই অতিষ্ঠ।

 

সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর সাইফুলের অনুসারীরা বায়েজিদের শান্তিনগরে ঝন্টু ও কাশেম গ্রুপের সঙ্গে এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় অনুসারীদের নিয়ে হামলা করে এক পুলিশ সদস্যকে আহত ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন সাইফুলের লোকজন। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সবুজ-সাইফুলকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- সাইফুল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নগর শাখার সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহহ্বায়ক ছিলেন। তবে গত ১২ অক্টোবরের সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন দুই ভাইকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বড় ভাই সবুজ ও সাইফুলকে অনুসরণ করে পিছিয়ে নেই ছোট ভাই ফাহিমও। পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের দায়ে মামলা করায় সাইফুল ও ফাহিম তাদের অনুসারীদের নিয়ে বায়েজিদ থানার ওসির অপসারণের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেন।

 

কয়েকদিন আগেও বাছির নামে এক অনুসারীকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেন ফাহিম ও তার অনুসারীরা। বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, বাছির নামে একজনকে আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করতে গিয়েছিলাম। বাছির তখন মোটরসাইকেলে আসছিল। পুলিশ দেখে বাছির মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে আমিন কলোনি এলাকায় বাছিরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হলে সবুজের অনুসারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে মারে।

 

ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অপরাধে বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে-২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট বায়েজিদ হিলভিউ আবাসিক এলাকায় দুই নম্বর রোডে দিনে-দুপুরে ইমরান হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করেন সাইফুল ও তার ভাই ফাহিম। ইমরানের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৩০ আগস্ট মেয়ে ঈষাকে বাওয়া স্কুলের পাশে কোচিং সেন্টারে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।

 

বেলা ১টার দিকে হিলভিউ আবাসিক এলাকার দুই নম্বর রোডে আরিফ হোটেলের সামনে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাইফুল ও ফাহিম অনুসারীদের নিয়ে ইমরানের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। এরপর ইমরানকে একাধিক ছুরিকাঘাত করেন। ইমরান মারা গেছে মনে করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে লোকজন আহত ইমরানকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জানান- বায়েজিদ বার্মা কলোনী, হিলভিউ, রংপুর কলোনী, ফরেস্ট গেট, মান্দার টিলা, আমিন কলোনী, আলী নগর, নবী নগরসহ পুরো বায়েজিদ এলাকা অনুসারীদের নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন তিন সহোদর- সবুজ, সাইফুল ও ফাহিম।

 

বায়েজিদ থানার ওসি তাদের কথা না শুনলে অনুসারীদের নিয়ে ওসির অপসারণের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেন। একের পর এক ঘটনার পরও তিন সহোদরের কেউ আটক না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, তাদের গ্রেপ্তার করতে প্রতিদিন সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে তিনজনেই আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তাদের বেশ কয়েকজন অনুসারীকে ইতিমধ্যে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট