নগরীর আকবরশাহ নাছিয়াঘোনা এলাকায় জমি কিনে ২০২১ সালে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করেছিল নগর পুলিশ। সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় ফাঁড়ি থেকে পুলিশ সদস্যদের বের করে দেয় স্থানীয় সন্ত্রাসী ২৫ মামলার আসামি নুরে আলম নুরু। সরকার পতনের ১০০ দিন পার হলেও নুরুর ভয়ে ফাঁড়িতে যাচ্ছে না পুলিশ। ফাঁড়ি ঘিরে ওই এলাকায় প্রায় দশ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফাঁড়িতে তালা লাগানো হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এখনও পুলিশ যায়নি সেখানে। আনুমানিক ৩২ বছরের যুবক নুরে আলম স্থানীয় লোকজনের কাছে নুরু নামেই পরিচিত। আকবরশাহ নাছিয়াঘোনা এলাকায় পাহাড় কেটে গড়ে তুলেছিল নিজের সাম্রাজ্য। পাহাড় কেটে প্লট বেচাকেনা, মাদক বেচাকেনা, কাঠপাচারসহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নুরুকে ধরতে নাছিয়াঘোনা এলাকায় অভিযান চালায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সেই সময় অনুসারীদের নিয়ে নুরু হামলা চালায় পুলিশের উপর।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫০ রাউন্ডের বেশি শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল। ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে নুরুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর নুরুর দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছিল পুলিশ। জামিনে বের হয়ে ফের নানা অপরাধে জড়ায় নুরু। ওই এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। থানা থেকে দূরে হওয়ায় পুলিশ দ্রুত যেতে পারে না। আর পাহাড়ি এলাকা ঘিরে আশ্রয়ে থাকে অপরাধীরা। ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের উদ্যোগ নেন তৎকালীন নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ২০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে চার দশমিক ৮৪ শতক নিষ্কণ্টক জমি কিনে নগর পুলিশ। পূর্ব ফিরোজশাহ এলাকার মৃত মাস্টার নুরুল হুদা মিয়ার ছেলে আবদুল হান্নান মিয়ার কাছ থেকে জমিটি কেনা হয়। পাহাড়তলীর সাব-রেজিস্ট্রার আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত দলিলে নগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন নগর পুলিশের তৎকালীন উপ-কমিশনার (এস্টেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এসএম মোস্তাইন হোসেন। স্থানীয় লোকজন জানান, আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বাচ্চুর অনুসারী নুরে আলম নুরু জামিনে বের হবার পর ফের নানা অপরাধে জড়ায়।
নাছিয়াঘোনা এলাকায় ফাঁড়িতে পুলিশ থাকায় কখনও সেদিকে যায়নি। ৫ আগস্ট সরকার পরবর্তন হলে ওইদিন সন্ধ্যায় অনুসারীদের নিয়ে ফাঁড়ি থেকে পুলিশ সদস্যদের বের করে দিয়ে ফাঁড়িটি দখলে নেয় নুরু। আগে আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে চলাফেরা করা নুরু এখন স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। বিএনপির সভা-সমাবেশেও অংশ নেয় নিয়মিত। প্রায় তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও ফাঁড়িতে পুলিশ সদস্যরা ফিরেননি। ফাঁড়িতে পুলিশ না থাকায় স্থানীয় লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
বিষয়টি জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (ওসি) রোজিনা আক্তার ব্যস্ত আছেন বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মাঈনুর রহমান জানান, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তার কারণে ফাঁড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন পুলিশ সদস্যরা। নিরাপত্তাজনিত কারণে পরবর্তীতে সেখানে পুলিশ আর যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার ফাঁড়িতে তালা লাগানো হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব