দুই মাসের ব্যবধানে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে হাটহাজারীর সাজ্জাদ হোসেন ও তার সহযোগীরা। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে গত ২৯ আগস্ট কয়েক মিনিটের ব্যবধানে গুলি করা হত্যা করা হয় আনিছ ও তার বন্ধু মাসুদ কায়ছারকে। এ ঘটনার ২১ দিনের মাথায় একই কায়দায় চান্দগাঁও শমসের পাড়ায় গুলি করে হত্যা করা হয় আফতাব উদ্দিন তাহসীন নামে আরও এক যুবককে। তিন খুনের ঘটনায় বায়েজিদ, হাটহাজারী ও চান্দগাঁও থানায় তিনটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু প্রধান আসামি সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের নাগাল পায়নি পুলিশ।
তাহসীন হত্যা : গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়া এলাকায় তাহসীন তার ব্যবসার জন্য আনা বালু ও ইট রাখেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে মজুতের জন্য এক ট্রাক বালু আনা হয়। এ কারণে আফতাব সেখানে আসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি নোহা মাইক্রোবাস আসে। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে আফতাবকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোঁড়া হয়। এরপর সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার সহযোগী চারজন গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকেন। তারা আফতাবের উরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যান। আশপাশে লোকজন থাকলেও তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ এগিয়ে আসেননি।
তাহসীন হত্যায় ২৩ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বাবা মো. মুছা। মামলায় পাঁচজনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। তারা হলেন সাজ্জাদ হোসেন, মো. হাসান, মোহাম্মদ, খোরশেদ প্রকাশ খালাতো ভাই খোরশেদ ও মো. হেলাল। এদের মধ্যে হেলাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও বাকী চারজনের হদিস পায়নি পুলিশ। তাহসীন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান জানান, তাহসীন হত্যায় জড়িত প্রধান আসামিসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুই খুন: গত ২৯ আগস্ট কয়েকমিনিটের ব্যবধানে দুজনকে গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ ও তার অনুসারীরা। নিহতর হলেন হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশ গ্রামের মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে মো. আনিছ ও তার বন্ধু মাসুদ কায়সার। আনিছ হত্যায় বায়েজিদ থানায় গত ৩০ আগস্ট মামলা দায়ের করেন আনিছের স্ত্রী শামিম আকতার মনি। মাসদু হত্যায়ও হাটহাজারী থানায় একই দিনে মামলা দায়ের করেন নিহত মাসুদের ভাই মো.আরিফ। দুটি মামলায় সুনির্দিষ্ট চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন মো. আরমান বাচ্চু, মো. জাহাঙ্গীর, সাজ্জাদ হোসেন ও মো. হাসান। জোড়াখুনের ঘটনার আড়াই মাস পার হলেও চার আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ২৯ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০টার সময় বন্ধু মাসুদকে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে কুয়াইশ মোড়ে যান আনিছ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় আনিছকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এলাকার লোকজন আহত আনিছকে যখন উদ্ধার করতে বের হয় তখন মাসুদের সঙ্গে হাটহাজারী পশ্চিম কুয়াইশ ফারুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাদের দেখা হয়। তখন মাসুদ তাদের বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় (২৯ আগস্ট) আনিছসহ একটি অটোরিকশা করে বায়েজিদ বোস্তামি কুয়াইশ-অক্সিজেন রোডের নাহার গার্ডেনের পূর্ব দিকে পৌঁছালে তিন চারজন যুবক আনিছকে লক্ষ্য করে গুলি করে।
মাসুদ তখন পাশের বিল দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মাসুদ তার পরনের কাপড় পাল্টাতে বাসায় যাবার পথে হাটহাজারী পশ্চিম কুয়াইশ ফারুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে সাবেরের দোকানের সামনে পৌঁছালে একই যুবকরা মাসুদকেও গুলি করে হত্যা করে। আনিছ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকে সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের গ্রেপ্তার করতে।
সাক্ষীকে হত্যার ঘোষণা ফেসবুকে : জোড়াখুনের ঘটনার দায়ের করা মামলার সাক্ষী বন্ধু জাবেদ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাবেদের ছবি দিয়ে সাজ্জাদ তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়। সেখানে সহযোগীদের উদ্দেশে সাজ্জাদ লিখেন আমি প্রস্তুত আছি। তোমরা সবাই রেডি হয়ে নাও। এখন আর বসে থাকার টাইম নেই। শুরুটা ওরা করেছিল, শেষ আমি করব। তাদের দেখিয়ে দেব আমি কী জিনিস। ওকে (জাবেদকে) যেখানে দেখো আমাকে একটা মেসেজ দেবেন।
পূর্বকোণ/ইব