হেমন্ত এসেছে প্রকৃতিতে। ‘শীতের পূর্বাভাস’খ্যাত এই ঋতুতে কাঁচা বাজার ভরে উঠে শীতের আগাম সবজিতে। দামও থাকে সাধারণ মানুষের অনেকটা নাগালে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেল বন্দরনগরীর বাজারে। সবজির অতি চড়া দরে স্বস্তির বদলে কাঁচা বাজারে নাভিশ্বাস নগরবাসীর। বাজারের ২০ সবজির মধ্যে ১১ সবজির দামই ১০০ টাকার বেশি। বাকি সবজির ৫টির দামই ৭০ টাকার বেশি। ৫০ টাকার নিচে মিলছে কেবল পেঁপে। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ঢেঁড়শ, শিম, কাঁচা মরিচ, কাঁকরল, গাজরসহ অন্তত ৬ সবজির।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর অক্সিজেন, দুই নম্বর গেট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি, আতুরার ডিপো, কর্ণফুলী কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বরবটি, কাকরল, শিম, করলা, কাঁচা মরিচ, বেগুন, টমেটো, মুলা, ফুলকপিসহ ১১ শাক-সবজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। এরমধ্যে বরবটি ১০০, কাকরল ১৪০, করলা ১২০, শিম ২৮০, কাঁচা মরিচ ২৮০, বেগুন ১২০, টমেটো ২০০, বিলেতি ধনিয়া ৪০০, ফুলকপি ১৫০, গাজর ১৭০ এবং মুলা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে ঢেঁড়শ, পটল ও বাঁধাকপি ৮০ টাকা, লাউ ও চিচিঙ্গা ৭০, লাউ-মিষ্টি কুমড়া ৬০, আলু ৫০ এবং পেঁপে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। অন্যদিকে পেঁয়াজ কেজি ৯০ থেকে ১১০ এবং রসুন ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে নগরে। এরমধ্যে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে ঢেঁড়শ, শিম, কাঁচা মরিচ, কাকরল, গাজর ও করলার।
খুচরা ব্যবসায়ী, আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ী ও বেপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সবজি আসে বগুড়া, নরসিংদী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও যশোর থেকে। তবে সাম্প্রতিক দাবদাহ ও বন্যায় এসব এলাকায় মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশ কিছু সবজি। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন শতশত কৃষক। তাদের কোনো প্রণোদনা বা সহযোগিতার আওতায়ও আনা হয়নি। বেড়েছে ফসলের বীজ ও সারের দামও। তাই চট্টগ্রামে যা সবজি সরবরাহ হয় এখন সেটা অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। তাতেই চড়া বন্দরনগরীর সবজির বাজার।
এই বিষয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঠেই কৃষকদের অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সরবরাহ কমে গেছে। আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন সবজিবাহী ১০০টি ট্রাক রিয়াজউদ্দিন বাজারে প্রবেশ করলেও এখন আসে ৫টি ট্রাক। সরবরাহ অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। তাই দামও বাড়তি। পাইকারিতেই অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ টাকার বেশি।
দাম বেড়েছে মুরগিরও। বৃহস্পতিবার নগরে ব্রয়লার মুরগি ২০০, সোনালি ৩২০ থেকে ৩৬০ এবং দেশি ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে ৭৮০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। মাছের মধ্যে লইট্টা ১৬০, পাঙাস ও তেলাপিয়া ১৮০, নারকেলি ২০০, কাতল ৩২০, রুই ৩৮০, পোয়া ৩০০ এবং পাবদা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে নগরে।
এদিকে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা ডিম বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এখনও। বৃহস্পতিবার নগরে উৎপাদক পর্যায়ে ১১ টাকা ২০ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ৭০ পয়সা এবং খুচরায় ১৪ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ডিম।
পূর্বকোণ/ইব