চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

ইংরেজি ও পার্বত্য অঞ্চল ডুবিয়েছে চট্টগ্রামবোর্ডকে 

ইমরান বিন ছবুর

১৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

গতকাল প্রকাশিত ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার হচ্ছে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে সপ্তম। মূলত ইংরেজি বিষয়ে বেশি ফেল করা, মানবিক বিভাগে  ফল বিপর্যয় এবং বরাবরের মত মহানগরী বাদে কক্সবাজারসহ তিন পাবর্ত্য অঞ্চলে পাসের হার কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে ফলাফলে প্রভাব পড়েছে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ইংরেজি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করেছে। ইংরেজিতে শতকরা ৬৮ দশমিক ৮৯ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। ইংরেজিতে গড়ে ৩১ দশমিক ১১ জন শিক্ষার্থী ফেল করেছে। ইংরেজি বিষয়ে বেশি ফেল করায় সামগ্রিক ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেলার বাইরে কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় গতবছরের তুলনায় পাসের হার কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পাসের হার কমেছে বলে মনে করছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। 
এবার পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।
চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, এবার ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্যের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ও প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল থাকার কারণে বেশি অকৃতকার্য হয়েছে। যার কারণে মানবিকে পাসের হার কমে গেছে। এছাড়া, বিষয় ম্যাপিং করার কারণে জিপিএ-৫ বাড়লেও পাসের হারে প্রভাব পড়েছে। তবে সার্বিক পাসের হার অতোটা খারাপও না।
পাসের হার কমার পিছনের ইংরেজি বিষয়ের পাশাপাশি তিন পার্বত্য অঞ্চল দায়ী উল্লেখ করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, মহানগরীতে ফলাফল ভালো হলেও, মহানগরীর বাইরের উপজেলা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য অঞ্চল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের মূল ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবার আমাদের রেজাল্টে পার্বত্য অঞ্চলগুলোর কিছুটা প্রভাব থাকে। এই তিন অঞ্চলে ফলাফল ভালো হলে সার্বিকভাবে ফল ভালো হয়। সেখানে পাসের হার কমে গেলে মূল পাসের হারও কমে যায়।  
তিনি আরো বলেন, সমতলের চেয়ে সেখানে সুযোগ সুবিধা কম, তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানসম্মত শিক্ষার অভাবও রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের ফলাফল ভালো হলে অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড এগিয়ে থাকতো।
কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য অঞ্চলের ফলাফল: 
এবছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার হচ্ছে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। এরমধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মহানগরে পাসের হার ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ। মহানগর ছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৬৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার হচ্ছে ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। তিন পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, যেখানে গতবছর পাসের হার  ছিল ৬৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। রাঙামাটি জেলায় পাসের হার হচ্ছে ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ, যেখানে ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। সবচেয়ে কম পাসের হার হচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলায়। সেখানে পাসের হার হচ্ছে মাত্র ৫৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যেখানে গতবছর পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ২৭ শতাংশ।     
এবার শিক্ষার্থীরা ৭টি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সেগুলো মূল্যায়নের পাশাপাশি বাকি ৬টি বিষয়ের মূল্যায়ন এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ম্যাপিং করা হয়েছে। 
এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
যেভাবে হয়েছে বিষয় ম্যাপিং:
বিষয় ম্যাপিং নতুন নয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এই বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। এ জন্য কোনো পরীক্ষার কোন বিষয়ের নম্বর যুক্ত হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩০ জুন। সাতটি বিষয়ের পরীক্ষার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর প্রথমে ১১ আগস্ট ও পরে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।
পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট