নগরীর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে মিলেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা। শুধু তাই নয়, এসব বাসাবাড়ির আশপাশে এবং বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত থাকা ৩৬ শতাংশ কন্টেইনারে মিলেছে লার্ভার প্রজননকেন্দ্র। এসবের মধ্যে আট ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব বেশি। এর মধ্যে ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বহদ্দারহাট এলাকায় সর্বোচ্চ। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, এডিস মশা নিয়ে চালানো জরিপের ফলাফলসহ মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। তাতে আটটি সুপারিশও রয়েছে।
জানা গেছে, জেলা কীটতত্ত¡বিদ এনতেজার ফেরদাওছের নেতৃত্বে গত মাসের ১৭ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিপ কাজ চালানো হয়। এতে অংশ নেন কার্যালয়টির কীটতত্ত্বীয় কূশলী সৈয়দ মো. মঈন উদ্দীন ও মো. রিয়াজ উদ্দীন। এসময় তারা উঁচু ভবন, নির্মাণাধীন ভবন, সেমি পাকা, খালি প্লট ও বস্তি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকার ২০০ বাসা-বাড়ি থেকে এডিস মশার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারমধ্যে ৭৪টিতে এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা ৩৭ শতাংশ। এছাড়া ১৯৪ কন্টেইনারে থেকে সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে ৬৯ কন্টেইনারে পজিটিভ পাওয়া যায়। যা ৩৬ শতাংশ। এছাড়া প্লাস্টিক ড্রাম ও বাস্কেটে ৪০, টায়ারে ৩৭, মাটির পাত্রে ১২, প্লাস্টিক জার ও শিটে ৬, পানির ট্যাংক, ফুলের টব ও এলুমিনিয়ামে ৩ এবং ভবনের লিফটের নিচে জমানো পানিতে ২ শতাংশ লার্ভা পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। আর কতগুলো বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে, তা পরিমাপের সূচক হলো হাউস ইনডেক্স। জরিপে দেখা যায়, ৮ ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। ওয়ার্ডগুলো হলো-৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বহদ্দারহাটে ৮০ শতাংশ, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের শেরশাহ-বায়েজিদে ৬০ শতাংশ, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের পাহাড়তলীতে ৪৫ শতাংশ, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৪০ শতাংশ, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ও কোতোয়ালিতে ৩০ শতাংশ, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের উত্তর ও দক্ষিণ খুলশীতে ২৫ শতাংশ, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের হালিশহর এলাকায় ২০ শতাংশ এবং ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ।
জেলা কীটতত্ত্ববীদ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, জরিপে বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করি। এ কাজে আমাদের কর্মীও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। প্লাস্টিকের ড্রাম, পরিত্যক্ত টায়ারে জমা থাকা পানিতে লার্ভার অস্তিত্ব বেশি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এডিস মশা নিয়ে চালানো জরিপের ফলাফল এবং কিছু সুপারিশ সিটি কর্পোরেশনকে জানানো হয়েছে। ফলাফল অনুসরণ করে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস এবং ওষুধ ছিটানো সহজ হবে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতেও কাজে লাগবে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মশার ঘনত্ব বাড়বে। তাতে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
পূর্বকোণ/এমটি