চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

আদালতে শিশু বর্ষা হত্যা মামলার চার্জশিট পৌঁছেনি দু’বছরেও

নাজিম মুহাম্মদ

৩ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চাঞ্চল্যকর সাত বছরের শিশু মারজানা হক বর্ষা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) আদালতে পৌঁছেনি দুই বছরেও। এ অবস্থায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন বিজ্ঞ আদালত। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান গতকাল (বুধবার) বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনলে আদালত এ নির্দেশনা দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় শিশু বর্ষা হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বিলম্ব হচ্ছে।

 

 

২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নগরীর জামালখান এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশু বর্ষা। নিখোঁজের তিনদিন পর (২৭ অক্টোবর ২২) জামালখান সিকদার হোটেলের পেছনে নালা থেকে বস্তাভর্তি বর্ষার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে লক্ষণ দাশ (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে লক্ষণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। নিহত বর্ষার মা ঝর্ণা বেগম জানান, তার মেয়ে হত্যার প্রধান আসামি লক্ষণ দাশ এখনো কারাবন্দি রয়েছে। যে কোন সময় সে জামিনে বের হয়ে যেতে পারে। লক্ষণ ভয়ংকর প্রকৃতির। জামিনে বের হলে প্রতিশোধ

 

নিতে তাদের উপর ফের হামলা করতে পারে। শিশু বর্ষা হত্যা মামলার আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান জানান, ঝর্ণা বেগম আর্থিকভাবে দুর্বল। তাকে আমরা বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিচ্ছি। বর্ষা হত্যার দুই বছর পার হলেও তদন্ত কর্মকর্তা এখনো মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি। বিষয়টি আমরা বুধবার (গতকাল) বিজ্ঞ আদালতের দৃষ্টিতে আনি। আদালত মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখে তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানির আদেশ দিয়েছেন। আইনজীবী জিয়া হাবীব বলেন, এর আগেও গত কয়েকমাস আগে তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালত তলব করেছিলেন। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। শুধুমাত্র ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে তিনি চার্জশিট দিতে পারছেন না।

 

নগরীর মাছুয়া ঝর্ণা এলাকার মৃত আবদুল হাকের মেয়ে বর্ষা। ২০১৮ সালে মারা যান আবদুল হক। মোমিন রোডে ইকো প্যাকেজিং নামে তার একটি প্রেস ছিল। মা ঝর্ণা বেগম চাঁদপুরের শাহরাস্তি এলাকার বাসিন্দা। সৎ বাবা ইউসুফ আলী ও মা ঝর্ণা বেগমের সাথে জামালখান সিকদার হোটেলের পাশের গলিতে শাওন ভবনের নিচ তলায় বসবাস করতো বর্ষা। পড়তো কুসুম কুমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে। ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর বিকেল চারটায় মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয় বর্ষা। এরপর গলির মুখে সিকদার হোটেলের পাশের আজাদ স্টোর থেকে চিপস ও বিস্কুট কিনে বাসায় যাবার পথে নিখোঁজ হয়। পরে তাকে খুঁজতে বের হয় বাসার লোকজন। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি প্রথমে স্থানীয় কাউন্সিলরকে ও পরে কোতোয়ালী থানায় অবহিত করা হয়। বর্ষাকে খুঁজে পেতে নগরজুড়ে মাইকিংও করা হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর সন্ধ্যা সাড়ে পাচটায় জামালখান সিকদার হোটেলের পিছনের একটি নালা থেকে বস্তাভর্তি শিশু মারজানা হক বর্ষার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

বর্ষা হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর বাসার গলির মুখে শ্যামল স্টোরের কর্মচারী লক্ষণ দাশকে (৩০) গ্রেপ্তার করেন। লক্ষণ দাশ লোহাগাড়ার উত্তর পুদয়া তিন নম্বর ওয়ার্ডের মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। সিকদার হোটেলের পেছনের গোপাল মুহুরী গলির একেএম জামাল উদ্দিনের ভবনের নিচতলায় শ্যামল স্টোরের গোডাউনে থাকতেন। বর্ষার মৃতদেহ যখন বস্তা থেকে বের করা হয় তখন বস্তার গায়ে টিসিবির সিল দেখতে পাওয়া যায়। পুলিশ মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর গোডাউনে টিসিবির সিলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকে। পরে শ্যামল স্টোরের গোডাউনে একই ধরনের বস্তা খুঁজে পায়। ঘটনাস্থলের আশেপাশের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে লক্ষণ দাশকে শনাক্ত করা হয়।

 

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লক্ষণ দাশ জানিয়েছিলেন, তিনি বিভিন্ন সময় শিশুটিকে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিতেন। ঘটনার দিন বিকেল পৌনে পাঁচটায় ১০০ টাকার লোভ দেখিয়ে শিশু বর্ষাকে গোডাউনে নিয়ে যান। নেওয়ার পর নাক, মুখ চেপে ধরে শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ফলে রক্তপাত হওয়ায় লক্ষণ দাশ ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন এবং গোডাউনে রাখা টিসিবি’র সিলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভেতরে মৃতদেহটি ভরে নালায় ফেলে দেন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট