চট্টগ্রাম রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

চোখের এলার্জির কারণগুলো জানুন

অনলাইন ডেস্ক

২৯ মে, ২০২৪ | ৯:৫৪ অপরাহ্ণ

নির্দোষ বস্তুর সংস্পর্শে শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই এলার্জি। এলার্জি বলতে আমরা শরীরের এলার্জিকেই বুঝি। কিন্তু শরীরের এলার্জির মতো চোখেও এলার্জি হয়। এলার্জি চোখের একটি অতি পরিচিত রোগ। চোখের এলার্জি মৃদু থেকে গুরুতর হতে পারে। এই রোগ শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত যে কোনো বয়সে হতে পারে। এই রোগের উপসর্গ সাধারণত চোখ চুলকানো, পানি পড়া, আলোভীতি, চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি।

 

প্রাথমিক অবস্থায় দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত না ঘটলেও উপসর্গগুলো অনেক কষ্টের কারণ হয়। এই রোগের উপসর্গ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে কমবেশি হয়। দীর্ঘকাল স্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে মারাত্মক রকম জটিলতা হতে পারে। যেমন দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত, নেত্রস্বচ্ছের অস্বচ্ছতা, উচ্চ চোখের চাপ এবং চোখের পাতার বিকৃতি।

 

এলার্জির কারণ: পরিবেশের উপাদানই মূলত চোখের এলার্জির প্রধান কারণ। তবে বংশানুক্রমের প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। যার কারণে একই পরিবেশে অবস্থানের ফলেও কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন আবার কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না। যার সংস্পর্শে এলে চোখে এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাকে বলে এলার্জেন। প্রকৃতিতে প্রায় ৮০০ রকমের এলার্জেন বিদ্যমান। এলার্জেন সাধারণত দুই ধরনের– বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ। বহিরাগত এলার্জেনই এলার্জির প্রধান কারণ। অভ্যন্তরীণ এলার্জেনের মধ্যে রয়েছে– ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীর সংক্রমণ। বহিরাগত এলার্জেন সাধারণত চার রকমের হয়। যেসব এলার্জেন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে তার মধ্যে রয়েছে– ফুল বা ঘাসের রেণু, বাসা বা রাস্তার ধুলাবালি, বিভিন্ন জন্তুর উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি। যেসব এলার্জেন খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে তার মধ্যে রয়েছে– গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন ইত্যাদি। যেসব ওষুধের মাধ্যমে চোখে এলার্জি হয় তার মধ্যে রয়েছে– জেন্টামাইসিন ও নিউমাইসিন জাতীয় ওষুধ। এ ছাড়া চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেকে কসমেটিকস এবং কাজল ব্যবহার করেন। এর জন্যও চোখে এলার্জির মতো একটি বিরক্তিকর রোগ হয়। অনেক কীটপতঙ্গের কামড়েও চোখে অ্যালার্জি হতে পারে। অতি ঠান্ডা ও অতি গরমেও অনেকের এলার্জি হতে দেখা যায়।

 

এলার্জির প্রকারভেদ:
ঋতুভিত্তিক এলার্জিজনিত কনজাংটিভার প্রদাহ।
সার্বক্ষণিক এলার্জিজনিত কনজাংটিভার প্রদাহ।
এটোপিক কেরাটোকনজাংটিভাইটিস।
এটোপিক ব্লেফারোকনজাংটিভাইটিস।
ভারনাল কেরাটোকনজাংটিভাইটিস।
জায়ান্ট প্যাপিলারি কনজাংটিভাইটিস।

 

সবচেয়ে বেশি যে এলার্জির সঙ্গে আমরা পরিচিত তার নাম ঋতুভিত্তিক এলার্জিজনিত কনজাংটিভার প্রদাহ Seasonal allergic conjunctivitis)। সাধারণত বসন্তকালে এর প্রভাব দেখা যায়। এটা সাধারণত কম জটিল হয়। চোখের চুলকানির সঙ্গে নাক দিয়ে পানি পড়া এবং কিছু কাশিও হতে পারে। বসন্তকাল সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আপনা আপনি উপসর্গের উপশম হয়। সার্বক্ষণিক এলার্জিজনিত কনজাংটিভার প্রদাহ (Perineal allergic conjunctivitis) বছরের সব সময়ই থাকে। কিন্তু উপসর্গের কমবেশি হয়। এটোপিক কেরাটোকনজাংটিভাইটিস Atopic kerato-conjunctivitis) সাধারণত চর্মের প্রদাহ, একজিমা এবং হাঁপানি রোগের সঙ্গে জড়িত। এই রোগের জটিলতা অনেক বেশি। এই রোগের ফলে নেত্র স্বচ্ছের অস্বচ্ছতা এবং ছানি রোগ হতে পারে, যা অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। ভারনাল কেরাটোকনজাংটিভাইটিস (Vernal kerato-conjunctivitis) সাধারণত শিশু ও কিশোর বয়সে হয়ে থাকে এবং বালকরাই বেশি আক্রান্ত হয়। চৌদ্দ বছর বয়সের পরে ধীরে ধীরে উপসর্গের উপশম হয়। কিন্তু আক্রান্ত অবস্থায় সময়মতো চিকিৎসা না হলে স্থায়ী অ্যামব্লায়োপিয়া হতে পারে, যার কারণে দৃষ্টিশক্তি আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। শিশুর চোখে এলার্জি হলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, হাতুড়ে চিকিৎসক বা অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে আসছেন। এতে করে চোখে উচ্চ চাপ (গ্লুকোমা) সৃষ্টি হয়, যা স্থায়ী অন্ধত্বের আরেকটি কারণ। তাই কোনো ক্রমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।

 

চিকিৎসা ও প্রতিকার: এলার্জির চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিকারই মুখ্য। একটা জিনিস আমাদের মনে রাখা উচিত, উপরোল্লিখিত এলার্জেন সব একজনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম এলার্জেন দায়ী। ধরা যাক, একজনের গরুর মাংস খেলে এলার্জি হচ্ছে, আরেকজনের হচ্ছে ইলিশ মাছ খেলে। তাই ভুক্তভোগীকেই বের করতে হবে কীসে এলার্জি হচ্ছে। সেই অনুযায়ী দায়ী উপাদান বাদ দিতে হবে। ধুলাবালি থেকে রক্ষার্থে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। ফুলের রেণু থেকে দূরে থাকতে হবে।

লেখক: ডা. মো. সফিউল ইসলাম প্রধান

 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট