পাকিস্তানে চলছে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ মিলিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭ হাজারেরও বেশি প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার ভোট দিচ্ছেন।
তাদের ভোটেই নির্ধারিত হবে, আগামী পাঁচ বছর পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির শাসন ক্ষমতায় কারা থাকবেন। তবে বৈশ্বিক নানা মিডিয়া ও থিংক-ট্যাংক বলছে, পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনে জিততে চলেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
আর এই অনুমান সঠিক হলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে নওয়াজের এটি হবে চতুর্থ মেয়াদ। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর প্রধান নেতা নওয়াজ শরিফ ২০২৪ সালের এই সাধারণ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হবেন বলে মার্কিন মিডিয়া এবং থিংক ট্যাংকগুলোর পাশাপাশি বিবিসি, গার্ডিয়ান এবং এএফপিসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেটগুলো অনুমান করছে।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, বৃহস্পতিবার পাকিস্তানিরা যখন সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবে তখন নওয়াজ শরিফকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাতে না পারাটা হবে বিস্ময়কর।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ শরিফ সেই অভিযোগগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করার সুযোগ পাবেন যার কারণে তিনি ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারিয়েছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে নওয়াজ শরিফকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অস্থির সমর্থকদের সম্মুখীনও হতে হবে।
ইউএস টিভি ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে, ‘গত সপ্তাহে করাচিতে পাকিস্তানের অভিজাত ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনেক লোক বৃহস্পতিবারের এই নির্বাচনে ঝুলন্ত সংসদ এবং তারপর একটি দুর্বল জোট সরকার গঠন হতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাদের বেশিরভাগই আশা করছেন, সেই জোট সরকার নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বেই হবে – অথবা তার ভাই শেহবাজের নেতৃত্বেও হতে পারে।’
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের পররাষ্ট্র নীতির ফেলো মাদিহা আফজালের মতে, নওয়াজ শরিফ যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন, তাহলে তিনি দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। একটি হলো- ‘পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি’। অন্যটি হচ্ছে- ‘শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে ঠিকঠাকভাবে সম্পর্ক পরিচালনা করা।’
আরেক মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ‘নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে এগিয়ে ছিলেন ইমরান খানের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ। ৭৪ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পুনরায় নির্বাচিত হতে চাইছেন এবং তেমনটি হলে বিদেশে কয়েক বছরের স্বেচ্ছা-নির্বাসনের পর এটি হবে নওয়াজের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন।’
সিএনএন আরও বলেছে, ‘নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির কাছ থেকে নওয়াজ শরিফকে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়াল এবারই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হয়েছেন।’
যুক্তরাজ্যের সাবেক সিনিয়র কূটনীতিক এবং কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম উইলাসি-উইলসি বলেছেন, ‘নওয়াজ শরিফ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী। তিনি ভারতের সাথেও সুসম্পর্ক চাইবেন।’
কিন্তু পিএমএলএনের সম্ভাব্য বিজয়ের এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিত হতে পারে ‘অত্যন্ত কম’, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পূর্বকোণ/এসি