চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফিলিস্তিনি কূটনীতিক হুসাম জোমলটের জবানি

ফিলিস্তিন বিষয়ে আসল সত্য

প্রথম পর্ব

২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ | ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

[হুসাম জোমলট গত ১০ নভেম্বর, ২০২৩-এ বিখ্যাত মার্কিন টিভি প্রোগ্রাম ফ্রন্টলাইন-এ দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের দ্বন্দ্বের খুঁটিনাটি নিয়ে। ‘সময়ের দাবি’ বিবেচনায় তথ্যবহুল এ সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ দৈনিক পূর্বকোণের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে (প্রশ্ন ও উত্তর আকারে)। আজ ১ম পর্ব।]

 

শুরু করা যাক ট্রাম্প প্রশাসনের আগমনের পরিপ্রেক্ষিতটা ধরে। সেসময় আপনি ওয়াশিংটনে। আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে বলুন, সেই সময়ে আমেরিকানদের বা ইসরায়েলিদের থেকে সুর পরিবর্তনের কোনও আশা বা প্রতিশ্রুতি কি ছিল?

ট্রাম্প প্রশাসন সেসময় পুরোপুরিই নেতানিয়াহুর বশে ছিল। আমি বলতে চাচ্ছি নেতানিয়াহু (ইসরায়েল নয়) সম্পূর্ণ অসলো-বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন, যেখানে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের একীভূত রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে আমাদের কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি ছিলাম ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত। আমাকে সপরিবারে একরকম লাথি দিয়েই বের করে দেয়া হয়েছিল। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে যা বলেছেন তা বৃহত্তর ইসরায়েল প্রকল্পের অসলো-বিরোধী আচরণের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তাদের বক্তব্যের সারবস্তু ছিল- ঔপনিবেশিক বন্দোবস্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন, অর্থাৎ নেতানিয়াহুর ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ।
আরেকটু বিস্তারিতভাবে জানা যাক। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রেসিডেন্টের দূত জ্যারেড কুশনার- অর্থাৎ প্রশাসনের সাথে আপনার যোগাযোগটা কেমন ছিল? ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দিককার অবস্থা সম্পর্কে আমাকে কিছু ধারণা দিতে পারবেন?
হ্যাঁ। প্রকৃতপক্ষে, ওয়াশিংটনে আমার আগমনের মাত্র চার সপ্তাহ পরে (এপ্রিল ২০১৭-এর প্রথম দিকে) আমাকে আমার রাষ্ট্রপতি, মাহমুদ আব্বাসের একটি সফরের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের সেই মিটিংটি বেশ ভাল হয়েছিল। আমরা রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টাদের কাছ থেকে যা শুনেছি তা দীর্ঘস্থায়ী মার্কিন নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল যে তারা দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে এবং তারা জানেন যে, নেতানিয়াহু হলেন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রধান বাধা।
আমরা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দুই নেতার আরেকটি বৈঠকের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম। সেই বৈঠকে (আসলে, আমি সেখানে ছিলাম, এবং আমি শুনছিলাম, এবং আমি অবাক হয়েছিলাম) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় রূপরেখা দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আমাদের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
কিন্তু ক’টি সপ্তাহ পরে, আমরা বুঝতে পারি তারা ‘অন্য খিচুড়ি’ পাকাচ্ছে। অচিরেই আমরা জানতে পেলাম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের একীভূত রাজধানী করার ঘোষণা আসন্ন। পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া! বুঝলাম ‘মার্কিন স্বার্থ’ বলেই এমনটি হলো। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ যেখানে জড়িত, সেখানে আন্তর্জাতিক রেজল্যুশন বা নীতি-নৈতিকতার আর মূল্য কী!

আপনি যা বলছেন তা হল ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু স্বীকৃতি ছিল যে নেতানিয়াহু দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে বাধা হবে?

হ্যাঁ, একেবারে, হ্যাঁ। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি স্বীকৃতি ছিল যে নেতানিয়াহু দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে বাধা। এতে করে একটা ধারণা এমন তৈরি হয়েছিল যে, মার্কিন প্রশাসন বোধহয় তখনকার ইসরায়েলি সরকারের উপর চাপ দিতে ইচ্ছুক। দুঃখের বিষয় সেটা হয়নি, তাদের একমাত্র চাপ ছিল আমাদের উপর, এবং চাপের অনুশীলন আমাদের উপর দিয়েই গিয়েছে, এমনভাবে যা শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও লাইনচ্যুত করেছে।
আপনি জানেন, এক্ষেত্রে সবসময় দুটি এজেন্ডা রয়েছে। নেতানিয়াহু এজেন্ডা (ইসরায়েলি সরকারের এজেন্ডা), যেটায় রয়েছে- ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাইপাস করে আরও বসতি গড়ে তোলা, কাজ দিয়ে নয়, কথায় নয়, অনেক নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বা মাটিতে অনেক কাজ করে, জেরুজালেমকে পকেটস্থ করা, আমাদের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করা ইত্যাদি। মনে রাখবেন, একটি কূটনৈতিক মিশন শুধুমাত্র ওয়াশিংটন নয়, জেরুজালেমে, আমেরিকা-ফিলিস্তিনি জনগণের সম্পর্ক দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতীক। এটি প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রতীক। সবসময় সেই এজেন্ডা ছিল।
এবং আন্তর্জাতিক প্লাস ফিলিস্তিনি এজেন্ডা। যা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাচ্ছে এবং জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ১৯৬৭’র সীমান্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শরণার্থীদের সমস্যা সমাধান করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন জোটবদ্ধ, আপাতদৃষ্টিতে তিনি দ্বিতীয় এজেন্ডার সাথে সম্পূর্ণ মিত্রতা স্থাপন করেছেন, কিন্তু শেষমেশ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পরম ভিত্তি এবং আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকে ক্ষুণ্ন করেছেন।
কিন্তু আমি যেমন বুঝি, প্রেসিডেন্ট আব্বাস এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্ক আসলে শুরুতে বেশ ভালো ছিল। আমি বলতে চাচ্ছি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আব্বাসের প্রতি খুবই ইতিবাচক ধারণা নিয়ে চলে গেলেন।
ওহ, হ্যাঁ, এটা ঠিক।

কিন্তু পরে কী হলো?

তাদের প্রথম মুখোমুখিতে আমি মনে করি ভালো রসায়ন ছিল. আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে যা শুনেছি তা একভাবে আশাব্যঞ্জক। আমরা এমন একজন রাষ্ট্রপতির কথা শুনেছি যিনি সবেমাত্র নির্বাচিত হয়েছেন, আক্ষরিক অর্থে একজন রাষ্ট্রপতি হিসাবে অভিষেক হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে, যিনি আমাদের বলেছিলেন যে তিনি তার রাজনৈতিক মূলধন ব্যবহার করতে ইচ্ছুক, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য তার বিশ্বাস, এবং তিনি বিশ্বাস করেন এটাই সময়, এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনিই এটি করতে পারেন। তাই অবশ্যই, আমরা আশাবাদী ছিলাম যে এটি হতে পারে, কারণ কেউ কেউ বলছিলেন যে ট্রাম্প আসলে এমনই। এই সমস্ত স্টেরিওটাইপগুলিকে প্রকৃতপক্ষে ভাঙতে, অচলাবস্থার ভিত নাড়িয়ে দিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে আন্তর্জাতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সমাধান কার্যকর করতে ট্রাম্পের প্রয়োজন হতে পারে।
তবে আমি মনে করি সেখানে ট্রাম্পের রাষ্ট্রনায়ক মানসিকতার চেয়ে ব্যবসায়ী মানসিকতা ছিল বেশি। শুধু তিনিই নন, তার জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং তার সমস্ত দলটির ভূমিকাই ব্যবসায়িক মানসিকতায় ভরপুর ছিল।
যাইহোক, আমি মনে করি না যে তারা প্রেসিডেন্ট আব্বাস এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া আশা করেছিল। তারা ভেবেছিল একটি ভালো রসায়ন আছে, সঠিক কথাও বলা হচ্ছে কিন্তু তারপরেও তাদের কাজে ভুল হয়েছে। তারা ভেবেছিল যেহেতু সম্পর্কেও শুরুটা ‘ভালো’ দিয়ে শুরু হয়েছে, তাই ‘ভুল’টা মার্জনীয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আব্বাস এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব একেবারেই স্থিরভাবে, প্রথম মিনিট থেকেই ছিলেন সতর্ক, তাই পশ্চিমা-কারসাজি, ব্যবসায়ীর মতো কৌশল কাজ করেনি।
প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়া লোকদের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল? তাদের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেছেন?
স্পষ্টতই প্রেসিডেন্টের পরামর্শকদের কখনোই ‘মার্কিন প্রতিনিধিত্বকারী’ বলে আমাদের মনে হয়নি। তারা একটি দল ছিল যারা গভীর-আবদ্ধ মতাদর্শের (ইসরায়েল, ইহুদিবাদ ও ফিলিস্তিন সম্পর্কে) অনুসারী ছিলেন। এদের কেউ আল-আকসা মসজিদের নিচে দিয়ে হাতুড়ি দিয়ে একটি টানেল খনন করতে গিয়েছিলেন তো কেউ ধর্মীয় যুদ্ধের আগুন জ্বালাতে সচেষ্ট ছিলেন। নেট ফলাফল- শীঘ্রই মধ্যস্থতাকারী হিসাবে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিল তারা, কিন্তু সেই অযোগ্যতা ট্রাম্প প্রশাসনে শেষ অবধি টিকে ছিল।
ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফর এই অঞ্চলে, তাই না? আমি কৌতূহলী যদি আপনি সংক্ষেপে বর্ণনা করতে পারেন যে এটি কেমন ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রথম বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন তখন আপনি প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সঙ্গে ছিলেন কিনা আমি জানি না। এবং তারপর অবশ্যই তিনি ইসরায়েল যান, এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করেন। তাহলে আপনি কি আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে সেই ট্রিপের বর্ণনা দিতে পারবেন?
এই অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফর, সেটাও প্রেসিডেন্ট আব্বাসের বৈঠক এবং ওয়াশিংটন সফরের পরের ছিল। তিনি বেথলেহেম পরিদর্শন করেছিলেন, এবং সেখানে একটি সভা হয়েছিল এবং আমি সেই সভায় যোগ দিয়েছিলাম। এবং আবার, ব্যস্ততার প্রথম ঘণ্টা এবং দিন এবং সপ্তাহগুলি সবই আশাব্যঞ্জক ছিল। কিন্তু তার সফরে, তিনি ইসরায়েল থেকে এসেছিলেন, এবং তিনি বরং অভিযোগ করেছিলেন- ইসরায়েলিরা প্রেসিডেন্ট আব্বাসের উপর একটি ভিডিও জাল করেছে।
নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট আব্বাসের একটি ভুয়া ভিডিও দেখিয়েছিলেন যে, তাতে আব্বাস এমন কিছু বলছেন- “সবাইকে হত্যা কর।”
রাষ্ট্রপতি আব্বাস, তার সারা জীবন শান্তি ও আলোচনার বিষয়ে থেকেছেন অবিচল। ওইরকম মিথ্যা ভিডিও দেখিয়ে ট্রাম্প-আব্বাস প্রথম সাক্ষাতের বিপরীত আবহ তৈরির অপচেষ্টা করা হয়েছে সন্দেহ নেই। তবে নেতানিয়াহুর এ প্রচেষ্টা যে সফল হয়েছে তা এখন আমরা বেশ দেখতে পাচ্ছি। তারা ফিলিস্তিনি জনগণকে ‘ভিলেন’ হিসেবে বিশ^বাসীর কাছে তুলে ধরতে চেয়েছে, যাতে করে এই ‘ভিলেন’দের নিকেষ করায় কোনও রূপ নৈতিক বা মানবিক বাধার মুখে তাদের পড়তে না হয়। এ-ই করে তারা তাদের ‘দ্বি-রাষ্ট্রিক
সমাধান অমান্য’র এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে।
আমি এখন দূতাবাস সরানোর ঘোষণার দিকে দৃষ্টি দিতে চাই। কীভাবে আপনি এটা গ্রহণ করেছিলেন? আপনার মনের মধ্য দিয়ে কী বয়ে গেল? যখন এটি ঘোষণা করা হয়, তখন ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের মধ্যে কথোপকথন কেমন ছিল?
আমি ১৬ নভেম্বর, ২০১৭ স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন উচ্চপদস্থ অফিসিয়াল (যিনি আমার একজন বন্ধু এবং সঙ্গতকারণেই আমি তার নাম উল্লেখ করছি না) আমাকে ফোন করলেন। বললেন, “আমার কাছে আছে আপনার সাথে শেয়ার করার জন্য কিছু গুরুতর খবর। তুমি কোথায়?” আমি বললাম, আমি অফিসে আছি। তিনি বললেন, “ঠিক আছে। আমি আপনাকে জানাতে চাই যে সেক্রেটারি অফ স্টেট রেক্স টিলারসন আপনার মিশনকে ওয়াশিংটনে থাকার অনুমতি দেয় এমন ছাড়পত্রে স্বাক্ষর করেননি।” এবং আমি বললাম, “বিস্তারিত করুন, দয়া করে।” তিনি বলেছিলেন, “এর মানে হল আপনাদের মিশনটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।” মনে রাখবেন, ১৬ নভেম্বর ছিল জেরুজালেমের ঘোষণার আগের সময়।
সন্দেহ নেই এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত, তবে আপনাকে জানতে হবে যে এই জাতীয় সিদ্ধান্তের পরিণতিটা কী হতে যাচ্ছে। কিছু ব্যাপার ভেবে দেখুন। কেন ট্রাম্প প্রশাসন, শুরুতে নিশ্চিত করেছিল যে তারা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে যেতে চায়? দুই রাজ্য মানে দুই রাজ্য, দুই সরকার। কেন তারা ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিত্ব বন্ধ করে দিয়ে শুরু করবে? কারণ এটি একটি এজেন্ডা যা তাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। এজেন্ডাটি হল- দুটি রাষ্ট্রের পুরো আলোচনাকে লাইনচ্যুত করা, এবং এর জন্য ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিত্বের প্রকৃতি, বৈধ প্রকৃতি, জনগণ, জাতিত্ব, রাষ্ট্রত্বের অবসান প্রয়োজন, যা ওয়াশিংটনের একটি ভবন দ্বারা প্রতীকী হতে পারে যার নাম প্যালেস্টাইন মিশন। নেতানিয়াহু সেই প্রতীকটিকে নামিয়ে আনতে চেয়েছিলেন, কারণ সেই প্রতীকটিকে নামিয়ে আনার অর্থ হল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এটি একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য দিগন্তকে বুলডোজ করার আরেকটি পদক্ষেপ, এবং তারপরে ওয়াশিংটনে মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল বন্ধ করে দেওয়া।
সেই একই যুক্তি, কারণ একজন মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল যেটি ১৮৪৪ সাল থেকে সেখানে ছিল, ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই, বছর এবং দশক ধরে ফিলিস্তিন-আমেরিকান সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সেখানে ছিলেন। এটাকে এমনভাবে বন্ধ করে দিতে হবে যে, নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত প্যালেস্টাইনের সমগ্র ঐতিহাসিক ভূমিতে আমেরিকার স্বীকৃতি একমাত্র রাষ্ট্র থাকবে, যার একটি রাজধানী আছে এবং সেটা হল জেরুজালেম।
আমাদের ব্যাপারটা বুঝতে হবে। সমস্ত ব্যাপারটা আসলে ছিল পূর্বনির্ধারিত; পূর্বপরিকল্পিত; এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’কে ক্ষুণœ করা। (চলবে)

লেখক পরিচিতি :

[হুসাম জোমলট বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনি মিশনের প্রধান। তিনি এর আগে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের স্ট্রাটেজিক এডভাইজার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতিসংঘে একজন অর্থনীতিবিদ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনৈতিক গবেষক হিসেবেও কাজ করেছেন।]

শেয়ার করুন