অর্থনীতি ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা নতুন সরকারকে আগামীতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাকেও দেশে-বিদেশে দীর্ঘ মেয়াদে সরকারকে মোকাবেলা করতে হতে পারে (সরকার স্বীকার করুক বা না করুক)। এবার মন্ত্রীসভায় অনেক নতুন মুখ স্থান পেয়েছে। গতবারের মন্ত্রীসভার ৩০ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। তিনজন নতুন মন্ত্রীকে অর্থ, পরিকল্পনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ তিন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে ২০১৪ সালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক কূটনীতিক আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে। যখন নতুন সরকারের সামনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, এমন পটভূমিতে অর্থ খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই এমন একজনকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয় আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের ‘জনকল্যাণে পদক্ষেপ গ্রহণ করে’ দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।
একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, স্বাধীনতার পর বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ -অর্থনীতি, খাদ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রেই অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিগত ১৫ বছরে প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে ঈর্ষণীয়। যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। মানুষের জীবনযাপনে পরিবর্তন এসেছে। কৃষিতে সরকারি ভর্তুকি এবং সার ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে যেখানে দেশে ১ কোটি ১০ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছে, সেখানে ধান উৎপাদন বেড়ে প্রায় চার কোটি টনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সবজি, ফল, মাছ, পোলট্রি ও গবাদি পশু উৎপাদনও বেড়েছে তিন চার-গুণ। দেশের রফতানি আয় বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
২০২৩ সালের এক হিসাব মতে, প্রবাসীরা প্রতিবছর প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স আকারে পাঠাচ্ছে। যা আমাদের রিজার্ভ তথা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হাজার হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতারই প্রতিফলন। কিন্তু এতো অগ্রগতির পরও বিগত দু’বছর যাবৎ ‘ডলারের দাম বৃদ্ধি’, ‘রিজার্ভ হ্রাস পাওয়া’, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি’, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ‘অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতি’, ‘রাজনৈতিক সংঘাত’ ইত্যাদি নিয়ে যে ‘অনিশ্চিয়তা’ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমাদের ‘দীর্ঘদিনের অর্জনগুলো ধরে রাখার বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যা নতুন সরকারের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বিষয়টি এখন সকলের মুখে মুখে। ৪০ হাজার টাকা বেতনের বেসরকারি চাকুরীজীবী বাসা ভাড়া দিয়ে, সন্তানের পড়ালেখার খরচ দিয়ে দিনাতিপাত করতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক পরিবার ‘খাদ্যাভ্যাস’ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। তাঁরা খাবারে মাছ-মাংস কমিয়ে দিয়েছে। ‘প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান সংকোচনের’ ফলে শহরের রাস্তায় ‘হকার’ ও ‘পাঠাও বাইক’ বেড়ে গেছে। ‘শিক্ষিত ছেলেদের মোটরবাইক নিয়ে যাত্রীর জন্য মলিন মুখে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য অর্থনীতির উন্নতির চিত্র নয়’।
দিন দিন কিন্তু আর্থিক বৈষম্যও বেড়ে চলছে। আমরা লক্ষ্য করছি যে, ‘কোভিড-১৯ মহামারীর ধকল’, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া’ ও ‘ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ’, ‘রাশিয়া-চীনের সাথে আমেরিকা-ইউরোপের শীতল-নীরব টানাপোড়েন’ মিলিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে আছে পুরো ‘বিশ্ব অর্থনীতি’। সব মিলিয়ে বিশ্ব একটি নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতি এখনো কিন্তু সংকটাপন্ন। মূল্যস্ফীতিও ক্রমাগত বাড়ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পরিস্থিতি সামাল দিতে একের পর এক কঠোর নীতি নিয়ে আসছে, তবু প্রতিকূলতার লাগাম টানা যাচ্ছে না। ঠিক এমন এক সন্ধিক্ষণে এসে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছে, ‘বিশ্ব অর্থনীতি এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় মন্দা থেকে মাত্র এক আঙুল দূরে। ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ধরনের নজিরবিহীন পরিস্থিতি দেখা যায়নি’।
বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিবিদদের ওপর করা ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ)’ জরিপ থেকে জানা যায়, ৫৬ শতাংশ প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ‘চলতি ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হবে’। জরিপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে শিথিলতার পাশাপাশি আর্থিক বাজারেও শিথিলতা আসবে, অর্থাৎ বেকার মানুষের সংখ্যা বাড়বে। ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও)’ সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে শ্রমবাজারে অতিরিক্ত ২০ লাখ মানুষ প্রবেশ করবে। ফলে চলতি বছর বৈশ্বিক বেকারত্বের হার বাড়বে। সুতরাং সব মিলিয়ে বলা যায় বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ভাল নয়, যার প্রভাব হতে আমরাও মুক্ত নই।
আমাদের দেশের অর্থনীতির বর্তমান চিত্র তুলে ধরার জন্য ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি)’র জরিপের একটি তথ্যও উল্লেখ করতে পারি। সংস্থাটি গত নভেম্বর’২২ থেকে জানুয়ারি’২৩ পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, উন্নয়ন ও সামাজিক পরিস্থিতি’ নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে অংশ নেয়া মানুষরা বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। তার প্রভাবে তাঁদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠছে।’ অথচ এর আগে ২০১৯ সালেও অনুরূপ একটি জরিপে ৭০ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন যে, ‘দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই রয়েছে।’ প্রশ্ন হলো- চার বছরের ব্যবধানে অর্থনীতি নিয়ে মানুষের ধারণা পরিবর্তনের কারণ কী? এই বিষয়টি কি ক্ষমতাসীনরা একবারও চিন্তা করে দেখেছেন! সরকারের কর্তারা কি খতিয়ে দেখেছেন যে, ডলার সংকট কেন সৃষ্টি হয়েছে! ডলার কি দেশে মজুত আছে, নাকি পাচার হয়েছে! এই সংকটের পেছনে কে বা কারা জড়িত! ২০২২ সালের শুরুতে যে ডলার ৯৫ টাকায় পাওয়া যেতো, এখন কেনো সে ডলারের মূল্য খোলা বাজারে ১৩০ টাকায় উন্নীত হয়েছে! অথচ আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধপীড়িত দারিদ্রপীড়িত দেশ তাদের মুদ্রার মান ধরে রেখেছে। বর্তমানে ৭১.১৯ আফগান রুপি (আফগানি) দিয়ে ১ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। আর ১ আফগানির মূল্য বাংলাদেশের ১.৫৪ টাকা। বাংলাদেশি টাকার চেয়ে ভারতীয় ও আফগান মুদ্রা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর রহস্য কোথায়! অথচ একবছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না।
মূলত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিম্নমুখী হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ‘ডলারের উচ্চমূল্য ও দুষ্প্রাপ্যতা’। ডলারের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক ও মানুষের নগদ অর্থের মান/মূল্য দ্রুত কমে যাচ্ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রকৃত কারণগুলো আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধিকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির এই ধারা বন্ধ করতে না পারলে আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্য নিম্নমুখী হয়ে যাবে। দেশ ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এ বিষয়টি সিরিয়াসলি বিবেচনা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। আরও উল্লেখ্য যে, ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুদিন ধরে অর্থনীতিতে নানারকম যে ‘অদূরদর্শী নীতি’ নেয়া হয়েছে, তার ফলে আস্তে আস্তে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছিল। কোভিডের সময় সেসব ঝুঁকি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। এরপর সেটা সমাধানের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ক্রমাগত বেড়ে এখন বড়ধরনের চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ‘কঠোর নীতির’ অভাবে ব্যাংকিং খাত নাজুক হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়েছে। নিয়মনীতি না মেনে কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে, ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়ম দেখার পরেও এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। হুন্ডি বা টাকা পাচার বন্ধ করার জন্য কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করা হয়নি।
এরূপ পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, সরকারকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে। এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জটা হলো- দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া। আমরা যে স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছি- এখনও সেটা কিন্তু বলা যাবে না। তাই অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের সামনে যেসব ‘সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ’ আছে, সেগুলো আরও বিচক্ষণতার সঙ্গে, শক্তভাবে সমাধান করতে হবে। আমাদের সামনে শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ আছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশটা অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়, রিজার্ভ ও জ্বালানি শূন্য হয়ে পড়ে, মূল্যস্ফীতি ৬০ শতাংশ হয়ে যায়। কর্মসংস্থান ছিল না। জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছিল।
অথচ এক-দেড় বছরের মধ্যে দেশটি ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি অনেক কমে গেছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। ট্যুরিজম আবার আগের মতো উঠে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। শ্রীলঙ্কার ভালো দিক হলো, সেখাকার প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী এবং লোকজনও সচেতন ও শিক্ষিত, তাঁদের দেশপ্রেমও অনেক শক্ত। তাঁরা মানবসম্পদ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদেরকে অবশ্যই সিরিয়াসলি কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী তিনবছর কোন ধরনের মেগাপ্রকল্প গ্রহণ-স্থগিত রাখতে হবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাও বন্ধ রাখতে হবে। বন্ধ রাখতে হবে নতুনভাবে সরকারিকরণ। আউটপুট আসবে না এমন মেগাপ্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখতে হবে। নতুন কোন বৈদেশিক লোন গ্রহণ হতে বিরত থাকতে হবে। অপচয় রোধ করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আনতে হবে। ব্যাংক পরিচালক ও শিল্পপতিদের লাগামহীন অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। সবাইকে নিয়মের আওতায় আনতে হবে। খেলাপি আদায়ের জন্য কঠোর হতে হবে। সবকিছু ‘আইন ও নিয়ম’ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে আনতে হবে। সর্বত্র সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হবে। দুর্নীতি, সরকারি সম্পদের অপচয় রোধ করতে হবে।
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘ফোর্স রিটায়ার্ডমেন্টে’ পাঠিয়ে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দ্রব্যমূল্য কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে ভোগ্যপণ্যের উপর ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য প্রণোদনা বৃদ্ধি স্থগিত রাখতে হবে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিটিআরসি প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থ শক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে বলে মনে হয় না । এখানে কিন্তু রাজনীতি ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থাকে প্রভাবমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, যেকোনো দেশেই রাজনীতি বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব-শুধু ‘মূল ভূমিকা’ পালন করে। অর্থনৈতিক উন্নতি ও সামাজিক উন্নয়ন- কোনোটাই কিন্তু সুষ্ঠু এবং ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকলে হয় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থিংকট্যাংক আছে। মুক্তবুদ্ধির চিন্তা যারা করে, তাঁদের কথা শোনা হয়। এমন কি দেশের স্বার্থে বিরোধীদলের কথাও বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা খুব কমই হয়ে থাকে। যাঁরা ক্ষমতার বলয়ে থাকে এবং আর্থিক ক্ষমতা আছে, তাঁদের ধারণা- তাঁরাই সব জানেন। তাঁরাই সব করতে পারে। জনগণকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে এবং জনগণের কথা শোনার ব্যাপারে-তাঁদের তেমন কোনও আগ্রহ দেখা যায় না (বিশেষ করে নীতিনির্ধারক ও আমলাদের মধ্যে)। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমরা স্থায়ী টেকসই উন্নয়নের দিকে যেতে পারব না। সুতরাং আগামী দিনের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য এবং দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার জন্য নতুন সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
লেখক: মুহাম্মদ মুসা খান , কলাম লেখক ও সমাজকর্মী।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ