হালদা প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মিজানুর রহমানকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহা. মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ফলে প্রকল্পটি এখন মাঠে গড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘হালদা নদী প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে ঘিরে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্পের অধীনে নদীর দুই তীরে পুরাতন হ্যাচারিগুলো সংস্কার করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, নতুন করে আরো হ্যাচারি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হালদা পাড়ে রাউজান ও হাটহাজারী এলাকার পুরাতন ৬ হ্যাচারিকে সংস্কার করে সুযোগ-সুবিধা দ্বিগুণ বৃদ্ধি, নতুন করে আরো ৬টি হ্যাচারি কমপ্লেক্স নির্মাণ, ৪টি সার্ভেল্যান্স চেকপোস্ট কাম ওয়াচ টাওয়ার ও ঘাট নির্মাণসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দুই বছর আগে একটি প্রকল্প তৈরি করেছিল মৎস্য অধিদপ্তর। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তাতে বিভিন্ন কাজ কাঁটছাট করে প্রকল্পের ব্যয় এক-তৃতীয়াংশেরও কমে নিয়ে আসে বলে জানা গেছে। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘হালদা প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মিজানুর রহমানকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ও রেণু উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধাও। এছাড়াও দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান, স্টাডি ও গবেষণা, হালদা নদীতে অবৈধ মৎস্য শিকার, দূষণ সৃষ্টি প্রতিরোধ এবং মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন, স্টেকহোল্ডার উদ্বুদ্ধকরণ সভাসহ বিভিন্ন কর্মকা- বাস্তবায়নে সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এর আগে প্রায় ১৪ কোটি টাকার ‘হালদা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রকল্পে নদীর ড্রেজিংখাতে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি টাকা। ওইসময়ে হালদা পাড়ের মানুষের প্রতিবাদের কারণে ড্রেজিংখাতের ৭ কোটি টাকা প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের অবশিষ্ট ৭ কোটি টাকা দিয়ে নদীর পাড়ে ৬টি হ্যাচারি নির্মাণ করে মৎস্য অধিদপ্তর। রাউজানের কাগতিয়া, গহিরার মোবারকখীল ও পশ্চিম গহিরা এবং হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়–য়াপাড়ায় এসব হ্যাচারি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণগত ত্রুটি, সময় মতো সংস্কার, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হ্যাচারিগুলো থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম সংগ্রহকারীরা। এর মধ্যে সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কাগতিয়া হ্যাচারি। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পশ্চিম গহিরা হ্যাচারিও। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ডিম সংগ্রহকারীদের। বর্তমানে রাউজানের গহিরার মোবারকখীল, হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়–য়াপাড়ার হ্যাচারি চালু থাকলেও নিয়মিত সংস্কারের অভাব এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় সবগুলো হ্যাচারি থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম আহরণকারীরা। তাতে বিভিন্ন সময়ে মারা যাচ্ছে রেণু। তাই আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপকৃত হবে ডিম সংগ্রহকারীরা।
পূর্বকোণ/আরডি