চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্ত্রীর নামে ভুয়া মৎস্য খামার কাউন্সিলরের

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৩ অক্টোবর, ২০২৩ | ৪:০৩ অপরাহ্ণ

আয়েশা ছিদ্দিকা। ২০০৭ সালে মৎস্য খামারে নাম লেখান নগরীর ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ বাচ্চুর সহধর্মিণী। শহরে বসবাস করা এ নারী পটিয়া উপজেলায় গড়ে তোলেন ‘জমজম হ্যাচারি’ নামে  মৎস্য প্রকল্প। চাষাবাদ শুরুর বছর না পেরুতেই ‘জাদুর কাঠি’ হাতে আসতে শুরু করে কাউন্সিলের স্ত্রীর। মাত্র তিন করবর্ষেই এই মৎস্য প্রকল্প থেকে আয় করেন কোটি টাকা! তা দিয়েই শহরে ক্রয় করেন কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ও দোকান।

চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে- কাউন্সিলরের স্ত্রী আয়েশা ছিদ্দিকার নামে কোন মৎস্য খামারেই নেই। বরং তার কাউন্সিলর স্বামী সলিম উল্লাহ বাচ্চুর ‘অবৈধভাবে উপার্জিত’ আয় করা অর্থ জায়েজ করতেই মৎস্য প্রকল্পের ফন্দি করেন এ দম্পত্তি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি স্বামী-স্ত্রী কারই। দুদকের মামলার জালে ফাঁসতে হল কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ বাচ্চু (৬৪) ও তার স্ত্রী আয়েশা ছিদ্দিকাকে (৫২)। গতকাল (রবিবার) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ কাউন্সিলর দম্পত্তির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

জানা যায়, ২০১৯ সালে কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ বাচ্চু ও তার স্ত্রী আয়েশা ছিদ্দিকার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হয়। তাতে আয়েশা ছিদ্দিকা তাঁর নিজ নামে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি বাণিজ্যিক ও একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করার তথ্য উল্লেখ করেন। কিন্তু তিনি কোন অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেননি।

দুদকের অনুসন্ধানে- তার নামে ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৪ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ লাখ ৩৪ হাজার ২০১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনসহ সর্বমোট ১ কোটি ৮০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদের তথ্য পায়। এরমধ্যে আয়েশা ছিদ্দিকার নামে ৯৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার ঋণ পাওয়া যায়। যা বাদ দিলে তাঁর নামে  ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। এছাড়া ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়-সহ সর্বমোট অর্জিত সম্পদ পাওয়া যায় ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫ টাকা। বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য  আয় পাওয়া যায় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ বাকি ৯৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ আয়ের চেয়ে বেশি পাওয়া যায়।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, এসব সম্পদ অর্জনের আয়ের উৎস হিসেবে আয়েশা ছিদ্দিকা নিজেকে মৎস্য ব্যবসা, দোকান ভাড়ার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু  তার নামে কোন ট্রেড লাইসেন্স, দোকান ভাড়ার চুক্তিনামা, ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচার কিংবা কোন ধরনের রেকর্ডপত্র দাখিল করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, সরেজমিনে পরিদর্শনকালে আয়েশা ছিদ্দিকার নামে ব্যবসায়ের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি।

দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে, ২০০৭ সালের ৫ জানুয়ারি আয়েশা ছিদ্দিকা মৎস্য চাষের জন্য আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাট নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তিপত্র করেছেন বলে দুদকের কাছে দাবি করেন। এ জন্য ৭৫ টাকা মূল্যমানের চ-৫৩৮৮৯৫৭ ও চ-৬৩০৩৬২৯ দুটি স্ট্যাম্প দাখিল করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়- চ-৫৩৮৮৯৫৭ নম্বর স্ট্যাম্পটি ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট তথা চুক্তির ৭ মাস পর এবং চ-৬৩০৩৬২৯ নম্বর স্ট্যাম্পটি ২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তথা তিন বছর পর ট্রেজারি হতে সরবরাহ করা হয়। অর্থাৎ আয়েশা ছিদ্দিকা ও সম্রাটের মধ্যে চুক্তিটিও ছিল ভুয়া।

দুদক জানায়, কাউন্সিলরের স্ত্রী আয়েশা ছিদ্দিকা ‘জমজম হ্যাচারি’ নামে যে মৎস্য খামারটি দেখিয়েছিলেন। তা সম্রাট তার স্ত্রী সালমা সাঈদ চৌধুরীর নামে ২০১২ সালে পটিয়ার এ কে এম ফেরদৌস হোসাঈন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রয় করেন। অথচ আয়েশা ছিদ্দিকা নিজ আয়কর নথিতে ২০০৮-৯ করবর্ষ থেকে ২০১০-১১ করবর্ষে মৎস্য আয় বাবদ ৯৯ লাখ ৮ লাখ ৪০০ টাকার আয় দেখান। যা ছিল অবৈধ অর্থ।

দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, পরস্পর যোগসাজশে স্বামীর অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ বৈধ করতে আয়কর নথিতে এবং দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। মামলা তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আইন অনুযায়ী আমলে নেওয়া হবে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট